Apan Desh | আপন দেশ

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: শোক-জবাবদিহিতার দাবিতে সোচ্চার নিটার অ্যালামনাই

নিটার প্রতিনিধি, লাবিবা সালওয়া ইসলাম

প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ২৯ জুলাই ২০২৫

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: শোক-জবাবদিহিতার দাবিতে সোচ্চার নিটার অ্যালামনাই

ছবি: আপন দেশ

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক দুর্ঘটনা গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ঘটনাস্থলে নিহত হন মাইলস্টোনের কয়েকজন শিক্ষার্থী। আহত হন আরও অনেকে।

এ ঘটনা শুধু শোকই নয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জবাবদিহিতা ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। প্রতিবাদের কণ্ঠে শামিল হয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ (নিটার)–এর সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন নিটার অ্যালামনাই।

নিটারের অ্যালামনাই সম্প্রদায় বিমানবাহিনীর অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি দ্রুত, স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্তের দাবি জানিয়েছে। 

বিমানবাহিনীর নিরাপত্তা ও জনকল্যাণে অঙ্গীকারের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিটারের ৭ম ব্যাচের নাজমুল হক আহাদ। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার মাত্র তিন দিন আগে বিমানবাহিনীর বাউন্ডারি দেয়াল ধসে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। কিন্তু সে খবর কোনো সংবাদমাধ্যমে আসেনি। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বিশাল ক্যান্টনমেন্ট থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা যেন কেউ ভাবেন না।

৮ম ব্যাচের আবিদ রেজা সিমন বলেন, মাইলস্টোন কলেজের নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদের মর্মান্তিক মৃত্যু আমাকে গভীরভাবে শোকাহত করেছে। আমি সবসময় চেষ্টা করি আশপাশের মানুষদের পাশে থাকার জন্য, এবারও কিছু করতে পেরে নিজের মনকে সামান্য শান্ত করতে পেরেছি। স্বপ্নে ভরা যে মুখগুলো ভবিষ্যৎ গড়ার পথে ছিল, তাদের এমন নির্মম বিদায় কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক, দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত হোক—এটাই আমার একান্ত চাওয়া। যেন আর কোনো মা-বাবাকে সন্তানের নিথর দেহ বুকে জড়িয়ে কান্না করতে না হয়। এ শোক যেন আমাদের আরও দায়িত্বশীল করে তোলে-সবকিছুর আগে নিরাপত্তা, সবকিছুর আগে জীবন।

আরও পড়ুন>>>ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর

একই ব্যাচের সোলায়মান হাওলাদার এ ট্র্যাজেডিকে রানা প্লাজার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর শিল্প নিরাপত্তায় বড় পরিবর্তন এসেছিল। মাইলস্টোনের পরেও হয়তো প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় সংস্কার আসবে। কিন্তু এসব ব্যবস্থা দুর্ঘটনার আগেই নেয়া উচিত ছিল। অনিয়ন্ত্রিত অবকাঠামো, নিষ্কাশন ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দুর্বলতা যেকোনো সময় প্রাণঘাতী হতে পারে-এখানে রাষ্ট্র ও নাগরিক উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে।

ঘটনাটিকে “বিবেকের মৃত্যু” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন নিটারের ৯ম ব্যাচের শান্ত মালো। তিনি বলেন, প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। ফেসবুকে ছবি দেখে মনে হচ্ছিল রানা প্লাজার বিভীষিকা ফিরে এসেছে। জনবহুল এলাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ প্রশিক্ষণ বিমান উড়ানো কতটা যৌক্তিক? আর সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার-মানুষ রক্তে ভাসছিল, কেউ এগিয়ে যায়নি। সবাই ক্যামেরা জুম করে কনটেন্ট বানাতে ব্যস্ত ছিল। আমরা মানুষ হয়েছি, কিন্তু মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছি।

১০ম ব্যাচের নিশাত শ্যামা সুপ্তি বলেন, সকালটা ছিল একেবারে স্বাভাবিক—কেউ ক্লাসে যাচ্ছিল, কেউ হয়তো জেট বিমানে চড়ার উত্তেজনায় ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ছিন্নভিন্ন স্বপ্ন, নিথর মুখ আর কান্নার শব্দে সকালটা মৃত্যুর দৃশ্যপটে রূপ নেয়। এ ঘটনা কেবল সংবাদ নয়, এটি এক গভীর প্রশ্ন: এমন হলো কেন? কার গাফিলতি? নিরাপত্তায় কী ছিল সেই ফাঁক?

তিনি আরও বলেন, শ্রদ্ধা জানানোই যথেষ্ট নয়। আমরা চাই স্বচ্ছ তদন্ত, দায় স্বীকার ও ভবিষ্যতের জন্য কঠোর নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি। যাতে কোনো শিক্ষা সফর মৃত্যু সফরে পরিণত না হয়।

নিটার অ্যালামনাইরা নিহতদের আত্মার শান্তি ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে বলেছেন, এ ট্র্যাজেডি শোকের পাশাপাশি জাগরণের। আমাদের দায়িত্ব মনুষ্যত্ব ফিরিয়ে আনা, যেন কোনো স্বপ্ন ধ্বংসস্তূপে পরিণত না হয়।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়