Apan Desh | আপন দেশ

‘ধর্ষককে’ জুতাপেটা করেই মীমাংসা জামায়াত নেতার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ২০ অক্টোবর ২০২৫

‘ধর্ষককে’ জুতাপেটা করেই মীমাংসা জামায়াত নেতার

ফাইল ছবি

কুষ্টিয়ার খোকসায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে জামায়াত কর্মী। এ ঘটনায় তাকে লঘুদণ্ড দিয়ে ‘মীমাংসা’ করেছেন দলীয় নেতারা। ঘটনাটি ঘটে সপ্তাহখানেক আগে। তবে রোববার (১৯ অক্টোবর) এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানাজানি হয়।

ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে জামায়াতের এক নেতাকে বলতে শোনা গেছে, ধর্ষকের অভিভাবকেরা জুতা দিয়ে পিটিয়ে ঠিক (মীমাংসা) করে দিয়েছেন। তবে পুলিশের এক কর্মকর্তার বলেন, ভুক্তভোগীর শিশুর পরিবারকেও টাকার লোভ দেখিয়ে মামলা থেকে দূরে রাখা হয়।

উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়নের একটি গ্রামে ১২ অক্টোবর দিনের বেলায় তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয় বলে স্বজনের অভিযোগ। ভিডিওতে শিশুটির চাচিকে বলতে শোনা যায়, তিন শিশু স্থানীয় মাদ্রাসার ছাদে বসে খেলা করছিল। সেখানে আমির হোসেন হাজির হন। শিশুদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও দেখান তিনি। অন্য শিশুরা পালিয়ে গেলেও লালসার শিকার হয় তার ভাতিঝি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীটি। তাকে (শিশুটিকে) বাড়ি নিয়ে যৌন নির্যাতন করেন আমির। একপর্যায়ে শিশুটি নিজ বাড়ি ফিরে ঘটনা জানায়। এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার থানায় যেতে চেয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর রাজনৈতিক দলের লোকদের দিয়ে সালিশে বসতে বাধ্য করেন। সেখানে দেয়া রায় তারা মানতে পারেনি। কিন্তু কার কাছে বিচার চাইতে যাবেন। যেখানে যাচ্ছে সেখান থেকে ফিরে আসতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন>>>জোবায়েদ হত্যার ঘটনায় ছাত্রীর বয়ফ্রেন্ড গ্রেফতার

এলাকাবাসী জানান, ঘটনার পরদিন (১৩ অক্টোবর) রাত ১০টার পর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী আমির হোসেনের (৬৩) বাড়িতে দলীয় নেতারা সালিশ বসান। সেখানে উপজেলা জামায়াতের আমির মো. নজরুল ইমলাম, গোপগ্রাম ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আলতাফ হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা মুরশিদ, দুখু মিয়াসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে আমির হোসেনকে জুতাপেটা করে সালিশ শেষ করা হয়। এমনকি সালিশকারীরা অভিযুক্ত আমির হোসেন ও শিশুর বক্তব্যও মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন।

প্রতিবেশীরা জানান, আমির হোসেন জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। তার ছেলেও ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিল। সালিশে লঘুদণ্ডের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি ভুক্তভোগী শিশুটির মা-বাবা। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করা তাদের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে শিশুটির মাকে বলতে শোনা যায়, ধর্ষকের যে বিচার হয়েছে তাতে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এমন লোকদের দিয়ে বিচার করিয়েছেন, যেখানে কথা বলার সুযোগ নেই।

আমির হোসেনের স্ত্রী ওই ভিডিওতে বলেন, তার স্বামী মাপ চেয়ে নিয়েছেন। অভিযুক্তের ছেলে দাবি করেন, তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। ওই শিশুর বাবার সঙ্গে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ আছে। তাই ধর্ষণের নাটক সাজিয়েছে।

গোপগ্রাম ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আলতাফ হোসেন কাছে স্বীকার করেন, তিনিসহ তার দলের উপজেলা নেতারা সালিশে ছিলেন। সেখানে শিশুর জবানবন্দি শুনেছিলেন। তাকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছিল বলেও স্বীকার করেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায়- উপজেলা জামায়াতের আমির নজরুল ইসলামকে। তিনি বলছিলেন, ধর্ষণের ঘটনা সালিশ হয় না। দুই পক্ষ তাকে ধরায় বিষয়টি নিয়ে সালিশে বসেছিলেন। আমির হোসেনকে তার পরিবারের মুরব্বিরা চড়থাপ্পর দিয়ে মিটমাট করে নিয়েছে।

ভিডিওর বিষয়টি স্বীকার করে নজরুল ইসলাম বলেন, সালিশে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। তবে দাবি করেন, সালিশের পর শিশুর বাবাকে থানায় পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি (শিশুর বাবা) থানায় যেতে রাজি হননি।

আমির হোসেনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পৃক্ত নেই বলেও দাবি করেন তিনি। তবে স্বীকার করেন, তার (আমির) ছেলে একসময় শিবির করত। সে ডানপিটে হওয়ায় হওয়ায় তাকে দলে রাখা হয়নি।

খোকসা থানার ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম রোববার রাতে বলেন, ওই শিশুর একটি বক্তব্যের ভিডিও শোনার পর তিনি পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। শিশুটির বাবা জানান, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। যদি এ অপরাধ ঘটেও থাকে, তা সালিশযোগ্য নয়। স্পর্শকাতর এ বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখবেন।

সোমবার দুপুরে ওসি জানান, ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবাকে থানা আনা হয়েছে। তিনি মামলা করবেন। আসলে মেয়েপক্ষকে টাকার লোভ দেখানো হয়, তারাও সে ফাঁদে পা দেয়। মামলা নথিভুক্ত হলেই আসামি ধরার অভিযান চালানো হবে।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়