Apan Desh | আপন দেশ

জুলাই হত্যাকাণ্ড

ট্রাইব্যুনালে ৮৪ বুলেট-পিলেটের হিসাব দিলেন তদন্ত কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ট্রাইব্যুনালে ৮৪ বুলেট-পিলেটের হিসাব দিলেন তদন্ত কর্মকর্তা

শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় হতাহতদের শরীর থেকে জব্দ করা ৮৪টি বুলেট ও পিলেটের হিসাব আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি বুলেট এবং ২৪টি পিলেট রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীর রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে এ তথ্য দেন।

মো. আলমগীর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে এ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারক হলেন শফিউল আলম মাহমুদ ও মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

মামলাটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি জানান, গত বছরের ২৯ অক্টোবর তিনি পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তা মো. জানে আলমের কাছ থেকে তদন্তের দায়িত্ব নেন।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর আমাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কমপ্লেইট রেজিস্টার নিয়োগ করা হলে আমি পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তা মো. জানে আলমের নিকট হতে তদন্তভার গ্রহণ করি। পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তার সম্পাদিত ও প্রস্তুতকৃত সিডি পর্যালোচনা করি।

তদন্তকালে তদন্ত সংস্থায় সংরক্ষিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, পত্রিকার রিপোর্ট ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করি।

উক্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর আদেশ প্রদান করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমি তদন্তভার গ্রহণ করে তৎকালীন তদন্ত সংস্থার কো অর্ডিনেটর মো. মাজহারুল হকের সার্বিক সহযোগিতা ও নির্দেশনায় মামলা সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশেষ করে গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে প্রকাশিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা পূর্বক সংগ্রহ করি।

ঘটনা চলাকালীন ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনে আদেশ নির্দেশ ও উস্কানিমূলক বিবৃতি লিখনি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত পোস্ট ও মন্তব্য পর্যালোচনা পূর্বক সংগ্রহ করি। আন্দোলনে শহীদ ব্যক্তিদের পরিবার পরিজন, জখমপ্রাপ্ত জুলাইযোদ্ধাসহ সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদপূর্বক তাদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করি।

এছাড়াও পত্রপত্রিকা, ভিডিও ফুটেজসহ আলামত জব্দ করি।

আলমগীর বলেন, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিকট থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংবলিত প্রতিবেদন সংগ্রহ করি। সংগ্রহীত আলামত পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিকট প্রেরণ করি। তাদের মতামত গ্রহণ করি। বিভিন্ন ঘটনাস্থলসহ জুলাই আন্দোলন চলাকালীন আহতদের চিকিৎসা প্রদানকারী কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পরিদর্শন করি।

আসামী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন অন্য মামলায় আটক থাকায় তাকে সিআইডি মিস কেস নং ০২-২০২৪-এ গ্রেফতারের আবেদন করি। তাকে উক্ত মামলায় গ্রেফতারের পর ট্রাইব্যুনালের আদেশে মূলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ২৪-০৩-২৫ জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে উক্ত আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাইলে তার জবানবন্দি লিপিবব্ধ করার জন্য চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করি। বিজ্ঞ সিএমএম আদেশক্রমে বিধি মোতাবেক বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবব্ধ করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, তদন্তকালে তিনি ১২-০২-২৫ সকাল ১১টায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিডফোর্ড হাসপাতাল থেকে জব্দ তালিকার মূলে আন্দোলনে আহতদের শরীর থেকে সংগ্রহীত ৩টি বুলেট জব্দ করেন। ১২-০২-২৫ সকাল ৫টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মিডফোর্ড হাসপাল থেকে জব্দ তালিকার মূলে আন্দোলনে আহতদের শরীর থেকে সংগ্রহীত ২০টি বুলেট ও ১৬টি পিলেট জব্দ করেন।

১৩-০২-২৫ সকাল ৮টায় জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান থেকে জব্দ তালিকার মূলে আন্দোলনে আহতদের শরীর থেকে সংগ্রহীত ১৯টি বুলেট জব্দ করেন।

১৩-০২-২৫ তারিখে ১টায় ন্যাশনাল ইন্সিটিটিউট অফ নিউরো সাইন্স থেকে জব্দ তালিকার মূলে আন্দোলনে আহতদের শরীর থেকে সংগ্রহীত ১টি বুলেট ও ৩টি পিলেট জব্দ করেন।

১৩-০২-২৫ তারিখে ২টায় সিএমএস থেকে জব্দ তালিকার মূলে আন্দোলনে আহতদের শরীর থেকে সংগ্রহীত ১৩টি বুলেট জব্দ করেন।

১৩-০২-২৫ তারিখে কর্মিটোলা জেনারেল হাসাপাতল থেকে জব্দ তালিকার মূলে আন্দোলনে আহতদের শরীর থেকে সংগ্রহীত ২টি বুলেট জব্দ করেন।

১৬-০২-২৫ তারিখে সাড়ে ১১টায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিস্টিটিউট থেকে জব্দ তালিকার মূলে আন্দোলনে আহতদের শরীর থেকে সংগ্রহীত ৬টি পিলেট জব্দ করেন।

১৩-০২-২৫ তারিখে ৩টায় জখমি সামাদ মিয়ার নিকট থেকে জব্দ তালিকার মূলে ১টি বুলেট জব্দ করেন।

২২-০২-২৫ তারিখে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের ফরেনসিক রিপোর্ট ও মনয়াতদন্তের রিপোর্ট ও অন্যান্য তথ্যাবলি জব্দ করেন।

০৮-০৩-২৫ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরি থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়িতে তামিম ভূঁইয়াকে গুলি করার ভিডিওসহ ১০টি আইটেমের ১২টি ভিডিও ফুটেজ হ্যাসট্যাগ ভ্যালুসহ জব্দ করেন এবং তা তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ানের জিম্মায় প্রদান করেন।

১৭-০৩-২৫ তারিখে ২টা ৩০ মিনিটে তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরি থেকে Mp4 ভিডিও ফরমেটে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ছবি সংবলিত ২.৫০ সেকেন্ডের একটি ভয়েস বার্তা হ্যাসট্যাগ ভ্যালুসহ একটি অডিও ও ১টি ভিডিও ফুটেজ করেন এবং তা তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ানের জিম্মায় প্রদান করেন।

মামলায় প্রসিকিউসনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, প্রসিকিউটর মীজানুল ইসলাম, গাজী এইচ এম তামীম ও আসামী পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

আজ তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য অসম্পূর্ণ থাকায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামীকাল দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়