
সংগৃহীত ছবি
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে পাঠাতেও ঘুষ দিতে হয়। সম্প্রতি ঘুষ লেনদেনের একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু তাতেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। ফলে দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর কর্মকর্তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কড়া হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও এসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শেখ আবদুল হাদীর ঘুষ নেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি নিজ অফিসের চেয়ারে বসে প্রকাশ্যে ঘুষ নিচ্ছেন। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘুষ নেয়ার ভিডিও দেখতে এখনে ক্লিক করুন।
এ ঘটনার পর কাস্টম হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতারা বলছেন, উচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ায় এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। এর ফলে সেবাগ্রহীতারা কাস্টমসের উপর আস্থা হারাচ্ছেন। একই সঙ্গে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, শেখ আবদুল হাদি তার চেয়ারে বসে আছেন। একজন সেবাগ্রহীতা (সম্ভবত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট) তার সঙ্গে কথা বলছেন। কথা বলার ফাঁকে ওই ব্যক্তি খুব সাবধানে হাদীর হাতে কিছু টাকা গুঁজে দেন। ভিডিওতে টাকার পরিমাণ বোঝা না গেলেও মনে হচ্ছে কয়েকটি এক হাজার টাকার নোট ছিল। এ কর্মকর্তা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সেকশন ৯(এ)-তে কর্মরত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সেবাগ্রহীতা অভিযোগ করেছেন, তিনি টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না। টাকা না দিলে ফাইল আটকে রেখে হয়রানি করেন।
ঘুষের ব্যাপারে জানতে চাইলে শেখ আবদুল হাদি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, প্রতিবেদক ভিডিওটি কীভাবে পেলেন। কারা এটি করেছে। তবে তিনি ঘুষ নেয়ার কথা সরাসরি অস্বীকারও করেননি।
আরও পড়ুন>>>বিএফআইইউ প্রধানের অপকর্ম তদন্তে চার সদস্যের কমিটি, সময় সাতদিন
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এছাড়াও, কাস্টমসের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাল কাগজপত্র তৈরি করে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগও রয়েছে। গত ২৭ জুলাই ঘুষ নেয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের দুজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেন- সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল আলীম ও সিপাহী মো. শাহরিয়ার রহমান।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ চক্র আমদানিকারকদের নানা কৌশলে হয়রানি করছে। পণ্যের দ্রুত ছাড়পত্র পেতে হলে আমদানিকারক বা তাদের প্রতিনিধিকে বিভিন্ন পয়েন্টে যেতে হয়। এসব পয়েন্টে যারা থাকেন, তাদের সন্তুষ্ট করতে ধাপে ধাপে ঘুষ দিতে হয়। এ ঘুষকে তারা ‘স্পিডমানি’ বলে। যে যত বেশি ‘স্পিডমানি’ দেয়, তার ফাইল তত দ্রুত নড়ে। কেউ ঘুষ দিতে রাজি না হলে, পণ্য শনাক্তকরণ (এইচএস) কোডের মতো নানা আইনি মারপ্যাঁচে তাদের ফাইল আটকে রাখা হয়। এতে আমদানিকারকরা বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হন।
ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্য খালাসের প্রক্রিয়ায় এখনও ধাপে ধাপে হয়রানির শিকার হতে হয়। হয়রানি থেকে বাঁচতে তারা নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলতেও রাজি হন না। তাদের ভয়, যদি তাদের পরিচয় প্রকাশ পায়, তাহলে কাস্টমসে তাদের হয়রানি আরও বেড়ে যাবে। তারা বলেন, কাস্টম হাউসে সহকারী কমিশনারের উপরের স্তরে ঘুষের পরিমাণ কম হলেও নিচের স্তরে এর পরিমাণ অনেক বেশি।
তারা আরও জানান, এ চক্রটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পরেও পণ্য পুনঃপরীক্ষার নামে আমদানিকারকদের হয়রানি করে। যৌক্তিক কোনো কথা বললে তাদের অপমান করা হয় ও কখনো কখনো আইনের নানা ফাঁক-ফোকর বের করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়। এসব কারণে এ কাস্টম হাউজে ঘুষের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।সহকারী কমিশনার থেকে উপরের লেভেলে ঘুষের পরিমাণ কম থাকলেও নিচের লেভেলে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।