Apan Desh | আপন দেশ

আল জাজিরার বিশ্লেষণ

পাকিস্তান তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশকে যে কারণে কাছে টানছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ২০:৪২, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাকিস্তান তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশকে যে কারণে কাছে টানছে

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার যখন গত ২৩ আগস্ট ভোরে ঢাকা বিমানবন্দরে নামেন। সেটি ছিল গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো শীর্ষ পাকিস্তানি কর্মকর্তার প্রথম সফর। পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ৫৪ বছর আগে।

উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করা ইশাক দার বাংলাদেশে তার সফরকে “ঐতিহাসিক’’ আখ্যা দিয়ে আশাবাদী সুরে বললেন, এটি দুই দেশের সম্পর্কের এক “নতুন অধ্যায়”।

দুই দেশের সম্পর্কে বরফ গলার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বললেন, গত এক বছরে “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’’ হয়েছে।

দার বলেন, ‘আমাদের এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে করাচি থেকে চট্টগ্রাম, কোয়েটা থেকে রাজশাহী, পেশোয়ার থেকে সিলেট ও লাহোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত দুই দেশের তরুণরা হাতে হাত মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে ও যৌথভাবে স্বপ্ন পূরণ করবে।

আরও পড়ুন>>>ভূমি মন্ত্রণালয়ের লোকাল টেন্ডারে কারস্বার্থে বিদেশি কোম্পানি

তার সফরটি ছিল কয়েক মাস ধরে চলা কূটনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগের প্রতীকী সাফল্য। গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ভারতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক দ্রুত উষ্ণ হতে শুরু করে।

তবে পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক মাসুদ খালিদ সতর্ক করে বলেন, অতীতের ইতিহাস এখনো দুই দেশের আস্থার পথে বড় বাধা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নতুন সরকার পাকিস্তানের উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। স্পষ্টতই, এতদিন কিছু কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা ছিল, যা এখন দূর হয়েছে। কিন্তু এখন প্রয়োজন একটি কাঠামো, যেখানে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে।

কূটনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগ জোরদার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ গত বছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দু’বার দেখা করেছিলেন। তবে বিশ্লেষকদের অনেকেই এত দ্রুত সম্পর্কের উষ্ণতা কিংবা ধারাবাহিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক প্রত্যাশা করেননি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামর–উল–হাসান ইসলামাবাদে গিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। ফেব্রুয়ারিতে যান বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। এরপর এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ ঢাকায় আসেন।

মে মাসে ভারত–পাকিস্তানের ৪ দিনের সংঘর্ষের কারণে দারের সফর পিছিয়ে যায়। তবে জুলাইয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি ঢাকায় আসেন। আর আগস্টে ইসহাক দার ঢাকা পৌঁছানোর সময়ই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান পাকিস্তানে সফরে ছিলেন। সেখানে তিনি পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মিরজার সঙ্গে বৈঠক করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দিলওয়ার হোসেন বলেন, পাকিস্তানের এ ধরনের “তড়িঘড়ি” সম্পর্ক জোরদার প্রচেষ্টা আসলে কৌশলগত পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, হাসিনা সরকার থাকাকালেও পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল। এখন তারা মনে করছে, ১৯৭৫–পরবর্তী সময়কার মতো সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ এসেছে।

তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন এবং ১৯৮১ সালে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন। তার আমলেই ইসলামাবাদ–ঢাকা সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।

দিলওয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন ঐতিহাসিকভাবে ভারতের সঙ্গে বৈরিতা ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার দ্বৈত বাস্তবতা তৈরি করেছে। পাকিস্তান হয়তো এখন ভারত–বাংলাদেশ টানাপোড়েনকে কাজে লাগাতে চাইছে। এটি কূটনীতিতে অস্বাভাবিক কিছু নয়।

আগস্টে ইসহাক দারের ঢাকা সফরের সময় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করেন। ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতার যুদ্ধের ক্ষত
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ক্ষত এখনো পাকিস্তান–বাংলাদেশ সম্পর্কের কেন্দ্রে।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় পাকিস্তান দুই ভূখণ্ডে বিভক্ত ছিল। পশ্চিম পাকিস্তান ছিল তুলনামূলক ছোট, আর পূর্ব পাকিস্তান ছিল বেশি জনবহুল—যা পরে বাংলাদেশ হয়। দুই অংশের মাঝখানে ভারত ছিল ভৌগোলিক বাধা।

পূর্ব পাকিস্তানের অসন্তোষ বাড়তে থাকলে ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়ায়। পাকিস্তানি সেনারা এবং তাদের সহযোগী বাহিনী গণহত্যা চালায়, লাখো মানুষ নিহত হন এবং প্রায় দুই লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হন বলে ধারণা করা হয়। ভারতের সামরিক সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন ১৬ বছর ও তিনি ভারতঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।

পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরী বলেন, ভারতীয় “আঞ্চলিক আধিপত্যের’’ অভিজ্ঞতা পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয়কে একে অপরের দিকে টেনে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা ভারতের আধিপত্য টের পেয়েছে, আর আমরা পাকিস্তানিরা তা দেখেছি মে মাসের সংঘর্ষে। এখন দুই দেশই বুঝতে পারছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারসাম্যের প্রয়োজন।

গত মে মাসে জম্মু–কাশ্মীরের পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত–পাকিস্তান চার দিনের তীব্র বিমানযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ভারত এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহাব এনাম খান বলেন, ভারত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হলেও সম্পর্ক এখন অনেকটা “শীতল। তবে নীতিনির্ধারণে অর্থনীতি বড় ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, অ্যান্টি–ইন্ডিয়া সেন্টিমেন্ট অনেক সময় অতিরঞ্জিত হয়। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে শুধু নিরাপত্তা বা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে না; বরং অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় গুরুত্ব দেয়।

চীনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা
এ অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি পাকিস্তান–বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন, হাসিনা আমলেও ঢাকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিল।

দিলওয়ার হোসেন জানান, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও চীনের প্রভাব বাংলাদেশে অটুট রয়েছে। মার্চে প্রধানমন্ত্রী ইউনূস বেইজিং সফর করেছেন। আগস্টে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান চীন সফরে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ১২টি জে–১০সি যুদ্ধবিমান কেনার কথা বিবেচনা করছে। এগুলো পাকিস্তানেরও রয়েছে। মে মাসের সংঘর্ষে ব্যবহার করেছে। চীন শুধু পাকিস্তানের কৌশলগত মিত্রই নয়, বরং তাদের অর্থায়ন, বিনিয়োগ ও সামরিক সরঞ্জামের প্রধান উৎস।

দিলওয়ার বলেন, এসব কারণে ঢাকা ও ইসলামাবাদ আরও কাছাকাছি আসছে।

বাণিজ্য ও রাজনীতি
দারের দুই দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ নানা রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক হয়। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রনেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিও রয়েছে—যারা হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল।

পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক আবদুল বশিত বলেন, ২০২৬ সালের শুরুর নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এসব বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক যাই হোক না কেন, পাকিস্তান–বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অতীতের সমস্যা থাকলেও দক্ষতার সঙ্গে তা সামলানো সম্ভব।

উভয় দেশই বাণিজ্য বাড়িয়ে লাভবান হতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২১ থেকে গড়ে ৬ শতাংশ। পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি গত বছর ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ। বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬৬১ মিলিয়ন ডলার পাকিস্তানি রফতানি বনাম ৫৭ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশি রপ্তানিতে সীমাবদ্ধ।

বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে তুলা, টেক্সটাইল, চাল, সিমেন্ট, ফল ও প্রক্রিয়াজাত খাবার আমদানি করতে পারে। অন্যদিকে পাকিস্তান পেতে পারে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, কেমিক্যাল ও তামাকজাত দ্রব্য।

দিলওয়ার বলেন, দুই দেশের জনসংখ্যা মিলিয়ে ৪৩০ মিলিয়ন, যা পশ্চিম ইউরোপের দ্বিগুণ।

ইতিহাসের ক্ষত এখনো রয়ে গেছে
দু’দেশের সবচেয়ে বড় বাধা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার।

ঢাকা এখনো পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা প্রত্যাশা করে। পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসরত দুই লাখেরও বেশি উর্দুভাষী মুসলমানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে। ১৯৪৭–এর পর তারা মূলত বিহার থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ তাদের পূর্ণ অধিকার দেয়নি ও পাকিস্তানের কাছে তাদের গ্রহণ করার দাবি জানিয়ে আসছে, যা ইসলামাবাদ মানতে নারাজ।

এছাড়া আছে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানোর প্রতিশ্রুত সাহায্যের বিষয়, যা বাংলাদেশ এখনো দাবি করে। ইতিহাসবিদরা বলেন, এ ঘূর্ণিঝড়ে তিন লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা স্বাধীনতা আন্দোলনের বড় অনুঘটক হয়েছিল।

তবু পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরীর মতে, উভয় দেশের মানুষই এখন পুনর্মিলন চায়।

তিনি বলেন, ১৯৭১–এর ঘটনাগুলো নিয়ে পাকিস্তানের মানুষও বাংলাদেশের মানুষের মতোই ব্যথিত। আমি মনে করি, এ বেদনা অভিন্ন, আর দুই দেশের মানুষই এখন সামনে এগোতে চায়।

তবে দিলওয়ার হোসেন সতর্ক করে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে রাজনৈতিক সমর্থন থাকলেও ১৯৭১–এর ইস্যুগুলো এখনো উন্নতির পথে বড় বাধা।

মনে রাখা জরুরি, হাসিনার পতনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মানুষের মনোভাব বদলায়নি। পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা ও অতীতের ক্ষত নিরাময়ের প্রত্যাশা এখনো রয়ে গেছে।

তবে তিনি এটাও যোগ করেন, “বাংলাদেশ অতীতে আটকে থাকতে চায় না। কূটনীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দুই দেশ অর্থনীতি, কূটনীতি ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতা বাড়াতে পারে, আর একই সঙ্গে অতীতের ক্ষত নিরাময়ের প্রচেষ্টাও চালিয়ে যেতে পারে। সূত্র: আল জাজিরা

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়