Apan Desh | আপন দেশ

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির রিভিউ আবেদনের আদেশ স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:০১, ২৯ জুন ২০২৫

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির রিভিউ আবেদনের আদেশ স্থগিত

ফাইল ছবি

নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞার আদেশের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদনের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। রোববার (২৯ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। 

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

শিশির মনির বলেন, প্রথমত ২০১৮ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির গেজেট গ্রহণ করে যে আদেশ দিয়েছিলেন সেটি স্থগিত করা হয়েছে। এখন ওই আদেশের আর কোনো কার্যকারিতা থাকলো না। দ্বিতীয়ত শৃঙ্খলাবিধি বর্তমানে যা আছে তা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য কার্যকর থাকবে। তৃতীয়ত হাইকোর্ট বিভাগে ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে (বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় সংক্রান্ত) রিট আবেদনের যে শুনানি হচ্ছে, তার আর কোনো বাধা থাকলো না।

তিনি আরও বলেন, শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে হাইকোর্টে শুনানির সময় একটা প্রশ্ন উঠেছিল, আপিল বিভাগের একটা আদেশ থাকা অবস্থায় হাইকোর্টে এটার শুনানি করা যাবে কিনা। ফলে আজকের আদেশের মাধ্যমে সে বাধাটা দূরীভূত হলো।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।

পরে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত গেজেট জারি করা হয়। পরের বছর ৩ জানুয়ারি সে গেজেট গ্রহণ করে আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। এ আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরসহ আট আইনজীবী গত মাসে আপিল বিভাগে আবেদন (রিভিউ) করেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এ বিষয়ে শুনানি শেষে রোববার আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন।

ওইদিন আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৮ সালে এমন একটি কাজ করেছে, যেখানে নিম্ন আদালতের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে কঠিন করে দেওয়া হয়েছে। একটি শৃঙ্খলাবিধি করা হয়েছে, যেটা ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগ গ্রহণ করে একটি আদেশ দিয়েছিলেন। এই শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে আমাদের নিম্ন আদালতের জুডিসিয়াল অফিসারদের আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলে। ওই আদেশকে রিভিউ চেয়ে আমরা আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনের শুনানি হয়েছে।

তিনি বলেন, শুনানিতে আমরা বলেছি, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তখনকার দিনের বিচার বিভাগকে অ্যাসল্ট করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে বিদেশে পাঠিয়ে এই শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করা হয়েছিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে। যেখানে আগে নয়জন বিচারপতি ভিন্ন আদেশ দিয়েছিলেন। পরে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করে পাঁচজন বিচারপতির মাধ্যমে সেই শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করা হয়েছিল। অথচ যেটি ছিল অধস্তন বিচারকদের জন্য সবচাইতে বেশি অন্যায় ও অমর্যাদাকর এবং স্বাধীনতার পথে বড় বাধা।

আমরা বলেছি, এটি বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তৎকালীন সরকার বাধ্য করেছিল এ আদেশ দিতে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বেতন গ্রেড একধাপ নামিয়ে দেওয়া হলে তৎকালীন জেলা জজ ও জুডিসিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেনসহ ২১৮ জন বিচারক হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর অনেক বিচারক সে রিটে পক্ষভুক্ত হন। এ রিট শুনানির পর ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট অধস্তন আদালতের বিচারকদের বেতন গ্রেড নামিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বিচারকদের বিসিএস ক্যাডারভুক্ত করার বৈধতার প্রশ্নে রুল জারি করেন।
 
পরবর্তীকালে ১৯৯৭ সালের ৭ মে রুল যথাযথ ঘোষণা করে জুডিসিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস করার রায় দেন। তবে হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার চূড়ান্ত রায় দেন।
 
ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আট বছর পর ২০০৭ সালে মূল নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়। তবে অপর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের বিষয়টি ঝুলে থাকে। এক পর্যায়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। তবে সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে শুনানিতে বলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।
 
বিধিমালাটি গ্রহণ না করে কিছু শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসকে সিনহা। এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়। কিন্তু দফায় দফায় সময় দেয়া হলেও সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের মতপার্থক্যের কারণে ওই বিধিমালা গেজেট প্রকাশের বিষয়টি ঝুলে যায়। এক পর্যায়ে শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে দেশ ছাড়েন ও পরবর্তীকালে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
 
এস কে সিনহার ঘটনাবহুল পদত্যাগের পর ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধির প্রকাশিত গেজেট গ্রহণ করে আদেশ দেন।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়