
ফাইল ছবি
বিশ্বজুড়ে আজ উদযাপিত হচ্ছে মহান মে দিবস। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে পালন করা হয় এ দিবসটিকে। মূলত সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মেহনতি জনণের ঐক্য, সংহতি, সংগ্রাম ও বিজয়ের মধ্যে দিয়ে রচিত হয় মহান মে দিবস। মুনাফালোভী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অমানবিক নিপীড়নের শিকার শ্রমজীবী মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগ, শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য ও জুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিকের ঐতিহাসিক বিজয় এই মে দিবস, যা যুগের পর যুগ সারা বিশ্বের শ্রমজীবী জনগণকে আন্দোলন-সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়ে চলেছে।
বর্তমানে জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে শহর ও গ্রামের শ্রমজীবি মানুষ। অব্যাহত শোষণ-বঞ্চনার শিকার তারা। ধনী-গরীবে বৈষম্য এখানে পর্বত প্রমান এবং ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে। দারিদ্র-বেকারত্ব ক্রমেই বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে সাংবিধানিক অধিকার ও শ্রম আইন পাতায় লেখা থাকলেও তা প্রয়োগ অনেক দুরবর্তী হয়ে যায়। আইএলও সনদে আমরা স্বাক্ষরকারী, কিন্তু তা বাস্তবায়নে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। লোভ-লালসা-ক্ষমতার দাপট চারদিকে পরিব্যপ্ত। ধর্মে-ধর্মে, গোত্রে-বর্ণে হিংসা-দ্বেষ ক্রমেই গভীর হচ্ছে। বড় ছোটকে, ক্ষমতাবান দুর্বলকে ক্রমেই কোণঠাসা করছে। বাঁধা না পেলে শোষণ-বঞ্চণা হয়ে উঠছে বেপরোয়া। এ পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে মে দিবস পালনের গুরুত্ব
বর্তমানে আরো বেড়ে গেছে।
এ বছর রানা প্লাজা ট্রাজেডির এক যুগ পূর্তি হল। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে পরিচিত যে ঘটনা শুধু দেশেই নয় গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল, যে ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল ১১৩৬ জন শ্রমিকের জীবন, মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছিল দুই হাজার চারশ’ পোশাক শ্রমিক। রানা প্লাজার এই বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে দেশের শিল্পক্ষেত্রে অনেক বড় পরিবর্তন সাধিত হয়। তবে ইতিবাচক পরিবর্তনের পরও থেমে নেই শিল্পক্ষেত্রে এধরণের দুর্ঘটনা, এখনও প্রাণ দিতে হচ্ছে শ্রমিকদেরকে।
কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, জীবনমান উন্নয়ন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গৃহিত পদক্ষেপ, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ সহ মৌলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও কোন পরিবর্তন আসেনি। এখনও শ্রমিকদেরকে জোর পূর্বক অতিরিক্ত সময় কাজে বাধ্য করা হয়, মালিকপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের অবহলো উদাসীনতা,
ক্ষতিগ্রস্তদের অক্ষমতা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রীতার মত নেতিবাচক বিষয়গুলো এখনও লক্ষ্যনীয়।
তবে আমরা আশাবাদী, অন্ধকার ফুঁড়ে আলোর রেখা বেরিয়ে আসবেই, মে দিবসের অম্লান ইতিহাস ও শিক্ষা অনাগত ভবিষ্যতে বিশ্ব তথা এদশের মেহনতি জনগণকে ন্যায্য দাবী আদায়ের সকল প্রয়াসে উদ্দীপনা যুগিয়ে যাবে। শ্রমজীবী জনগণের সংগঠিত হওয়ার অধিকার, কাজের অধিকার, ন্যায্য মজুরি ও বৈষম্যহীন সুযোগ সুবিধার অধিকার এবং সর্বোপরি শিল্প-প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও প্রাসঙ্গিক সকল নীতি নির্ধারণে সক্রিয় অংশগ্রহণের অধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রাম পরিচালনার পাশাপাশি অর্জিত অধিকারসমূহকে ভোগ করার এবং কাজে লাগানোর সামর্থ্য আমাদের অর্জন করতে হবে। শুধু একদিনের জন্য নয়, ৩৬৫ দিনই শ্রমিকদেরকে মে দিবসের শিক্ষা ও চেতনায় উজ্জীবিত করে শ্রমিক আন্দোলনকে অব্যহত রাখতে বিল্স সহযোগিতা করে যাবে মহান মে দিবসে এটাই বিল্সের অঙ্গীকার। সবাইকে জানাই মহান মে দিবসের সংগ্রামী শুভেচ্ছা।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।