
ছবি: আপন দেশ
মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। অর্থাৎ রবের হুকুম আহকাম, বিধিনিষেধ মেনে জীবন পরিচালনার জন্য। তাই আমরা আল্লাহ নির্দেশিত পন্থায় দৈনিক পাঁচবার নামাজ আদায় করি, সে সঙ্গে রোজা, হজ, জাকাত, দান-সদকা, কোরআন তেলাওয়াতসহ বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগী করে থাকি।
কেননা দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতের পাথেয় অর্জন এসব ইবাদতেই নিহিত। কিন্তু ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হালাল রুজি উপার্জন। অবৈধ পন্থায় উপার্জন করে যত ইবাদতই করা হোক না কেন, তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
রিজিক মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহর গুণবাচক নামের মধ্যে একটি আল্লাহু রাজ্জাকুন অর্থাৎ আল্লাহ রিজিকদাতা। আল্লাহতায়ালা মানুষ পৃথিবীতে আসার আগেই তার রিজিক নির্ধারিত করে রেখেছেন। মানব শিশু জন্মগ্রহণ করার পর আল্লাহতায়ালা তার জন্য মায়ের দুধের ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহতায়ালা চান বান্দা তার প্রাপ্য রিজিকগুলো যেন হালাল উপায় সংগ্রহ করে। ইসলাম হালাল রিজিক উপার্জন করতে এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
হালাল রুজি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মানব জাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু ত থেকে তোমরা আহার করো এবং শয়তানের পথ থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা) হালাল রুজি অন্বেষণ সম্পর্কে কোরআনে বিধৃত হয়েছে-নামাজ শেষে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করবে(সূরা জুম’আ)
আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ও প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) হাদিসে হালাল উপার্জনের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। নবিরা নিষ্পাপ হওয়ার পরও তাদের হালাল রিজিকের কথা বলেছেন। তাই সব নবি ও রাসূলরা কোনো না কোনো হালাল পেশা অবলম্বন করেছেন।
আদি পিতা হজরত আদম (আ.) কৃষি কাজ করতেন। হজরত নূহ (আ.) কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। হজরত ইদ্রিস (আ.) দর্জির কাজ করতেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) রাজমিস্ত্রি ছিলেন। হজরত ইসমাঈল (আ.) রাজমিস্ত্রির সহযোগী ছিলেন। আমাদের প্রিয় নবি প্রিয় হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছাগল চরিয়েছেন ও ব্যবসা করেছেন। কারণ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে রাসূলরা! তোমরা হালাল পবিত্র উত্তম রিজিক খাও আর সৎকর্ম করো। (সূরা মুমিনুন : ৫১)।
আরও পড়ুন<<>>সম্মান-সম্পদ বাড়ে যেসব আমলে
তা ছাড়া মুসলিম জাহানের চার খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) ব্যবসা করেছেন। হজরত ওমর (রা.)ও ব্যবসা করেছেন। হজরত ওসমান (রা.) কাপড়ের ব্যবসা করেছেন। হজরত আলী (রা.) কিছু খেজুরের বিনিময়ে কূপ থেকে পানি ওঠানোর কাজ করতেন। সব মোমিনদের উদ্দেশ্যে আল-কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মোমিনরা! তোমরা হালাল উত্তম রিজিক আহার করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছি। (সূরা বাকারা : ১৭২)।
নামাজ, রোজা যেমন আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত ফরজ ইবাদত। তেমনিভাবে হালাল উপার্জনও একটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহতায়ালা বলেন, অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হয়, তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়, আর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে থাক, যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার। (সূরা জুমআ: ১০)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, হালাল জীবিকা সন্ধান করা নির্ধারিত ফরজগুলোর পরে বিশেষ একটি ফরজ। (বায়হাকি; কানযুল উম্মাল) জান্নাতে যাওয়ার পূর্বশর্তও হালাল উপার্জন।
প্রিয় নবি (সা.) বলেছেন- ওই গোশত দেহ জান্নাতে যাবে না, যা হারাম খাবার থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী। (সুনামে তিরমিজি-৬১৪)। ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশত হালাল উপার্জন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ পবিত্র, তিনি একমাত্র পবিত্র বস্তুকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ রাসূল (সা.) দের যে আদেশ করেছেন, মুমিনদেরও সেই আদেশ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, হে রাসূলরা! তোমরা হালাল পবিত্র খাদ্য ভক্ষণ কর এবং সৎ আমল কর।
তিনি আরও বলেন, হে ইমানদাররা! তোমরা আমার দেয়া হালাল পবিত্র রিজিক থেকে খাও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) উল্লেখ করেন, কোনো ব্যক্তি দূরদূরান্তে সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধুলা-বালি লেগে আছে। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি উভয় হাত আসমানের দিকে তুলে কাতর স্বরেও, হে প্রভু! হে প্রভু! বলে ডাকছে। অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং সে হারামই খেয়ে থাকে। এ ব্যক্তির দোয়া কীভাবে কবুল হবে? (মুসলিম : ২৭৬০)।
প্রিয় নবি (সা.) বলেছেন, মানুষের এমন এক কাল অতিক্রম করবে, যাতে মানুষ এ কথার চিন্তা করবে না, যে সম্পদ উপার্জন করা হচ্ছে তা হালাল না হারাম? (মিশকাত)। বর্তমানে অধিকাংশ পেশার মানুষ পরোক্ষভাবে হারাম উপার্জনের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়েও নিজেকে সমাজে হালাল উপার্জনকারী হিসাবে পরিচয় দেয়, গর্ব করে। আমরা হারাম উপার্জন বলতে শুধু সুদ, ঘুসকে বুঝি। কিন্তু কাজে ফাঁকি কিংবা সঠিকভাবে কাজ না করে মাস শেষে বেতন নেয়া কিন্তু হালাল নয়। বান্দার দুনিয়ার সব কৃতকর্মের হিসাব পরকালে দিতে হবে।
রাসূল (সা.) বলেন, কেয়ামতের ময়দানে বনু আদমকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। সে পাঁচটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দেয়া পর্যন্ত কোনো মানুষ অর্ধ হাত পরিমাণ সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। তার মধ্যে একটি হলো-সে কোন পথে উপার্জন করেছে। (তিরমিজি : ২৪১৬)।
হালাল পথে অল্প উপার্জনেও আল্লাহতায়ালা বরকত দেন। তাই আসুন আমরা নিজে হালাল পথে উপার্জন করি এবং অন্যদের হালাল পথে উপার্জনে উৎসাহীত করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে হালাল উপার্জনের সক্ষমতা দান করুন, আমিন।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।