
সংগৃহীত ছবি
জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে অশ্লীন ও নীতিবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। ফজলুর রহমান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।
গত ৫ আগস্টের পর থেকেই তপ্ত বক্তব্য দিয়ে আসছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা যিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। টেলিভিশনের টক-শো ছাড়াও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার দেয়া বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বেশ নিন্দার ঝড় উঠে। ৭১’সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষে কথা বলে আসছিলেন তিনি। এ পর্যায়ে তিনি জুলাই বিপ্লবের চেতনায় আঘাত এনেছেন।
টক-শোতে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তিকে ‘কালো শক্তি ও রাজাকারের বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তার ভাষায়— এটি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মূল পরিকল্পনাকারী ‘কালো শক্তি’ জামায়াত। যারা ৫ আগস্টের ঘটনার জন্য দায়ী, তারা কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়, তারা কেবল অভিনেতা। দেশের মানুষ এখন বুঝে ফেলেছে, এরা রাজাকারের বংশধর। তারা অর্থ-বিত্ত দিয়ে তরুণ সমাজকে প্রলুব্ধ করছে।
তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, ৫৪ বছর পেরিয়ে গেছে। জামায়াত ও তাদের সহযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের গ্লানি হয়তো ভুলে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বরং তারা এখন আরও শক্ত হয়ে ফিরে এসেছে। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় আছে।
তার এ বক্তব্য নিয়ে দিনভর বিএনপিসহ সবখানেই তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বইছে।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠন হাসানাত আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান দাবি করেছেন ফজলুর রহমানের বক্তব্য বিষয়ে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। নয়তো মনে করা হবে যে, ফজলুর রহমানের বক্তব্য বিএনপিরই বক্তব্য। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় জুলাইযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
এ প্রেক্ষিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। দলীয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শোকজের যা উল্লেখ
বিএনপির ফজলুর রহমানকে দেয়া শোকজে বলা হয়, আপনি জুলাই-আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে আসছেন। আত্মদানকারী শহীদদের নিয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণরুপে দলীয় আদর্শ ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি। মহিমান্বিত এ গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নিয়ে আপনার বক্তব্য জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আপনার বক্তব্য দলের সুনাম ক্ষুন্ন করার সুপরিকল্পিত চক্রান্তের প্রয়াস বলে অনেকেই মনে করে। এমনকি আপনি জনগণের ধর্মীয় অনুভুতিতেও আঘাত দিয়ে কথা বলছেন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির সাড়ে চারশোর অধিক নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতার প্রায় দেড় হাজারের অধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন। ত্রিশ হাজারেরও অধিক মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার এ ধরণের বীরোচিত ভূমিকাকে আপনি প্রতিনিয়ত অপমান ও অমর্যাদা করছেন।
সুতরাং এ ধরণের উদ্ভট ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী বক্তব্যের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার যথাযথ কারণ দর্শিয়ে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটি লিখিত জবাব দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।