Apan Desh | আপন দেশ

কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি-৬ দফা ঘোষণাপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪০, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

আপডেট: ২০:৪০, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি-৬ দফা ঘোষণাপত্র

ছবি: আপন দেশ

কাদিয়ানিদের (আহমদিয়া সম্প্রদায়) রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণার দাবিতে আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হলে পরবর্তী সময়ে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলন থেকে আন্দোলনের বিস্তারিত কর্মপন্থা তুলে ধরেন সম্মিলিত খতমে নবুয়ত পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী। 

আরও পড়ুন<<>>শেখ হাসিনার মামলার রায় জাতীয় রাজনীতি কাঁপাচ্ছে

তিনি আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়িত না হলে আরও কঠিন থেকে কঠিন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।

ঘোষণা অনুসারে, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে নিম্নলিখিত তিনটি ধাপে কর্মসূচি পালন করা হবে—
 ১) গণস্বাক্ষর কর্মসূচি: আগামী ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার অংশগ্রহণে দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে।

 ২) স্মারকলিপি প্রদান: আগামী মে ও জুন মাসজুড়ে দেশের প্রতিটি জেলায় দায়িত্বরত জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হবে।

 ৩) বিভাগীয় মহাসম্মেলন: আগামী জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস সারা দেশে প্রতিটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হবে।

মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, এসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিগুলো পালন করার পরও যদি সরকার কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণার ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন না করে, তবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তিনি বলেন, পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণের লক্ষ্যে দেশের প্রতিনিধিত্বশীল শীর্ষ ওলামায়ে কেরামকে নিয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় ওলামায়ে সম্মেলন আহবান করা হবে। সেই সম্মেলনে কঠিন থেকে কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে হবে ইনশাল্লাহ।

সম্মেলনে ৬ দফা ঘোষণা
ইসলামের মৌলিক আকিদা খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানিদের সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানিয়ে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখের উপস্থিতিতে মহাসম্মেলন থেকে সর্বসম্মতভাবে ছয় দফা দাবি সংবলিত একটি ঘোষণাপত্র পেশ করা হয়। খতমে নবুয়াত পরিষদের মাওলানা মাহফুজুল হক এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ইসলাম ধর্মের মৌলিক আকিদা খতমে নবুয়তকে অস্বীকার করার কারণে কাদিয়ানিরা মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে ইসলাম বহির্ভূত কাফের বা অমুসলিম। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে অবিলম্বে এ ঘোষণা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ঘোষণাপত্রে আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামে পরিচিত কাদিয়ানিদের জন্য ধর্মীয় আচার-আচরণ সংক্রান্ত ছয়টি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়:

১. অমুসলিম ঘোষণা: আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামধারী তথাকথিত কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের সংখ্যালঘু অমুসলিম। তারা আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামে নিজেদের পরিচয় দিতে পারবে না এবং সব ক্ষেত্রে কাদিয়ানি সম্প্রদায় নামে পরিচিত হবে।

২. ইসলামী পরিভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা: কাদিয়ানিরা তাদের ধর্মকে ইসলাম আখ্যায়িত করতে পারবে না এবং কালিমা, নামাজ, রোজা, যাকাত, আজান, ঈদ, কোরবানি ইত্যাদি কোনো ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করতে পারবে না।

৩. উপাসনালয় ও নিদর্শন: কাদিয়ানিরা তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ নামকরণ করতে পারবে না। সেটি কাদিয়ানী উপাসনালয় হিসেবে পরিচিত হবে। এছাড়া সাহাবি, উম্মুল মুমিনিন-এর মতো কোনো ইসলামী বিশেষ নিদর্শন তারা ব্যবহার করতে পারবে না।

৪. বিবাহ সম্পূর্ণ হারাম: কাদিয়ানিদের সঙ্গে মুসলমানের বিবাহ ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে হারাম। পরিচয় গোপন করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৫. জানাজা ও উত্তরাধিকার: কাদিয়ানিদের জানাজা পড়া যাবে না এবং কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা যাবে না। কাদিয়ানি ও অমুসলমানের মাঝে কোনো উত্তরাধিকারের বিধান প্রযোজ্য হবে না।

৬.  প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা: কাদিয়ানিরা ইসলাম প্রচারের নামে কোরআনের বিকৃত অনুবাদ কিংবা কোনো বই, পুস্তিকা, লিফলেট ইত্যাদি ছাপতে বা প্রচার করতে পারবে না।

ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ধর্ম ইসলামের সুরক্ষা, কাদিয়ানিদের সংখ্যালঘু অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার স্বার্থে অবিলম্বে উপরোক্ত ঘোষণা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির অনুসারী এ সম্প্রদায়কে আন্তর্জাতিকভাবে অমুসলিম ঘোষণার বহু নজির আছে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান জাতীয় সংসদ সাংবিধানিকভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ (রাবেতা আলমে ইসলামী) এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) সর্বসম্মতিক্রমে কাদিয়ানিদের কাফের ও মুরতাদ অমুসলিম ঘোষণা করেছে। সৌদি আরব, মিশর, ইরান, কুয়েত, কাতারসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কাদিয়ানি মতবাদকে কুফরি মতবাদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ব্রিটিশ ভারতের লাহোর হাইকোর্ট, পাকিস্তানের ফেডারেল শরিয়া কোর্ট এবং বাংলাদেশের উচ্চ আদালত একাধিক রায়ে কাদিয়ানি মতবাদকে ইসলামবিরোধী ঘোষণা করেছে।

সম্মেলন থেকে দেশবাসীসব সব মুসলমানের প্রতি এ সম্প্রদায়ের সঙ্গে মুসলিমসুলভ আচরণ পরিহার করার আহবান জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে, তাদের উপাসনালয়ে নামাজ না পড়া, বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন না করা, সালাম না দেয়া এবং তাদের পণ্য বয়কট করা।

খতমে নবুয়ত হলো ঈমানের ভিত্তি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু—এ বিশ্বাসে দৃঢ় থেকে মহাসম্মেলন থেকে নেতৃবৃন্দ জানান, তারা শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায়ে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন। তারা কোনো সম্প্রদায় বা ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষ বা সহিংসতা নয়, বরং ন্যায় ও যুক্তির মাধ্যমে ইসলামের মূল আকিদা রক্ষার আহবান জানান।

আপন দেশ/এসআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ
SS Power

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়