
তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যদিও তারা দেশের অর্থনীতির প্রাণ।
বৃহস্পতিবার (০১ মে) ঢাকার নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত একটি সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, প্রায় ৮ কোটির বেশি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে অর্ধেকই নারী, যারা দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির ভিত্তি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এখনও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্য বা মর্যাদা সমাজে এবং রাষ্ট্রে প্রাপ্য হয়নি।
তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী—কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষদের অবহেলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। শ্রমজীবী মানুষের প্রত্যাশা, এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা যেখানে শ্রমের ন্যায্য মূল্য, অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত হবে।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও কল্যাণই বিএনপির রাজনীতি। আমাদের দল জনগণের রায় পেয়ে বারবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে। কখনোই দেশের মানুষকে ছেড়ে পালিয়ে যায়নি।
তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের রাজনীতি জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য। তিনি এ সময় শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানান।
আরও পড়ুন>>>>জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন: রিজভী
তারেক রহমান বলেন, গত দেড় দশকে স্বাধীন বাংলাদেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। জনগণের ভোটাধিকার ও বাঁচার অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসন চালানো হয়েছিল। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। কিন্তু আজও জনগণের রাজনৈতিক অধিকার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
তিনি বলেন, আজও শ্রমজীবী মানুষ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেদের দুঃখ-দুর্দশার কথা সরকারের কানে পৌঁছাতে পারছেন না। কৃষকেরা আলু চাষে বাম্পার ফলন সত্ত্বেও বিপাকে পড়েছেন। কারণ উৎপাদন ও সংরক্ষণের খরচ বেড়েছে। কিন্তু ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।
তারেক রহমান আরও বলেন, শিল্প, গার্মেন্টসহ প্রতিটি সেক্টরে শ্রমজীবী মানুষের নানা সংকট চলমান। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য কিছুটা সহনীয় থাকলেও রমজান শেষে চাল ও তেলের দাম আবারও বেড়েছে, কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। তাহলে তারা কোথায় গিয়ে তাদের কথা বলবে? আজ সংস্কারের কথা বলা হলেও সে কর্মপ্রক্রিয়ায় শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর অনুপস্থিত। অথচ কৃষক ও শ্রমিকরাই গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র ও সরকারের সংস্কারে জনগণের মতামত প্রতিফলনের জন্য দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। নির্বাচিত সরকার জনগণের কথা শুনতে বাধ্য। এ লক্ষ্যেই ২০২৩ সালে বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করে। যা নিয়ে এখন সারাদেশে সংলাপ চলছে। বিএনপি নির্বাচন ও সংস্কার—উভয়কেই অপরিহার্য মনে করে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহবান—স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার পরিকল্পনা স্পষ্ট করুন, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু অংশ পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। জনগণ এখন এসব নিয়ে সন্দিহান।
আরও পড়ুন>>>বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানেই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র: গয়েশ্বর
তিনি রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান প্রসঙ্গে বলেন, রাখাইনে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে করিডর হিসেবে ব্যবহারের অনুমতির বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে—এমন খবর জনমাধ্যমে এসেছে। এটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত বিষয়। অথচ এ বিষয়ে জনগণকে কিছু জানানো হয়নি, এমনকি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়নি। আমি এ মুহূর্তে করিডর দেয়া উচিত কি না, সে বিতর্কে যেতে চাই না। তবে দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মনে করে, এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের মতামত জরুরি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসা উচিত জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। গণতান্ত্রিক বিশ্বে এটাই রীতি।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট—বিদেশীদের স্বার্থ নয়, দেশের জনগণের স্বার্থই আগে। মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান নয়—সবার আগে বাংলাদেশ। এটি আমাদের অঙ্গীকার, এটি আমাদের লক্ষ্য।
তিনি শ্রমজীবী জনগণের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, তৃণমূল জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভব নয়। শ্রমজীবী মানুষের শ্রম, ঘাম ও মেধার ওপরই গড়ে ওঠে দেশের অর্থনীতির ভিত্তি।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের তাবেদার মুক্ত বাংলাদেশ, ১৯৯০-এর স্বৈরাচার পতন ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ পতনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রতিটি বাঁকে জনগণ একটাই আকাঙ্ক্ষা বহন করেছে—তা হলো একটি বৈষম্যহীন, নিরাপদ, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
বক্তব্যের শেষ অংশে তারেক রহমান দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান—উস্কানি ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যবদ্ধ থাকি। যেন পরাজিত অপশক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে পুনর্বাসিত হতে না পারে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।