
সংগৃহীত ছবি
ইসরায়েলি নৌবাহিনী গাজা উপত্যকার উদ্দেশে যাওয়া আন্তর্জাতিক সহায়তা বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আক্রমণ করেছে। এ সময় অন্তত ৩১৭ জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০২ অক্টােবর) এ তথ্য জানিয়েছে ফ্লোটিলার আয়োজকেরা। তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে।
অফিশিয়াল ফ্লোটিলা ট্র্যাকার জানিয়েছে, ২১টি জাহাজে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, আরও ১৯টি জাহাজে হামলা হয়েছে। এর বাইরে চারটি জাহাজ এখনো গাজা অভিমুখে যাত্রা করছে। তবে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েল অন্তত ৩৯টি জাহাজ আটক করেছে।
ট্র্যাকার আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী ২১টি জাহাজ থেকে অন্তত ৩১৭ জন কর্মীকে আটক করেছে। ইসরায়েলের আক্রমণের শিকার হওয়া জাহাজগুলোর কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নাগরিক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন—স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল, তুরস্ক, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নাগরিকসহ আরও অনেক দেশের নাগরিক।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, আটককৃতদের ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখান থেকেই তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন>>>অবশেষে গাজার জলসীমায় ফ্লোটিলার ত্রাণবাহি জাহাজ
এদিকে, অফিশিয়াল ট্র্যাকার দেখিয়েছে, ‘মিকেনো’ নামের জাহাজটি গাজার আঞ্চলিক জলসীমায় প্রবেশ করেছিল। তবে প্রায় ৯ দশমিক ৩ নটিক্যাল মাইল দূরে পৌঁছানোর পর জাহাজটির ট্র্যাকিং সিগন্যাল হারিয়ে যায়। তুরস্কের কর্মী এরদেম ওজভেরেন জানান, তাঁদের জাহাজ গাজা থেকে ৩০ নটিক্যাল মাইলেরও কম দূরে, অর্থাৎ প্রায় ৫৫ কিলোমিটার ব্যবধানে ছিল।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানায়, গাজার দিকে এগিয়ে যাওয়া অবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজগুলো ঘিরে ফেলে। এর মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিনের অবরোধকে চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছিলেন। কর্মীরা জানান, বেশির ভাগ জাহাজেই সিগন্যাল বিঘ্ন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ইসরায়েল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকজন অধিকারকর্মী একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেন। তাতে দেখা যায়, ইসরায়েলি নৌবাহিনীর নৌযান বহরের কাছে গিয়ে তাদের দিক পরিবর্তনের নির্দেশ দিচ্ছে।
গাজা অবরোধ ভাঙতে রওনা হওয়া সুমুদ ফ্লোটিলা এক্সে লিখেছে, আমাদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে জায়নিস্ট সেনারা। কয়েকটি জাহাজ আটকের পর সব জাহাজে জররি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আমাদের জাহাজগুলো অবৈধভাবে আটকানো হচ্ছে। ক্যামেরা বন্ধ হয়ে গেছে, সেনারা জাহাজে প্রবেশ করেছে।’
কমিটির অভিযোগ, ইসরায়েলি নৌবাহিনী কর্মীদের ওপর সহিংসতা চালিয়েছে। তারা একটি জাহাজে ধাক্কা মেরেছে, জলকামান ব্যবহার করেছে। জোর করে জাহাজে উঠেছে। একই সঙ্গে ৫০টি দেশের শান্তিপ্রিয় কর্মীদের ‘নির্মমভাবে’ নির্যাতন করা হয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, কিছু কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের একটি ইসরায়েলি বন্দরে নেয়া হবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নৌবাহিনীকে ফ্লোটিলায় পৌঁছে কর্মীদের আশদোদ বন্দরে যেতে বলা হয়েছে। সেখানেই জাহাজগুলো পরীক্ষা করা হবে, তারপর সাহায্যসামগ্রী গাজায় পাঠানো হবে। ইসরায়েলের চ্যানেল ১৩’কে একটি সূত্র জানিয়েছে, পুরো ফ্লোটিলা দখল করতে আজ বৃহস্পতিবার সারা দিন সময় লাগতে পারে।
ফ্লোটিলাটি আগস্টের শেষ দিকে যাত্রা শুরু করে। এতে মূলত মানবিক সাহায্য ও চিকিৎসাসামগ্রী ছিল। বহু বছর পর একসঙ্গে ৫০ টির বেশি জাহাজ গাজার উদ্দেশে যাত্রা করে। এতে ৪৫ টির বেশি দেশের ৫৩২ জন বেসামরিক সমর্থক ছিলেন। প্রায় ১৮ বছর ধরে গাজায় অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। চলতি বছরের মার্চে তারা সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ বন্ধ করে অবরোধ আরও কঠোর করে। এতে পুরো অঞ্চল দুর্ভিক্ষের মুখে পড়ে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজা বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অনাহার আর রোগব্যাধি।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।