Apan Desh | আপন দেশ

ভূমি মন্ত্রণালয়ের লোকাল টেন্ডারে কারস্বার্থে বিদেশি কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৮:২৪, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভূমি মন্ত্রণালয়ের লোকাল টেন্ডারে কারস্বার্থে বিদেশি কোম্পানি

ফাইল ছবি

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিএলআরএস-এর ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ নামক প্রকল্পের নামে বিদেশি কোম্পানিকে আনা হয়েছে। ওই কোম্পানিকে জায়েজ করতে প্রথম টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। নতুন শর্ত যুক্ত করে দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় দফার টেন্ডার। আর এ ঘটনায় পর্দার আড়ালে রশি টানছেন পলাতক শেখ হাসিনার ভাই শেখ সেলিম।

তারই ঘনিষ্ঠজন তামজিদকে এ প্রকল্পের কাজ দিতে মরিয়া অধিদফতরের ডিজিসহ চক্রটি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাত দিনেই দেখিয়েছেন নয়া কারিশমা। ফলে টেন্ডার প্রক্রিয়াকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।  

স্থানীয় টেন্ডারে অংশ নেয়া ১৭৮টি কোম্পানির মধ্যে কেবলমাত্র ‘টিলার’ কোম্পানি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ উদ্যোগে (JV) অংশগ্রহণ করে শর্ট সিলেকশন হয়েছে। এর পরপরই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, যোগসাজশ ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন<<>> আওয়ামী-আলতাফ সিন্ডিকেটে বন্দি শিক্ষা প্রকৌশল!

ফ্যাসিস্ট ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের একটি অংশ অভিযোগ করেছে, টিলার হচ্ছে স্বৈরাচার আওয়ামী ঘরানার সহযোগী কোম্পানি, যাকে ঘিরে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা চলছে। তাদের দাবি, এটি শুধুমাত্র একটি টেন্ডার নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বার্থ, আইন ও জাতীয় নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করার এক স্পষ্ট উদাহরণ।

ডিপিপি শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ

প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (DPP) অনুমোদিত হয়েছিল লোকাল টেন্ডারের শর্তে। প্রথম টেন্ডারে শর্ত বহাল থাকলেও মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার আহবান করা হয়। নতুন টেন্ডারে হঠাৎ করেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণকে ‘এনকারেজেবল’ করা হয়।

অভিযোগকারীরা বলছেন, এ পরিবর্তন পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ২০০৮ (PPR 2008) এর সরাসরি লঙ্ঘন। এছাড়া শর্ত পরিবর্তনের পরও সব অংশগ্রহণকারী কোম্পানিকে সঠিকভাবে অবহিত করা হয়নি। এর ফলে স্বচ্ছতা ও ন্যায্য প্রতিযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

ছবি- ১) ডিপিতে এ প্রকল্পের কাজে অনুৎসাহিত করতে বলা হয়। ছবি-২) নির্দেশনামতে প্রথম টেন্ডারে বিদেশিদের অনুৎসাহিত করা হয়। ছবি-৩) কিন্তু সাত দিনের ব্যবধানে ফের টেন্ডার করা হয় তাতে বিদেশি কোম্পানীকে উৎসাহিত করা হয়।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা

প্রচলিত আইন অনুযায়ী, বিদেশি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে টেন্ডারে অংশ নিতে চাইলে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (BIDA) অনুমোদিত বিনিয়োগ নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN) ও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এসব শর্ত মানা হয়েছে কি না, তা নিয়ে রয়েছে গভীর সংশয়।

অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন

সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রকল্পে বিদেশি কোম্পানিকে অর্থ প্রদান করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রায় টাকা পাঠাতে হবে। এতে অর্থ পাচার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ ও রূপান্তরজনিত জটিলতার ঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ড্রোন ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ ড্রোন পরিচালনা করলে সেনা ঘাঁটি, সরকারি ভবন ও টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর উপর দিয়ে উড্ডয়ন করতে হবে। এতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সরাসরি হুমকির মুখে পড়বে বলে অভিযোগকারীদের দাবি।

‘টিলার’ কোম্পানি ঘিরে বিতর্ক

অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘টিলার’ কোম্পানির মালিক গোপালগঞ্জের তামজিদ পলাতক আওয়ামী লীগের মাফিয়া সাবেক মন্ত্রী শেখ সেলিমের ঘনিষ্ঠজন। প্রথম টেন্ডারে বিদেশি অংশগ্রহণ ‘নন-এনকারেজেবল’ উল্লেখ থাকলেও মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় টেন্ডারে তা ‘এনকারেজেবল’ করা হয়। এতে অজ্ঞাতস্থানে পলাতক শেষ সেলিমের ক্যারিশমা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ১৭৮টি কোম্পানির মধ্যে কেবল টিলারই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে অংশ নিয়ে শর্ট সিলেকশন হওয়ায় অসঙ্গতি, স্বজনপ্রীতি ও যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন<<>> ন্যাশনাল লাইফের তদন্তে দুদক: ২১শ’ অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন, ৭১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ-পাচার

এছাড়া তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাবে প্রোকিউরমেন্ট কনসালট্যান্ট নিয়োগে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালের পরীক্ষায় তৃতীয় হওয়া সাইফুর রশীদকে নিয়োগ দেয়া হয়, অথচ প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বাদ দেয়া হয়। অভিযোগ আরও রয়েছে,ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাহীন। নিয়োগপ্রাপ্ত কনসালট্যান্ট পূর্বে প্রতিযোগী একটি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

তদন্ত দাবি

অভিযোগকারীরা মনে করছেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ কেবল আইনি সীমাবদ্ধতা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি। তাদের দাবি, টিলারকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র দেশীয় কোম্পানিগুলোকেই সুযোগ দেয়া উচিত। একই সঙ্গে গোটা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্তে আনতে হবে। অন্যথায় জাতীয় সম্পদ ও জনস্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যা জানাল কর্তৃপক্ষ

অভিযোগ ও অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে ভুমি অধিদফতরের মহাপরিচালক সাইফুল ইসলামকে ০১৭২৭২-----১৮০ নম্বরে কল করা হলেও সাড়া দেননি। ক্ষুদে বার্তারও সাড়া মিলেনি। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মোঃ শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রকল্পটির আমি আসার আগের। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

কনসালট্যান্ট সাইফুর রশীদ তার নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, আমি কতো নম্বরে ছিলাম তা জানি না। আমাকে নিযুক্ত করা হয়েছে সেটাই জানি। প্রকল্প সম্পর্কে আমাদের কথা বলার এখতিয়ার নেই, এ বিষয়ে পকিল্প পরিচালকই ভালো জানেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়