
ছবি: আপন দেশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) র্যাগিং বন্ধ করতে প্রক্টর অফিস নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। এ নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো শিক্ষার্থী প্রক্টর অফিসের অনুমতি ছাড়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডাকতে পারবে না। যদি কেউ এ নিয়ম ভাঙে, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে ইবলিশ মাঠ, শহীদ মিনার চত্বর, আম বাগান, সিরাজির সামনে বসা শিক্ষার্থীদের তুলে দেন সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহা. বেলাল হোসেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, প্রক্টর অফিসের অনুমতি ছাড়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডাকা যাবে না। ডাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছেন। শিক্ষার্থীদের মতে, এটি অযৌক্তিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশের পরিপন্থি ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন তোলেন, সিনিয়র-জুনিয়র একসঙ্গে বসবে, তার জন্য প্রক্টর অফিসের অনুমতি নিতে হবে? অনুমতি নিতে গেলে কী কারণ দেখিয়ে নিতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র-জুনিয়ররা একসঙ্গে বসে আড্ডা দেবে, পরিচিত হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এতে খারাপ কী আছে? যদি র্যাগিং বন্ধ করাই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তা গোপনে হয়। প্রকাশ্যে বসার জন্য অনুমতি নেয়ার কোনো যুক্তি দেখি না।
আরও পড়ুন>>>রাকসু নির্বাচনে গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস সেক্রেটারি পদে লড়বেন বিজয়
তিনি আরও বলেন, প্রকাশ্যে কেউ র্যাগিং করার সাহস পাবে বলে মনে হয় না। আমি মোটেও র্যাগিং সমর্থন করি না। র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি থাকা উচিত। যদি কোনো শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের অভিযোগ করে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিনোদপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিনোদপুর কিন্ডারগার্টেনে পদোন্নতি পেলো ক্যাম্পাস। কয়েকদিন পর শুনবো ক্যাম্পাসে বন্ধুরা একসঙ্গে বসে আড্ডা দিতেও প্রক্টর অফিসের অনুমতি লাগবে। সিনিয়র-জুনিয়রের যে সম্পর্কটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্রতা তুলে ধরে, সেটা থাকুক না। না হলে পরে স্কুল-কলেজের মতো রোবট আসবে-যাবে। কেউ কাউকে চিনবে না, সম্মান করবে না। সংকটে-সংগ্রামে একসঙ্গে পাওয়া যাবে না। তবে কি এটাই চান? আসলে নিয়ম ভালো। তবে অতিনিয়ম ভালো না। একটু শিথিল হওয়া প্রয়োজন।
গত ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, র্যাগিং একটি সামাজিক অপরাধ। এর ফলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়া ছাড়াও র্যাগিং এর শিকার শিক্ষার্থীর মানসিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। এ কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোথাও কোন প্রকার র্যাগিং না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। কেউ র্যাগিং করলে বা কাউকে র্যাগিং করতে প্ররোচিত করলে প্রমাণ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, বিভাগের সভাপতির অনুমতি ছাড়া বিভাগের অন্য কোন বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচিতি বা মতবিনিময় অনুষ্ঠান করা যাবে না।
এ বিষয়ে রাবির সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। আমাদের কাছে প্রায়ই রিপোর্ট আসে, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরিচয়ের নামে র্যাগিং করে থাকে। শুরুতে তারা ভালোভাবে ডেকে নিলেও পরে সেখানে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর প্রেক্ষিতে আজকেও আমরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এমন সমাবেশ লক্ষ্য করেছি। এরপর তাদেরকে বসতে নিষেধ করলে তারা সেখান থেকে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, একটি স্থানে তাদের উঠিয়ে দেয়ার পরও তারা আবার বসতে শুরু করে। আমরা সেখানে গেলে আমাদেরই এক সহকর্মীর পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি—অন্তত বিভাগের সভাপতির অনুমতি ছাড়া তারা কোথাও বসতে পারবে না। র্যাগিংয়ের ঘটনায় যদি কেউ অভিযুক্ত হয়, তবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির কাছে পাঠানো হবে। কমিটিই যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আমীরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়গুলি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। ক্যাম্পাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।