সংগৃহীত ছবি
কাজের সন্ধানে কেরালায় গিয়েছিলেন ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের এক তরুণ পরিযায়ী শ্রমিক। কিন্তু সে কাজের খোঁজই শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে। বাংলাদেশি সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ বছর বয়সী রামনারায়ণ বাঘেল।
নিহত রামনারায়ণ ছত্তিশগড়ের শক্তি জেলার বাসিন্দা। জীবিকার খোঁজে তিনি কেরালার পালাক্কাড় জেলায় যান। তবে স্থানীয়দের ভুল সন্দেহ ও সহিংসতার শিকার হয়ে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পালাক্কাড় জেলার ভালয়ার থানার আওতাধীন আট্টাপল্লাম এলাকায় চুরির সন্দেহে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা রামনারায়ণকে আটক করেন। এরপর তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। এক পর্যায়ে তাকে বাংলাদেশি নাগরিক বলে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে মারধর শুরু করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তার কাছ থেকে কোনো চোরাই মাল উদ্ধার হয়নি।
আরও পড়ুন>>>গাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৯৪ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে সহিংসতার ভয়াবহতা স্পষ্ট। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে রামনারায়ণের শরীরে ৮০টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
চিকিৎসকরা জানান, তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল, শরীরজুড়ে ছিল অসংখ্য ক্ষত এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণই মৃত্যুর কারণ হয়। পুলিশ জানায়, মারধরের সময় তার বুক থেকেও রক্ত বের হতে দেখা গেছে।
৩১ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয়রা বারবার তাকে ‘বাংলাদেশি’ বলে সম্বোধন করছে। ভিডিও ধারণকারী একজন তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার ভাষা কী? এরপর তার গ্রামের নাম জানতে চান। রামনারায়ণ ঠিকভাবে উত্তর দেওয়ার আগেই আশপাশের লোকজন বলে ওঠে, তুমি বাংলাদেশি। এরপরই শুরু হয় গণপিটুনি।
মারধরের ফলে প্রায় অচেতন অবস্থায় রামনারায়ণ বলতে শোনা যায়, তার বোন তার গ্রামেই থাকেন। তখন ভিডিও করা ব্যক্তি বিদ্রূপ করে বলেন, তোমার বোনও বাংলাদেশি। এরপরও হামলাকারীরা ‘তুমি বাংলাদেশি’ বলতে বলতে আবার তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন।
এদিকে, ঘটনার পর কেরালা পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে। ১৮ ডিসেম্বর আট্টাপল্লাম গ্রামের বাসিন্দা মুরলি, প্রসাদ, অনু, বিপিন ও আনন্দন- এ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ স্পষ্ট করেছে, রামনারায়ণের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না।
রামনারায়ণের পরিবারে রয়েছে তার দুই ছেলে, একজনের বয়স আট বছর, অন্যজনের বয়স ১০ বছর। নিহতের চাচাতো ভাই শশীকান্ত বাঘেল বলেন, পরিবারটি এ ঘটনায় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।
শশীকান্ত বলেন, জীবিকা নির্বাহের জন্যই তিনি কেরালায় গিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশি সন্দেহে তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তিনি খুবই গরিব মানুষ ছিলেন। তিনি সরকারের কাছে পরিবারটির জন্য সহায়তার আবেদন জানান।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ছত্তিশগড়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় শর্মা বলেন, হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি ও ছত্তিশগড় সরকার সব পর্যায়ে নিহতের পরিবারকে সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করছে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































