ছবি : আপন দেশ
শিম, ফুল কপি, বাঁধা কপি, বেগুনসহ নানা জাতের শীতের আগাম সবজিতে ভরপুর কাঁচাবাজার। ফলে দীর্ঘ সময় পর এ নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। আগেই নতুন ধান কাটা শুরু হয়েছে। নতুন চালের আগমণে দাম কিছুটা নিম্নমুখী। তবে ক্রেতাদের অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে পেঁয়াজ। কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে অতি জরুরি এ পণ্যের দাম। এছাড়া মাছ, মুরগি, ডিম ও মাংসের দর আগের মতই রয়েছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (০৭ নভেম্বর) রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, আগাম মৌসুমে চাষ হওয়া শীতের সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এতে দাম কিছুটা কমেছে এবং ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়ছে।
এদিন রাজধানীর কমলাপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায় শিম, বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, পটোল, লাউ, বরবটি ও কাঁচা মরিচের দাম আগের তুলনায় অনেক কমেছে। এক মাস আগেও যেখানে প্রতি কেজি শিমের দাম ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা, সেখানে এখন তা ৬০ থেকে ৮০ টাকায় নেমে এসেছে।
প্রতি কেজি বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ৪০-৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, শসা ৫০ টাকায়, গাজর কেজি ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০-৫০ টাকা, টমেটো ১০০- ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ধন্দুল ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ফুল কপি (ছোট) প্রতি পিস ৪০- ৫০ টাকা এবং বাঁধা কপি (ছোট) প্রতি পিস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকা, কাঁচা কলা (প্রতি হালি) ৪০ টাকা, কঁচুর লতি মুঠো ৫০-৬০ টাকা।
বাজারে আসা ক্রেতা আকরাম হোসেন বলেন, অনেক দিন পর সাধারণ মানুষ ব্যাগ ভরে সবজি কিনতে পারছে। এখন বেশির ভাগ সবজি ক্রেতার নাগালের মধ্যে। তবে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সবজিতে বেঁচে যাওয়া টাকাটা আবার ওখানে চলে যাচ্ছে।
সবজির পাশাপাশি মুরগি ও ডিমের দামেও কিছুটা স্বস্তি এসেছে। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা এবং ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। সবমিলিয়ে সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি ফিরে পাচ্ছিলেন।
কিন্তু এ স্বস্তি ম্লান করে দিয়েছে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে যারা ৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছেন, তারা এখন কিনছেন ১২০ টাকা দরে।
সরবরাহ সংকটের অজুহাতে দেশের বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৪৭ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন<<>>কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের কিছুটা সংকট তৈরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমদানি শুরু হলে দাম নেমে যাবে। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই, পুরোনো সিন্ডিকেট আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। স্বস্তির বাজারকে নষ্ট করতে কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
তবে পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ বলেন, এখন পেঁয়াজের সংকট চলছে। কৃষকের হাতে আর পেঁয়াজ নেই। এতে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। ভারতে এখন পেঁয়াজ মাত্র ১৫ টাকা কেজি। তাই দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত আমদানির বিকল্প নেই।
এদিকে বাজারে নতুন চালের দাম কিছুটা নিম্নমুখী দেখা গেছে। কারণ আমনের ভরা মৌসুম শুরু হতে আর বাকি মাত্র ১০-১৫ দিন। এরইমধ্যে কোনো কোনো অঞ্চলে রোপা আমন ধান মাঠ থেকে উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি কিছু চাল আমদানিও করা হচ্ছে। ফলে চালের বাজারে স্বস্তির আভাস মিলছে। জিরা, পাইজাম, গুটি স্বর্ণাসহ কয়েক ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। দাম এর আগের সপ্তাহেও ১ টাকা করে কমেছিল। সে হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এ চালগুলোর দাম গত এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। তবে মোটা ধরনের ব্রি২৮ চালের দাম স্থির রয়েছে আগের মতোই কেজিপ্রতি ৫৮-৬০ টাকায়। অন্যদিকে পাইজাম, গুটি স্বর্ণা ও কিছু মোটা জাতের চালের দামও কমেছে কিছুটা। এসব চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকা কেজি। গত সপ্তাহ পর্যন্ত তা ছিল ৫২-৫৩ টাকা কেজি।
এছাড়া প্রায় সব ধরনের মাছের দাম আগের মতই রয়েছে। রুই, কাতল, পাঙাশ থেকে তেলাপিয়া—সব মাছই আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় রুই ৩৫০-৪২০ টাকা, মাঝারি রুই ৩০০-৩২০ টাকা, ছোট রুই ২৫০-২৮০ টাকা, কাতল ৩৮০-৪৫০ টাকা, শিং ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০-২৫০ টাকা, পাঙাশ ১৮০-২৩০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০-২২০ টাকা, সিলকার্প ২৫০-৩০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০ টাকা, আইড় ৬০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৩০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪৫০ টাকা, মলা মাছ ৩০০ টাকা, পাবদা আকারভেদে ৩০০-৬০০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১০০০-১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































