Apan Desh | আপন দেশ

জুলাই বিপ্লবের শহীদকন্যা ধর্ষণ: ৩ কিশোরের ১০ বছর জেল

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:১২, ২২ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই বিপ্লবের শহীদকন্যা ধর্ষণ: ৩ কিশোরের ১০ বছর জেল

ছবি: আপন দেশ

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় আলোচিত ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ মামলায় তিন কিশোর আসামিকে ১০ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ঘটনাটি ঘটেছিল দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে। ভুক্তভোগী কিশোরী (১৭) ছিলেন জুলাই বিপ্লবের শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা।

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন- মো. সাকিব মুন্সী (১৭), মো. সিফাত মুন্সী (১৭) ও ইমরান মুন্সি (১৭)।

আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পাশাপাশি পর্নোগ্রাফি আইনেও রায় দিয়েছে। এ আইনে আসামি সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সীকে আরও তিন বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। এই সাজার আদেশ একটির পর একটি কার্যকর হবে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিন এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আল নোমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এটি বহুল আলোচিত মামলা ছিল। অভিযোগপত্রে তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়। ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দিল।

আরও পড়ুন>>>স্ত্রী-সন্তা‌নসহ সাবেক চিফ হুইপ ফিরোজের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

তিনি আরও জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ৩ ধারায় তিনজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আসামিরা শিশু হওয়ায় শিশু আইনের বিধান অনুযায়ী এ দণ্ডাদেশ দেয়া হয়।

ভুক্তভোগী কিশোরী মোসা. লামিয়া (১৭) দুমকি সরকারি জনতা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সে দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মৃত জসিম হাওলাদারের মেয়ে। আসামিদের মধ্যে মো. সিফাত মুন্সী তার সহপাঠী ছিল।

চলতি বছর ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় লামিয়া তার দাদার বাড়ি থেকে পিতার কবর জিয়ারত শেষে নানা বাড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছিল। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সে যখন দুমকির পাঙ্গাশিয়ার আলগী এলাকার মৃত জলিল মুন্সীর বাড়ির সামনের সড়ক পার হচ্ছিল, তখন আসামিরা তাকে অনুসরণ করে।

আসামিরা লামিয়ার সামনে এসে তার দুই হাত ও মুখ চেপে ধরে। এরপর তাকে পাশের একটি গাছের বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রথমে মো. সাকিব মুন্সী ও পরে মো. সিফাত মুন্সী তাকে ধর্ষণ করে।

ধর্ষণের পর তারা লামিয়ার বিবস্ত্র অবস্থার একাধিক ছবি তোলে। তারা এ ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেয়। তারা ভয় দেখায় যে তাদের কথা না শুনলে ও যখন ইচ্ছা শারীরিক সম্পর্ক করতে রাজি না হলে লামিয়ার উলঙ্গ ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এরপর লামিয়া কোনো রকমে নানা বাড়ি চলে যায় এবং তার মাকে পুরো ঘটনা জানায়। স্বজনদের সাথে কথা বলে লামিয়া সাময়িক সুস্থ হয়ে পরদিন দুমকি থানায় মামলা দায়ের করে।

মামলাটি দায়ের হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত) ধারায়। inicialmente মামলায় দুমকির নলদোয়ানী গ্রামের মো. সাকিব মুন্সী ও মো.সিফাত মুন্সীকে আসামি করা হয়।

দুমকি থানার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান। তদন্তকালে তিনি এ ঘটনায় মোট তিনজনের সম্পৃক্ততা খুঁজে পান। ১ মে তিনি আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আদালত ১৬ জন সাক্ষীর শুনানি শেষে আজ বুধবার বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে ঢাকার শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে লামিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লামিয়ার বাবা জসিম হাওলাদার গত বছর ১৯ জুলাই আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হন। এর দশ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আলোচিত এ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসামিদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে নিয়ে আসা হয়। রায় শোনার জন্য আদালত প্রাঙ্গণে উৎসুক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়