Apan Desh | আপন দেশ

সাজিদ হত্যার বিচার চেয়ে ফের অবস্থান কর্মসূচি ইবি ছাত্রদলের

ইবি প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৮:১৯, ১১ অক্টোবর ২০২৫

সাজিদ হত্যার বিচার চেয়ে ফের অবস্থান কর্মসূচি ইবি ছাত্রদলের

ছবি: আপন দেশ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রদল ফের অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যার বিচার চেয়ে তারা এ কর্মসূচি পালন করে। সাজিদের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা।

শনিবার (১১ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের নীচে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচিতে সাজিদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবির পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে আওয়ামী দোসরদের বাতিল করা, পরিবহন সমস্যা, ব্যাংকিং সিস্টেমসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পারভেজ, যুগ্ম আহবায়ক আবু দাউদ, আনারুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন, সদস্য সাব্বির হোসেন, আবু সাইদ রনি, রাফিজ আহমেদ, নুর উদ্দিনসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। কর্মসূচীতে সংহতি জানায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনেরা ইবি শাখার নেতাকর্মীরা।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, কিছুদিন পরপর এই সাজিদ হত্যার আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়, তারপর আবার নেই। এভাবেই কি সাজিদ হত্যার ইস্যু হারিয়ে যাবে? আমরা আর কতদিন প্রশাসনের কাছে ধর্না দেব। সাজিদ কি শুধু আমাদের ভাই? সে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকদের সন্তান না? শিক্ষকদের কোন সন্তান মারা গেলে তারা কি করতেন?

তিনি বলেন, নিজের সন্তানের জন্য যদি তারা পদক্ষেপে যেতে পারতেন, তাহলে সাজিদের জন্য কেন পারছেন না। আমরা ক্লাস-পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু সাজিদ হত্যার বিচার হচ্ছে না। আমরা আমাদের কথা কার কাছে, কাদের কাছে বলব? যাদের কাছে বলব তারা আমাদের মানুষই মনে করে না। যদি মনে করতেন, তাহলে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ছাত্রলীগ রাখত না। এত শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এ প্রশাসন এখনো আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করলে আমরা বুঝব, হয়তো আপনারা হীনস্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন>>>৭২ ব্যাচের নবীনবরণ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে পরিচ্ছন্নতা অভিযান

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে না পরলে বসে আছেন কেন। এ প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পরে একের পর এক শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে গেছেন। আপনাদের আশ্বাস আর ভালো লাগছে না, শিক্ষার্থীরা আপনাদের কাজ দেখতে চায়। আমরা ভেবেছিলাম অভ্যুত্থানের পরে আমরা সংস্কার পাব। কিন্তু আপনারা অতীতের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন।

ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, যদি এভাবে অতীতের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে থাকেন, তাহলে আপনাদের পরিণতিও তাদের মতোই হবে। আমরা বলেছিলাম, শিক্ষক নিয়োগে মেধার ভিত্তিতে দেন। কিন্তু ১৭ বছরের মতো ফ্যাসিস্ট যেন জেকে না বসে। তারা এখনো বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন রূপে আসছে। আপনারা তাদের ফ্যাসিস্ট হিসেবে গণ্য করুন, মেধাবী হিসেবে নয়। অতিদ্রুত সাজিদের খুনিদের গ্রেফতার করুন। আপনারা বলছেন, সিআইডি দেখছে। তাহলে আপনারাও আমাদের কাতারে আসুন। সাজিদ হত্যার বিচার করেই আমরা ঘরে ফিরব।

ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন বলেন, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করলে তো চলবে না। আওয়ামী দোসরদের সব জায়গায় থেকে বিতাড়িত কর‍তে হবে। প্রমোশন বোর্ড করে ফ্যাসিস্টদের প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন জাগে যে, এ ভিসির কাজ ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করা কিনা। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দিচ্ছি। কিন্তু প্রশাসন স্মারকলিপি গ্রহণ করেই যাচ্ছে। কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না। আমরা সাজিদ হত্যার বিচার চাই। যেকোন মূল্যে খুনিদের গ্রেফতার করতে হবে। অপরাধী কোন দলের না, তার একমাত্র পরিচয় সে অপরাধী।

শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, একটি চক্র আমাদের ভাই সাজিদকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দিয়েছে। আমরা বারবার বিচার চেয়েছি, প্রশাসন বার বার আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের মতো অথর্ব প্রশাসন, নির্লজ্জ প্রশাসন, বেহায়া প্রশাসন আমি আগে কখনো দেখিনি। আপনারা শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে প্রশাসনগিরি করছেন।

তিনি বলেন, আপনারা এমন ভাব দেখান, যেন আপনারা কিছু বোঝেন না। আপনার পরে রয়েছে আওয়ামী লীগ আর ছাত্রলীগের পুনর্বাসন নিয়ে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ হায়ার বোর্ডে কারা রয়েছে, আপনারা সেটা এখনো বলেন, আমাদের সাংবাদিকরাও জানেন না। আপনাদের যা ইচ্ছা তাই গোপনে গোপনে করছেন। শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ২৬ জন চিহ্নিত ফ্যাসিস্ট রয়েছে। আপনারা কেন তাদের সুযোগ দেবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ইসরায়েলের নেতানিয়াহুর সঙ্গে তুলনা করে সাহেদ আহম্মেদ বলেন, শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের পাঁয়তারা চলছে, তা আমরা কখনও হতে দেব না। আপনারা তিন খলিফা, আপনার হয়তো জানেন না, আপনারা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর সক্ষমতা আমাদের আছে। বিশ্ববিদ্যালয় যখন ৪৬ দিন ভিসি ছিল না, ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছিল না, তখনও এ প্রশাসন চলেছে।

তিনি আরও বলেন, গত ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে বোর্ডে ছাত্রলীগ আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। তাদের পুনর্বাসন করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও গতকাল ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে বোর্ডে যে চেয়ারম্যান একটি ফ্যাসিস্ট অভিযোগে জড়িত, তাকে সেখানে সদস্য করা হয়েছে। আপনি ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে প্রেম প্রেম খেলবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও ছাত্রদল তা কখনো মেনে নেবে না।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়