ছবি: আপন দেশ
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। উৎসবকে ঘিরে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এক হাজার ২৪৭টি মণ্ডপের প্রতিমা তৈরি শেষে চলছে সাজ-সজ্জার কাজ। অবয়ব তৈরি হয়ে গেছে, এখন চলছে রঙ-তুলির কাজ। এজন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জেলার প্রতিমা কারিগররা। যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের। কারিগরদের নিঁপুন হাতের ছোঁয়ায় মাটির প্রতিমা হয়ে উঠছে অপরূপ সৌন্দর্য্যমণ্ডিত। একই সঙ্গে দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ করতে মণ্ডপে মণ্ডপে দিনরাত চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
পঞ্জিকা অনুযায়ী আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর দেবীর বোধন ও মহাপঞ্চমী এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী এবং ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী অনুষ্ঠিত হবে। ০১ অক্টোবর মহানবমী এবং ০২ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এ বছর দুর্গাদেবী গজে বা হাতির পিঠে চড়ে মর্ত্যে আগমন করবেন। আর দোলা বা পালকিতে চড়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরের শ্রী শ্রী কালিবাড়ী, আদালত পাড়া পূজা সংসদ, থানাপাড়া, সাবালিয়া, রেস্ট্রিপাড়া, কলেজপাড়া, প্যারাডাইস পাড়ার পূজামণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে প্রতিমায় রঙ-তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য্য ফুঁটিয়ে তোলার কাজ। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগর ও শিল্পীরা। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। ইতোমধ্যে তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডেকোরেটগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
প্রতিমা তৈরির শিল্পী ও কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যথাসময়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই দুর্গা দেবীর আরাধনার জন্য মণ্ডপগুলো প্রস্তুত করা হবে।

প্রতিমা তৈরির কারিগররা জানায়, প্রতিবছরই তারা অধীর আগ্রহে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজের অপেক্ষায় থাকেন। ইতোমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে রঙ-তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য্য ফুঁটিয়ে তোলার কাজ।
তারা আরও জানায়, কারিগররা একেক জনে একাধিক প্রতিমা তৈরি করছেন। ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের প্রতিমা বিক্রি করে তারা লক্ষাধিক টাকা আয় করে থাকেন। লাভ-লোকসান যাই হোক, বংশগত পেশার প্রতি সম্মান রেখে তারা আনন্দের সঙ্গে প্রকতমা তৈরি করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিমা তৈরির সব কাজ শেষ করে কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলেও জানান তারা।
জেলা পূজা উদযাপন ফ্রণ্টের সভাপতি অমল ব্যানার্জি জানান, শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে তাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজামণ্ডপে তাদের নিজস্ব সেচ্ছাসেবক কর্মী দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরও জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর টাঙ্গাইলে পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। সরকারে পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইল পৌরসভার পক্ষ থেকে এর আওতাধীন ১১০টি মণ্ডপের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এ উৎসবে সামিল হওয়ার আহবান জানান তিনি।

জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পূজাকে ঘিরে জেলায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এবার জেলার পুজামণ্ডপগুলোতে ৯৫০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। আনসার সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীও দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও মোবাইল টিম ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবে।
জেলা প্রশাসক শরীফা হক জানান, টাঙ্গাইলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন ফ্রণ্টের সদস্য ও সনাতন ধর্মের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে জেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা সভা করা হয়েছে।
পূজা উদযাপনের সমস্যাগুলোর সমাধানে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশ বিভাগ নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। পূজায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি মণ্ডপে আনসার বাহিনী ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে। সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গত বছরের ন্যায় এবারও উৎসবমুখর এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































