
ছবি : আপন দেশ
নতুন ধান কাটা শেষ হলেও পুরোদমে চলছে মৌসুম। তবুও চালের দাম বেড়েই চলেছে। কোরবানির ঈদের পরেই চালের দাম হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। গত সপ্তাহ থেকে ক্রেতাদের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কাঁচাবাজার। প্রায় সব ধরণের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। সেটি এ সপ্তাহেও অব্যাহত রয়েছে। তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। এছাড়া মাছ ও গরু-খাসির মাংসের দাম অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (০৪ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চালের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকামগুলোতেই চালের দাম বাড়তি। চালকল মালিকরা ঈদের পর দাম বাড়িয়েছেন, যে কারণে চালের দাম বেশি এখন। ঈদের পর প্রতি বস্তা চালের দাম সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ডায়মন্ড, সাগর, মঞ্জুর, রশিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল এখন ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এসব চালের কেজি ছিল ৭৫-৭৬ টাকা। মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেটের দাম সবচেয়ে বেশি; প্রতি কেজি ৮৫-৯০ টাকা, যা ঈদের আগে ৮০ টাকা ছিল। এ ছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা (মোটা চাল) ৫৫-৫৮ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ (মাঝারি চাল) জাতের চাল ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কোরবানির ঈদের পর থেকে রাজধানীতে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েই চলেছে। প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দাম। বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকার ওপরে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ঝিঙে, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুল ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এসব সবজির দাম ৪০-৫০ টাকা কেজি ছিল। বরবটি ও কাঁকরোলের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকার মতো।
বিক্রেতাদের হিসাবে বর্তমানে ৬০ থেকে ৮০ টাকার আশপাশে দাম রয়েছে টমেটো, বরবটি, কাঁকরোল, বেগুন, করলা, ঢ্যাঁড়স, লাউ, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও কচুর লতির দাম। আর কেজিপ্রতি ৫০ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে কেবল পেঁপে, মিষ্টিকুমড়াসহ হাতে গোনা দু-চারটি সবজি। তবে পাইকারি বাজারে প্রতিটি সবজির দামই তুলনামূলক কম। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যায়।
অ-মৌসুমি সবজিও বাজারে রয়েছে। এ ধরনের সবজির দাম অনেক চড়া। যেমন শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ধনেপাতা। এর মধ্যে প্রতি কেজি শিম ৩০০-৪০০ টাকা, ধনেপাতা ৩৫০-৪০০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
রাজধানীর কমলাপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, বেশ কিছু সবজির মৌসুম এখন প্রায় শেষ। যেসব সবজির মৌসুম শেষ হয়েছে সেগুলোর দাম বেড়েছে। আমাদের পাইকারি বাজার থেকে বাড়তি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। আগে সবজি ১০ কেজি ২০ কেজি করে আনতাম, দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখন সে সবজিই আমরা পাঁচ কেজি ৭ কেজি করে আনছি। তবে নতুন করে সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির দাম কমে আসবে।
তবে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, শসা, গাজর প্রভৃতি আগের দামেই স্থিতিশীল রয়েছে। এর মধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০, রসুন ১২০ থেকে ২০০, আদা ১৪০ থেকে ২২০ ও আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য পাড়া–মহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি।
এদিকে চাল ও সবজির বাজার চড়া থাকলেও মাছ, মুরগি ও মাংসের দাম অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। মুগদা বাজারে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন ডিম ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় এ দাম কিছুটা বেশি হতে পারে।
খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০-৮০০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা। মাছের মধ্যে প্রতি কেজি চাষের রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৮০, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৫০, কই ২৮০ থেকে ৩০০, পাবদা ও শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মুদি পণ্যগুলো দামও স্থিতিশীল রয়েছে। তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি আগের দামে কেনা যাচ্ছে। খোলা চিনির দাম কেজিতে ১০ টাকার মতো কমে ১০৫ টাকা হয়েছে। আর প্যাকেট চিনি কেজিতে ৫ টাকা কমে ১১৫ টাকা হয়েছে। মোটা দানার মসুর ডালের কেজি এখন ৯৫ টাকা, যা আগে ৫-১০ টাকা বেশি ছিল। মুগডালের দামও কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমে ১৬০-১৬৫ টাকা হয়েছে। মসলার মধ্যে জিরার দাম আগের তুলনায় কেজিতে ৫০ টাকা কমেছে। তাতে প্রতি কেজি জিরা এখন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।