Apan Desh | আপন দেশ

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২৮ জুন ২০২৫

আপডেট: ১০:০৫, ২৮ জুন ২০২৫

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মদিন আজ

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস

আজ ২৮ জুন, শনিবার একটি বিশেষ দিন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মদিন। ১৯৪০ সালের এ দিনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। খ্যাতিমান এ অর্থনীতিবিদ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি ‘নোবেল’ পুরস্কার লাভ করেন। 

দেড় দশক ধরে তাঁর জন্মদিনকে বৈশ্বিকভাবে পালন করা হয় সামাজিক ব্যবসা দিবস হিসেবে। শুক্রবার (২৭ জুন) ঢাকার সাভারের জিরাবো সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে দু’দিনের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’র উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. ইউনূস। তবে অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার জন্মদিনের উদযাপন সংক্রান্ত কোনো আয়োজন ছিল না।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ড. ইউনূসের জন্মদিন উপলক্ষে সরকারি কোনো কর্মসূচি নেই। সরকারি পর্যায়ে জন্মদিন পালন করা হবে না।

অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী। দারিদ্র্য দূরীকরণে জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋণের ব্যাংকিং তাঁকে দুনিয়াজুড়ে খ্যাতি দিয়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকও নোবেল জয়ী।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানো হয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সরকারপ্রধানের তির্যক সমালোচনা এবং মামলায় জর্জরিত ছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। তাকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ঢাকার শ্রম আদালত। 
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের অনুরোধে ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ইউনূস। ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা, বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজ করছে তার সরকার। সংবিধান, নির্বাচন, জনপ্রশাসনসহ নানা খাতে সংস্কারের চেষ্টা করছে।

অতীতে সরকারপ্রধানদের জন্মদিন ঘটা করে উদযাপন হতো। রাজনৈতিকভাবেও পালিত হতো। সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছা উদযাপনের ঢল ছিল। বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীরা প্রধানমন্ত্রীর বন্দনা লিখতেন। রাজনীতিক, ব্যবসায়ীরা ছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারপ্রধানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করত। দায়িত্ব নেয়ার পর ড. ইউনূসের ছবি ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রকাশে নিষেধ করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। তার ব্যক্তিগত জীবনও লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছে।

ড. ইউনূসের বাবা দুলা মিঞা সওদাগর একজন মুহরি ও মাতার নাম সুফিয়া খাতুন। সহধর্মিণী অধ্যাপক দিনা আফরোজ। ইউনূসের দুই মেয়ে। তিনি পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯ হাজার ছাত্রের মধ্যে ১৬তম স্থান লাভ করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করার পর ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি অধ্যাপক হন। 

১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য  ফুলব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন। ১৯৭১ সালে ভান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে পরে আমেরিকার মার্সিসবোরোতে মিডিল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আমেরিকাতে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করেন এবং অন্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন সংগ্রহ করতে ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’ পরিচালনা করেন। 

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের সময় ড. ইউনূস দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। সে সময় তিনি গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেন। ১৯৭৬ সালে পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পটি চালু করেন। ১৯৮৩ সালে এ প্রকল্পটি ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে এর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। বাংলাদেশের বাইরেও আমেরিকাসহ গ্রামীণ ব্যাংক পদ্ধতি বিশ্বের ৪০টি দেশে অনুসারী করা হচ্ছে। ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ দেশি ও বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এর মধ্যে সে সাতজন ব্যক্তির একজন ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘তিন শূন্য তত্ত্ব’ দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং কার্বন নিঃসরণ- এ তিনটি প্রধান সমস্যা সমাধানে একটি ধারণা। এ তত্ত্বে তিনটি বিষয়কে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা একটি টেকসই এবং উন্নত বিশ্ব গঠনে সহায়ক হবে। তার ই তত্ত্ব বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়