Apan Desh | আপন দেশ

সহিংসতায় দীর্ঘ হচ্ছে মরদেহের সারি, পাঁচ মাসে ১৫৮৭ হত্যা

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ১৭ জুন ২০২৫

আপডেট: ০৯:৫৯, ১৭ জুন ২০২৫

সহিংসতায় দীর্ঘ হচ্ছে মরদেহের সারি, পাঁচ মাসে ১৫৮৭ হত্যা

প্রতীকী ছবি

দেশে খুনের ঘটনা বেড়েই চলছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি থেকে মে) দেশে এক হাজার ৫৮৭টি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়েছে। পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান বলছে, এ সময়ে গড়ে প্রতিদিন ১০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

গত বছরের একই সময়ে (জানুয়ারি-মে) দেশে হত্যা মামলা হয়েছিল ১ হাজার ২৬৫টি। সে হিসেবে এবার পাঁচ মাসে হত্যা মামলা বেড়েছে ৩২২টি। যা শতকরা হিসেবে প্রায় ২০ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণ করে এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসের হিসাব ধরে দেখা গেছে, দিনে গড়ে ১০ জন খুন হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে হত্যা মামলা হয় ২৯৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০টি, মার্চে ৩১৬টি, এপ্রিলে বেড়ে হয় ৩৩৬টি ও মে মাসে তা আরো বেড়ে হয় ৩৪১টি। এ হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে দেশে ৩১৭ জনকে হত্যা করা হয়।

অন্যদিকে দেশে গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে হত্যা মামলা হয়েছিল এক হাজার ২৬৫টি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে হয় ২৩১টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৪০টি, মার্চে ২৩৯টি, এপ্রিলে ২৯৬টি এবং মে মাসে ২৫৯টি। এ হিসাবে গত বছরের একই সময়ে গড়ে মাসে হত্যার শিকার হয় ২৫১ জন করে।

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসের মামলায় আগের ২৫৫টি মামলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ সংখ্যা বাদ দিলেও গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসের চেয়ে এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে খুনের মামলা বেড়েছে।

নিহত বেশি বিএনপির নেতাকর্মী : হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশে ৬৭ ব্যক্তি হত্যার শিকার হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩২৫টি রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয় ৪৭ জন। বাকি ২০ জন এপ্রিল ও মে মাসে নিহত হয়। 

সংগঠনটির সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলে সহিংসতা বেশি ঘটেছে।

এইচআরএসএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম তিন মাসে সংঘটিত ৩২৫টি সহিংসতার মধ্যে ১৯০টি ঘটে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে। জানুয়ারি থেকে মে মাসের সহিংসতায়ই বিএনপির ৪৫ জন, আওয়ামী লীগের ১০ জন, জামায়াতের একজন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের একজন ও ইউপিডিএফের দুজন নিহত হন। অন্য দুজনের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। পরের দুই মাসে আরো রাজনৈতিক কর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তাতেও বিএনপির নেতাকর্মী নিহতের ধারাবাহিকতার তথ্যচিত্র পাওয়া গেছে।  

পাঁচ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ৭০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। চার শতাধিক বাড়িঘর, রাজনৈতিক কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সংগঠনটি বলছে, দেশে গণপিটুনিতে উল্লিখিত পাঁচ মাসে ৫৩ ব্যক্তি নিহত হয়। 

রাজধানীতে রাজনৈতিক খুন ৩৯ শতাংশ : পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ঢাকা রেঞ্জে ৩৭৬টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত বছর ঢাকা রেঞ্জে নিহত হয় ২৯৯ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৫৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৫৪ জন, মার্চে ৬০ জন, এপ্রিলে ৭৫ জন ও মে মাসে ৫১ জন নিহত হয়। 

ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলা করা হয় ১৬৮টি। রাজধানীতে সংঘটিত এসব হত্যাকাণ্ড বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৩৯ শতাংশই ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুসারে, গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে রাজধানীতে ১৬৮টি হত্যা মামলা করা হয়। ২০২৪ সালের একই সময়ে এসংক্রান্ত মামলা করা হয় ৬৩টি। তাতে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় একই সময়ে হত্যা মামলা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। পূর্ববিরোধ, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বিভিন্ন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ভাড়াটে সন্ত্রাসীরাও অর্থের বিনিময়ে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

অহরহ খুন : পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে দিনে গড়ে ১০টি হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কালের কণ্ঠের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রতিনিধিরা স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে জানিয়েছেন, চলতি বছরের প্রথম সাড়ে পাঁচ মাসে ময়মনসিংহে ৪৪, কুমিল্লায় ৪২, সিরাজগঞ্জে ৩৮, নারায়ণগঞ্জে ৩১ এবং ঝিনাইদহে ২৯টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ২৭, নেত্রকোনায় ২৭, যশোরে ২৪, নওগাঁয় ২৩, ফরিদপুরে ২১, শেরপুরে ২১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০, মুন্সীগঞ্জে ১৭, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৫, নাটোরে ১৫, বরিশালে ১৪, শরীয়তপুরে ১৩, বাগেরহাটে ১৪, খাগড়াছড়িতে ১৪, জয়পুরহাটে ১৩, লক্ষ্মীপুরে ১২, মৌলভীবাজারে ১২, বরগুনায় সাত, জামালপুরে আট, গোপালগঞ্জে সাত, চুয়াডাঙ্গায় চার, কুড়িগ্রামে ছয়, মেহেরপুরে সাত এবং রাঙামাটিতে সাতটি হত্যাকাণ্ড ঘটে।

রাজধানীতেও একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর দক্ষিণখানের শাহ কবীর মাজার রোডের চালাবন এলাকায় রাস্তায় প্রকাশ্যে শিল্পী বেগম নামের এক নারীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। গত বুধবার দুপুরে পল্লবী ১১ নম্বর সেকশনের ৩৫ নম্বর বাসার পঞ্চম তলায় নাজমুল হাসান পাপ্পু ও দোলনা আক্তার দোলা নামের এক দম্পতি নিজ বাসায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। একই দিন রাজধানীর কমলাপুরে সি-ল্যান্ড আবাসিক হোটেলের ছয়তলার একটি কক্ষ সুমি রায় নামের এক নারী খুন হন। এভাবেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুনের ঘটনা ঘটছে।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়