
ফাইল ছবি
আল্লাহর পবিত্র নামের যে বরকত ও লযযত এবং স্বাদ ও আনন্দ রয়েছে তা অন্য কিছুতে নেই। আল্লাহর যিকির এমন এক শক্তি, যা দুর্বলকে সবল করে এবং সকল বিপদে দৃঢ়পদ রাখে। কারণ আল্লাহর স্মরণকারীর বিশ্বাস এ যে, সব কিছু আল্লাহর হুকুমেই হয় এবং আল্লাহর কোনো ফয়সালা বান্দার জন্য অশুভ নয়। আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেয়ার মাঝেই বান্দার কামিয়াবি ও কল্যাণ।
কুরআন মজীদে আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে। অন্য কোনো ইবাদত সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি। কারণ আল্লাহর যিকির তথা আল্লাহর স্মরণ এমন এক বিষয়, যা মানুষকে সব ধরনের গুনাহ থেকে রক্ষা করে। শরীয়তের হুকুম মোতাবেক চলতে সাহায্য করে। উপরন্তু তা এত সহজ যে, এর জন্য আলাদা করে বেশি সময় ব্যয় করার কিংবা অন্যান্য কাজ স্থগিত রাখার প্রয়োজন হয় না।
আল্লাহর যিকির হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের রূহ। আবু ওসমান নাহদী রাহ. বলেন, কুরআন মজীদের ওয়াদা অনুযায়ী যখন কোনো বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে তখন আল্লাহ তাকে স্মরণ করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং শোকর গোযারি কর, না-শোকরি করো না।-সূরা বাকারা : ১৫২
সুতরাং আমরা যখন আল্লাহর যিকিরে মশগুল হই তখন একথা স্মরণ করা কর্তব্য যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলাও আমাদেরকে স্মরণ করছেন। এতে যিকিরের স্বাদ ও লযযত বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রহি’মাহুল্লাহ বলেন, মাছের জন্য যেমন পানি দরকার, অনুরূপ মানুষের অন্তরের জন্য আল্লাহর যিকির আবশ্যক। মাছকে যদি পানি থেকে বের করা হয় তাহলে তার অবস্থা কেমন হবে? (আল্লাহর যিকির ছাড়া মানুষের হৃদয়ের অবস্থাও তেমন।)
যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করা যায়। তার নিকটবর্তী হওয়া যায়। তার সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। তার পর্যবেক্ষণ অনুভব করা যায়। তাকে ভয় করা যায়। তার কাছে প্রত্যাবর্তন করা যায়। তার আনুগত্য করতে সাহায্য পাওয়া যায়।
যিকিরের মাধ্যমে অন্তরের দুঃখ-বেচনা ও দুঃশ্চিন্তা দূর হয়। খুশি ও আনন্দ লাভ করা যায়। অন্তর জীবিত থাকে, তাতে শক্তি ও পরিছন্নতা সৃষ্টি হয়।
অন্তরের মধ্যে যে শূণ্যতা ও অভাব থাকে তা আল্লাহর যিকির ছাড়া দূর হবেনা। এমনিভাবে অন্তরের মধ্যে যে কঠোরতা আছে আল্লাহর যিকির ছাড়া তা নরম হবেনা।
যিকির হচ্ছে অন্তরের আরোগ্য, পথ্য এবং শক্তি। যিকিরের আনন্দ-স্বাদের তুলনায় অন্য কোন আনন্দ নেই, অন্য কোন স্বাদ নেই। অন্তরের রোগ হচ্ছে যিকির থেকে উদাসীনতা।
যিকিরের স্বল্পতা মুনাফেকীর দলীল। অধিক পরিমাণ যিকির করা ঈমানের দৃঢ়তার প্রমাণ এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার দলীল। কেননা মানুষ যা ভালোবাসে তা বেশি বেশি স্মরণ করে।
বান্দা যখন যিকিরের মাধ্যমে সুখের সময় আল্লাহকে স্মরণে রাখবে তিনিও বান্দাকে তার দুঃখের সময় স্মরণ করবেন। বিশেষ করে মৃত্যুর সময়, মৃত্যু যন্ত্রনার সময়।
যিকির হচ্ছে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচার মাধ্যম। যিকিরের কারণে ‘সাকিনাহ’ (প্রশান্তি) নাযিল হয়, যিকিরকারীকে আল্লাহর রহমত আচ্ছাদিত করে এবং ফেরেশতার তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
যিকিরের মাধ্যমে জিহবাকে বাজে কথা, গীবত, চোগলখুরী, মিথ্যা প্রভৃতি হারাম ও অপছন্দনীয় বিষয় হতে রক্ষা করা যায়।
যিকির হচ্ছে সবচাইতে সহজ ইবাদত। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। যিকিরের মাধ্যমে জান্নাতে বৃক্ষরোপণ করা হয়।
যিকিরের মাধ্যমে ভাব-গাম্ভীর্য, কথা-বার্তায় মিষ্টতা ও চেহারায় উজ্জ্বলতা প্রকাশ পায়। যিকির হচ্ছে দুনিয়ার আলো, কবর এবং পরকালের নূর।
যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত (দয়া) নাযিল আবশ্যক হয়, ফেরেশতারা তার জন্য দুয়া করে। যিকিরকারীদেরকে নিয়ে আল্লাহ ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন।
অধিকহারে আল্লাহর যিকিরকারী সর্বশ্রেষ্ঠ আমলকারীদের অন্তর্ভুক্ত। যেমন সর্বোত্তম রোযাদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে রোযা অবস্থায় বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করে।
যিকিরের মাধ্যমে কঠিন জিনিস সহজ হয়, দুর্বোধ্য জিনিস স্পষ্ট হয়, কষ্ট হালকা হয়, রিযিক্বের পথ উন্মুক্ত হয়, শরীর শক্তিশালী হয়।
যিকিরের মাধ্যমে শয়তান দূরীভূত হয়, তাকে মূলোৎপাটন করে, তাকে লাঞ্চিত ও অপমানিত করে।
যিকিরের ফযীলত সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল-
এক. কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর।-সূরা আনফাল : ৪৫
দুই. অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, (তরজমা) যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্বরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।-সূরা রা’দ : ২৮
তিন. আরো বলা হয়েছে, (তরজমা) যারা ঈমানদার তারা এমন যে যখন তাদের সামনে আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে।-সূরা আনফাল : ২
চার. আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, যাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে।-সূরা হজ্ব : ৩৫
পাঁচ. অন্য আয়াতে বলেন, (তরজমা) আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।-সূরা আনকাবুত : ৪৫
ছয়. আল্লাহর অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও যিকিরকারী নারী, তাদের জন্য আল্লাহর প্রস্ত্তত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।-সূরা আহযাব : ৩৫
সাত. হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর।-সূরা আহযাব : ৪১
আট. আরো বলেছেন, (তরজমা) স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায়।-সূরা আরাফ : ২০৫
নয়. মুমিনদের সর্ম্পকে বলেছেন, যারা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এবং চিন্তা-ভাবনা করে আসমান যমিন সৃষ্টির বিষয়ে। হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি।-সূরা আলে ইমরান : ১৯৯
দশ. মুনাফিকদের বিষয়ে বলেছেন, যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন তারা শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।-সূরা নিসা : ১৪২
এগার. আরো বলেন, যারা আল্লাহ ও আখেরাতের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।-সূরা আহযাব : ২০
বার. অন্য আয়াতে বলেন, যে তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে অতপর নামায আদায় করে।-সূরা আ’লা : ১৫
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।