
ছবি : আপন দেশ
শরৎ ঋতুর শেষ প্রান্তে এসেও যেন বর্ষাই রয়ে গেছে। দিবাগত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতে রাজধানীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জলাবদ্ধতায় তৈরি হয়েছে। বুধবার (০১ অক্টোবর) সকালে বাসার বাইরে বেরিয়ে বিপাকে পড়েন পথচারীরা। যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে, বন্ধ হয়ে গেছে অনেক রুটে অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় কর্মজীবী মানুষ ও সাধারণ পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার পর থেকে শুরু হয় মেঘের গর্জন। এর কিছু সময় পরই নামে বৃষ্টি। রাত পেরিয়ে ভোর হলেও বৃষ্টি থামার কোনো নামই নেই। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
পূজার ছুটি থাকায় রাস্তাঘাটে যানজট কম থাকলেও বিভিন্ন প্রয়োজনে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা ছুটিতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বিপাকে পড়েন অনেকেই। খালি পায়ে, ভ্যানে করে চলতে দেখা যায় যাত্রীদের।
গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা জানান, রাস্তায় গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। যে অল্প কয়েকটি বাস রাস্তায় বেরিয়েছে, সড়ক তলিয়ে থাকায় সেগুলোও বিকল হয়ে গেছে। সিএনজি-অটোরিকশার ভেতরে থেকে ভিজতে হচ্ছে। ভোগান্তির শেষ নেই যেন।
বিশেষ করে রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, বিজয়নগর, মগবাজার, পুরান ঢাকার কিছু অংশ, ও ধানমন্ডি এলাকায় পানি জমে রাস্তায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। বেশ কিছু স্থানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে থাকায় পথচারীদের হেঁটে চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে।
পরিবার নিয়ে পূজার ছুটিতে গ্রামে যাবেন অঙ্গন পাল। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, অপেক্ষা অন্তত গাবতলী পর্যন্ত যাওয়ার কোনো যানবাহন।
তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে পূজার ছুটি কাটাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম। কিন্তু এখন হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে আছি। নারী-শিশুদের নিয়ে বিপাকে আছি। এদিকে বৃষ্টিও থামছে না। ফলে নিজেরাও ভিজতেছি, ব্যাগে থাকা কাপড়ও ভিজে যাচ্ছে।
সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম হলেও জলাবদ্ধতার কারণে ভোরেই রাজধানীর বেশ কিছু রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে চলাচলের সময় ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে বেশ কিছু গাড়ি।
আরও পড়ুন<<>>ঢাকায় দুপুরের মধ্যে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
সিএনজি-অটোচালক মনির হোসেন বলেন, মিরপুর-১০ থেকে কোনোমতে পানি ঠেলে এ পর্যন্ত এলাম। কিন্তু রাস্তায় পানি বেশি থাকার কারণে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন টেনে টেনে নিতে হচ্ছে।
জলাবদ্ধতার এ চিরচেনা সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি চালক-যাত্রী সকলের।
এদিকে আবহাওয়াবিদদের মতে, এ বৃষ্টি হঠাৎ কোনো স্বাভাবিক আবহাওয়া নয়। এটি একটি শক্তিশালী মৌসুমি বৃষ্টিবলয়ের অংশ। বাংলাদেশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ দল (বিডব্লিউওটি) পূর্বেই সতর্ক করেছিল, ‘প্রবাহ’ নামের এ বৃষ্টিবলয়টি ৩০ সেপ্টেম্বর রাত থেকে দেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং ৫ অক্টোবর পর্যন্ত এর প্রভাব থাকতে পারে।
জানা গেছে, এটি চলতি বছরের ১৩তম বৃষ্টিবলয় এবং একটি ‘প্রায় পূর্ণাঙ্গ বৃষ্টিবলয়’। তবে এটি সারা দেশে সমানভাবে সক্রিয় না হয়ে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটাবে। বিশেষ করে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলে প্রবাহটি বেশি সক্রিয় থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগে প্রবাহটি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকবে। ঢাকা বিভাগেও এর প্রভাব থাকবে উল্লেখযোগ্য। তবে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয় থাকবে এটি।
প্রবাহটি পূর্ব দিক দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে এবং আগামী ৬ অক্টোবর রংপুর অঞ্চল দিয়ে দেশ ছাড়তে পারে। এর মধ্যে ২ থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ সময় হিসেবে ধরা হচ্ছে। ফলে আগামী কয়েকদিন রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।