Apan Desh | আপন দেশ

চুল পড়ার সঙ্গে কি হার্টের অসুখের যোগসূত্র আছে? 

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

চুল পড়ার সঙ্গে কি হার্টের অসুখের যোগসূত্র আছে? 

প্রতীকী ছবি

টাক পড়া বা অ্যালোপেসিয়া বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি সমস্যা। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, এটি মূলত জেনেটিক কারণ এবং হরমোনজনিত পরিবর্তনের ফল, বিশেষ করে ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে।

প্রথম দেখায় চুল পড়ার সঙ্গে হৃদযন্ত্রের সমস্যার কোনো সরাসরি সম্পর্ক আছে বলে মনে না হলেও, সাম্প্রতিক কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা এ দুইয়ের মধ্যে একটি সম্ভাব্য যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

টাক পড়ার ধরন এবং হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে ঠিক কী সম্পর্ক রয়েছে—এ নিয়ে বিজ্ঞান কী বলছে?

গবেষকদের মতে, টাক পড়া সরাসরি হৃদরোগ সৃষ্টি করে না। তবে এ দুটি সমস্যার পেছনে একই ধরনের জৈবিক প্রক্রিয়া বা ‘কমন রুট’ কাজ করতে পারে।

ক. টেস্টোস্টেরন হরমোন
পুরুষদের ক্ষেত্রে টাক পড়ার প্রধান কারণ হলো ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন নামের শক্তিশালী অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের প্রতি চুলের ফলিকলের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা। এই হরমোনজনিত সংবেদনশীলতার প্রভাব শুধু চুলের ফলিকলেই সীমাবদ্ধ নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, DHT বা অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা রক্তনালী ও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেন হরমোন রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি করতে পারে—যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

খ. দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ
অনেক ক্ষেত্রে টাক পড়ার পেছনে চুলের ফলিকলের চারপাশে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ভূমিকা রাখে। একই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। অর্থাৎ শরীরের একই প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।

গ. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের পুরুষ প্যাটার্ন টাক বেশি, তাদের মধ্যে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং মেটাবলিক সিনড্রোমের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এ দুটি অবস্থাই হৃদরোগের অন্যতম প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুন<<>>শিশুর খাবারে অরুচি হলে কী করবেন?

কোন ধরনের টাক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
সব ধরনের টাক পড়ার সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকির সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, টাক পড়ার ধরন এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মাথার তালুতে টাক : যাদের মাথার সামনের দিকের টাকের তুলনায় মাথার ঠিক মাঝখানে বা তালুতে টাক পড়ার প্রবণতা বেশি, তাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে।

কম বয়সে টাক পড়া : ৩৫ বছরের কম বয়সে যদি টাক পড়া শুরু হয়, তবে ভবিষ্যতে হৃদরোগের আশঙ্কা আরও বেশি হতে পারে বলে গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

টাক পড়া কি সতর্কতা সংকেত?
বিজ্ঞানীদের মতে, টাক পড়া হৃদরোগের সরাসরি কারণ নয়। বরং এটি শরীরের ভেতরে চলমান একটি জৈবিক ভারসাম্যহীনতার বাহ্যিক লক্ষণ হতে পারে, যা একই সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। সে কারণে মধ্যবয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে দ্রুত টাক পড়া বা মাথার তালুতে টাক পড়াকে শুধু সৌন্দর্যজনিত সমস্যা হিসেবে দেখলে চলবে না। এটি হৃদরোগের ঝুঁকির একটি সম্ভাব্য সতর্কতা সংকেত হিসেবেও বিবেচনা করা উচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চুলের যত্নের পাশাপাশি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত কার্ডিওভাসকুলার চেক-আপ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

আপন দেশ/জেডআই

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়