
ছবি: সংগৃহীত
আজ ৩০ জুন, দিনটি ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। যা সাঁওতাল হুল দিবস বা সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস নামে পরিচিত। ১৮৫৫ সালে সিধু মুরমু, কানু মুরমু, দুই ভাই চান্দ ও ভাইরো তাদের গ্রাম ভগনাডিহতে সাঁওতাল জনগণকে একত্রিত করে ব্রিটিশ শোষণ ও দাদন ব্যবসায়ীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুক্তির লক্ষ্যে বিশাল সমাবেশের ডাক দেন।
মহাজন ও দাদনের ঋণ জঞ্জালে নিপীড়িত হয়ে পরিবার-সম্পত্তি হারাচ্ছিলো সাঁওতালরা। ব্রিটিশ পুলিশ-দারোগাদের সহযোগিতায় তাদের জমি-গবাদিপশু কেড়ে নেয়া হতো। কেউ প্রতিবাদ করেলে তাকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হতো।
সিধু-কানু নেতৃত্বে ৩০ হাজারেরও বেশি সাঁওতাল ১৮৫৫ সালেল এ দিনে কলকাতা অভিমুখে গণযাত্রা শুরু করেন। যা উপমহাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসে প্রথম গণযাত্রা হিসেবে বিবেচিত। এতে বাধা দিতে মহাজন কেনারাম ভগত ও দারোগা মহেশাল দত্ত কয়েক সাঁওতাল নেতাকে গ্রেফতার করেন। উত্তেজিত সাঁওতাল বিপ্লবীরা ৭ জুলাই পাঁচকাঠিয়া স্থানে ১৯ জন শোষককে হত্যা করে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দেন।
এ বিদ্রোহ আট মাস ধরে চলে। ইংরেজ বাহিনী বিপ্লবীদের মোকাবিলায় হেরে যাওয়া, ন্যায্যমূল্যে বাজার ধ্বংস এবং আত্মসমর্পণের ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান ইত্যাদি ঘটনাগুলো ঘটেছিল এ সময়ে। ব্রিটিশরা সামরিক আইন জারি করলেও শেষ পর্যন্ত ১৮৫৬ সালের জানুয়ারিতে তা প্রত্যাহার করে।
সিধু-কানুদের সঙ্গে সাঁওতাল নারীরা, বিশেষ করে দুই বোন ফুলো মুরমু ও ঝানো মুরমু বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফুলো মুরমুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাকে প্রথম বীরাঙ্গনা হিসেবে সাঁওতাল জাতি আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। এছাড়া ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিধু নিহত হন এবং কানুকে ফাঁসি দেয়া হয়। যদিও সাঁওতাল বিদ্রোহ পরাজিত হয়। তবে তারা শোষকদের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি।
সাঁওতাল হুলের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় তেভাগা আন্দোলন এবং ভারতের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসে সাঁওতালদের অবদান অম্লান। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সাঁওতাল জাতি এখনো নিপীড়িত। তাদের সাংবিধানিক অধিকার, মাতৃভাষার স্বীকৃতি ও জমির অধিকার নিয়ে আজও লড়াই চলছে।
জাতীয় সংসদে সাঁওতাল জাতিসত্তাকে একমাত্র আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে তা সম্পূর্ণ মেলেনি। শিক্ষা নীতি অনুযায়ী মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা শুরু হলেও বর্ণমালা নির্ধারণে জটিলতা রয়েছে। জমি বেদখল হলে তা পুনরুদ্ধারে বিপদ ঝুঁকি নিতে হয়। অনেক সময় সাঁওতালদের কষ্ট ও দাবি অদৃশ্য হয়ে যায়।
তবুও ৩০ জুন সাঁওতাল হুলের ১৫৮তম বছরে সাঁওতাল জাতি ও স্বাধীনতাকামী মানুষেরা বীর সিধু-কানুদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা করে থাকে।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।