
মো. মোক্তার হোসেন
সরকারি সম্পত্তি, হাটবাজার, চলাচলের পথ এমনকি মানুষের ব্যাক্তিগত ভিটেমাটি জবর-দখল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষত: প্রবাসে থাকা রেমিটেন্স যোদ্ধা, রাজধানীতে বসবাসকারীদের স্থাবর সম্পত্তিগুলো হয়ে উঠেছে অরক্ষিত। বাদ পড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তিও। স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে অন্যের সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছে একটি চক্র।
দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানা, আমতলী হাট, চকমুষা গ্রামে সম্প্রতি এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভূমিদস্যুচক্রের সদস্য হওয়ার কারণে তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। ভূমিমন্ত্রণালয়ের করা দরখাস্ত এবং একাধিক ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানার ১০নং পুনট্রি ইউনিয়নের চক্মুশা গ্রামের নিরীহ মানুষের সম্পত্তি জবরদখল করে নিচ্ছে স্থানীয় ভূমি দস্যু মো. মোক্তার হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি ভূমিদস্যুচক্র। এ চক্রের রোষানলে পড়ে স্থানীয় নিরীহ মানুষ ভিটমাটি হারানোর পাশাপাশি শিকার হচ্ছে বহুমাত্রিক প্রশাসনিক হয়রানির। আইনের ফাঁক-ফোকড় ও স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে দিবালোকেই চক্রটি জবরদখর করছে মানুষের শেষ সম্বল। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ বিষয়ে সরে জমিনে স্থানীয় প্রশাসন, থানা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে তদন্ত হওয়া আশু প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মানুষ।
আরও পড়ুন<<>> অসহায় সেজে প্লট নেন শেখ রেহেনা-ববি-আজমিনা
ভুক্তভোগীরা জানান, গতবছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালয়ে যাওয়ার পর আইশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা শিথিল হয়ে ওঠে। ঢিলেঢালা অবস্থার সুযোগে তৎপর হয়ে ওঠে এলাকার একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী। তারা বিভিন্নজনের সম্পদ লুটপাটে মেতে ওঠে। আর এ লুটপাটের শিকার হয়েছেন জেলার চিরির বন্দর এলাকা ১০ নং ইউনিয়ন এলাকার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততাহীন অনেক নিরীহ মানুষ। গেলো কয়েক মাসে মোক্তার হোসেন নেতৃত্বাধীন ভূমি দস্যুচক্রের বে-আইনী কার্যকলাপ, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জমি জবরদখলে সাধারণ মানুষ অতীষ্ট হয়ে উঠেছে। কোথায়, কোন অভিযোগে ঝামেলায় জড়িয়ে দেয়া হয় দিন কাটছে সে আতঙ্কে।
একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে মোক্তার হোসেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছে রামরাজত্ব। এ চক্রের সদস্যদের কাজই হচ্ছে হস্তান্তরিত কোনো সম্পত্তির পুর্বের কোনো রেকর্ডীয় ওয়ারিশ খুঁজে বের করা। তার জমি উদ্ধারে প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নেয়া। বিনিময়ে তার কাছ থেকে এবং বর্তমানে দখলে থাকা ক্রেতার কাছ থেকে জমি জবর দখলের হুমকি দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করা। কখনোবা মিথ্যা মামলার জমি জোরপুর্বক দখল করে নেয়ার হুমকি। বর্তমান জমির মালিকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া। এহেন ভূমিদস্যুচক্রের টার্গেট থাকে যেসব জমির মালিক দিনাজপুরের বাইরে বসবাস করেন কিংবা প্রবাসীদের সম্পত্তি।
নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী এ প্রতিবেদককে জানান, চক্মুশা মৌজায় এক ব্যক্তির জমি দখলের জন্য আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করে বে-আইনীভাবে এক বা একাধিকজনকে পূর্বের রেকর্ডীয় ওয়ারিশ সাজিয়ে জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমতলী স্কুলের নামে দানকৃত জমিতে স্থাপিত আনসার ক্লাব এ ভূমিদস্যু মোক্তার ও তা সাঙ্গপাঙ্গদের বে-আইনীভাবে জোরপুর্বক দখল করে নিয়েছে। এ চক্রের দৌরাত্ম্য ভুক্তভোগী কেউ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করার সাহস পায়না। বিবেকবান স্থানীয়রাও মুখ খোলেন না।
নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে আমতলী বাজারের আরেক ভুক্তভোগী জানান, তার দোকানের সামনে সিঅ্যান্ডবি’ সম্পত্তি (সরকারি)। এ সম্পত্তি গ্রাস করে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন মোক্তার হোসেনগং। সিঅ্যান্ডবি’র সম্পত্তির বর্তমান ভোগদখলদারের দাবি তার কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। না দিলে ওই সম্পত্তি থেকে তাকে উচ্ছেদ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।
আরেক ভুক্তভোগী চকমুশা মৌজার নদীর ধারে বীল পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার লিচু বাগানের দেয়াল ভেঙ্গে মোক্তার হোসেন সে সম্পত্তি এখন নিজের বলে দাবি করছে। হয় জমির দখল ছেড়ে দিতে হবে, নয়তো টাকা।
অভিযোগ এ প্রসঙ্গে মোক্তার হোসেনের সঙ্গে ফোনে ০১৭৫০...৩৩৩ নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
স্থানীয়রা মনে করছেন, ১০নং পুনট্রি ইউনিয়নের চক্মুশা গ্রামের নিরীহ জনসাধারণ ও গ্রামবাসী ভূমি দস্যু মোক্তার বাহিনীর চাঁদাবাজি, লুটতরাজ ও জমি জবর-দখল অব্যাহত থাকলে মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিরও আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রশাসন থেকে সরেজমিনে তদন্ত করে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।