
ছবি: আপন দেশ
অনেক আগে থেকেই স্বল্প আয়ের নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের বাহিরে রুই-ইলিশ মাছ এবং গরু-খাসির মাংস। তাই সবজি আর ডিমই ছিল তাদের দৈনিন্দন খাবারের তালিকায় ভরসা। সে ভরসার জায়গায় এবার আঘাত হেনেছে উচ্চ মূল্য। শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ডিমসহ বেড়ে গেছে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লাগামহীন কাঁচা বাজার। ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অস্বস্তিতে পড়েছেন সীমিত আয়ের ক্রেতারা।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, শীতকাল শেষ হলেই সবজির দাম একটু একটু করে বাড়তে থাকে। তবে গত তিন সপ্তাহের মধ্যে এ দাম অনেক দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ হয়েছে, নতুন করে সবজি বাজারে ওঠার আগ পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে।
এদিন মুগদা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেগুনের দাম। বাজারে ১০০ টাকার নিচে কোনো বেগুন নেই, সর্বোচ্চ দাম ২০০ টাকা। তিন সপ্তাহ আগেও ৬০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে এক কেজি বেগুন কেনা যেত। অন্যান্য সবজির মধ্যে প্রতি কেজি করলা, বরবটি, কাঁকরোলের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা; আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৬০-১৮০ টাকা; আর পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙার কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দামে কেনা যায় চিচিঙা, ধুন্দুল, কচুমুখি প্রভৃতি সবজি। আর ৫০ টাকার নিচে রয়েছে শুধু মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, কাঁচকলাসহ হাতে গোনা কয়েকটি সবজির দাম। এ ছাড়া প্রতিপিস লাউ ৭০-৮০ টাকা ও চালকুমড়া ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম এখন ২০০-২৪০ টাকা।
সবজি বিক্রেতা আমির হোসেন বলেন, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এবার সবজির দাম কিছুটা বেশি। যেমন গত বছর এ সময়ে বেগুনের কেজি ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা, যা এখন ১০০ থেকে ২০০ টাকা। এ ছাড়া করলা, বরবটি, কাঁকরোলের দামও কেজিতে ২০ টাকার মতো বেশি রয়েছে।
সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শাকের দামও বেড়েছে। যেমন মানভেদে বর্তমানে একমুঠো লাউ শাকের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা; আর পুঁইশাক কেনা যায় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। দুই-তিন সপ্তাহ আগে উভয় প্রকার শাকের দাম ৫-১০ টাকা করে কম ছিল। অন্যান্য শাকের মধ্যে ডাঁটাশাক ৩০ টাকা, লালশাক ২০-৩০ টাকা এবং পাট, কলমি, কচু ও ঢেঁকিশাক ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া একটি কচুর ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
বাজার করতে আসা পোশাক কারখানার শ্রমিক নাদিম আহমেদ বলেন, মাংসের কথা তো আমরা ভুলেই গেছি। আমাদের ভরসাই ছিল সবজি আর ডিম। এখন সেগুলোও দামও বেড়েছে। কয় টাকা বেতন পাই। বাসা ভাড়া দিব না বাজার করে খাব। বাচ্চার দুধ কিনতে হয়। ডিম আর সবিজ কিনতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বাকি জিনিস কি দিয়ে কিনব? আমাদের কথা কেউ ভাবে না। এভাবে দাম বাড়লে তো না খেয়ে থাকতে হবে।
এদিকে বাজারে ইলিশের দাম কিছুটা কমলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য মাছ। বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৬০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৮০০ টাকা ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকায়, কাতল ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০, কৈ ২০০-২২০ এবং পাবদা ও শিং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। আর চাষের ট্যাংরা প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও মলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়েছে মুরগিরও। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়; আর প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি দেশি মুরগি ৬০০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩১০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়।
ঊর্ধ্বমুখী ডিমের বাজাও। বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৫-১৫০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। তবে গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন নেই। প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়, খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায়।
গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়।
পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। এরমধ্যে, কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যায়ে বিঘ্ন ঘটেছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
বেড়েছে মসল্লার দামও। বাজারে প্রতি ১০০ গ্রামে এলাচ আগে ৪০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন সেটি সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় উঠেছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আদার দাম ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২০-২৫০ টাকা।
অন্যদিকে, চালের চড়া দামে নিম্নমুখী কোনো প্রবণতাই লক্ষ্য করা যায়নি। মাস দেড়েক ধরে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল। মোটা চালের দামই এখন ৬০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের এক ধরনের কিছু মিনিকেট ও নাজিরশাইল রয়েছে, যেটা শুধু ৬৫-৭০ টাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া বাকি সব চাল সাধারণত ৭৫-৮৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর খুব ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।