Apan Desh | আপন দেশ

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর বাণিজ্যিক কূটনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১৯ মে ২০২৫

আপডেট: ১০:১০, ১৯ মে ২০২৫

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর বাণিজ্যিক কূটনীতি

ছবি: সংগৃহীত

চার দিনের ঝটিকা সফরে মধ্যপ্রাচ্যে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সফরে সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে অনেকগুলো চুক্তি করেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ব্যবসা, বাণিজ্য ও অস্ত্র ও প্রযুক্তি। বিশ্লেষকদের ধারনা এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শুধু লাভজনক বিনিয়োগে আঁকা এক কূটনৈতিক সফর।

এ সফরের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল সিরিয়ার ইসলামপন্থি নেতা আহমেদ আল শারার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ। অথচ শারাকে ইসরায়েল ‘সুট পরা আল কায়েদার’ একজন সন্ত্রাসী বলে মন্তব্য করেছে। সে শারার সঙ্গেই করমর্দন করেছেন ট্রাম্প। 

সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় রিয়াদে শারার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তার (শারা) মধ্যে সম্ভবনা রয়েছে, তিনি একজন প্রকৃত নেতা। বৈঠকে ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র, ব্যবসা এবং প্রযুক্তিসহ একগুচ্ছ চুক্তি করেন। 

সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ট্রাম্পের চারদিনের ঝড়ো সফর শুধু লাভজনক বিনিয়োগে আঁকা এক কূটনৈতিক প্রদর্শনীই নয়। তিনজন আঞ্চলিক এবং দুজন পশ্চিমা সূত্রের মতে, ট্রাম্পের সফর মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন সুন্নি-নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থার উত্থানকে সিলমোহর দিয়েছে। ফলে ইরান প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছে সেখানে ব্যাপক ছেদ পড়েছে এবং ইসরায়েলকে একেপেশে করে দিয়েছে। 

সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের চাওয়া সত্ত্বেয় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল। ফলে নেতানিয়াহুকে পাশ কাটিয়ে ট্রম্প সফরটি করেন। যদিও ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদেশি কোনো নেতা হিসেবে নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফর করেন।

সূত্রগুলো বলছে, এই সফরের বার্তা স্পষ্ট, নেতানিয়াহু তার ডানপন্থি এজেন্ডার কারণে শর্তহীনভাবে  যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আর পাবে না। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে নিকটপ্রাচ্য বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ডেভিড শ্যাংকার বলেন, ‘বর্তমান মার্কিন প্রশাসন নেতানিয়াহুর প্রতি খুবই হতাশ, আর সে হতাশা এখন প্রকাশ পাচ্ছে। কারণ তারা আদান-প্রদানে বিশ্বাসী। অন্যদিকে নেতানিয়াহু তাদের এ মুহূর্তে কিছুই দিচ্ছে না। 

সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এখনই ইসরায়েলকে ত্যাগ করছে না। কারণ ইসরায়েল এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র, যার প্রতি ওয়াশিংটনের গভীর সমর্থন রয়েছে। কারণ অনেক বিষয়ে তারা একাত্মতা পোষণ করে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন নেতানিয়াহুকে এ বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে এবং তারা চায় না নেতানিয়াহু সে স্বার্থে বাধা হয়ে দাঁড়াক। 

শুধু গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নেতানিয়াহুর আপত্তি ছিল না বরং পারমাণকি কর্মসূচি নিয়ে ওয়াশিংটন ইরানের সঙ্গে আলোচনা না করুক সেটাও চেয়েছিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর খুবই বিরক্ত হয়। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। 

নেতানিয়াহুর কার্যালয় এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। এছাড়া ট্রাম্পের আঞ্চলিক সফর নিয়ে তারা প্রকাশ্যে কোনো বিবৃতিও দেয়নি। তবে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্প ইসরায়েলের বন্ধু।

জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট বলেন, আমরা আমাদের মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছি যাতে গাজায় বাকী জিম্মিদের মুক্ত করা যায়। এছাড়া ইরান যেন কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র না পায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে চেষ্টা চলছে। 

সূত্রগুলো বলছে, জনসমক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী বলে উপস্থাপন করলেও গাজা-ইরান ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একমত না হওয়ায় নেতানিয়াহুর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ছয়জন আঞ্চলিক ও পশ্চিমা সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্পের আঞ্চলিক সফরের আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। বিশেষ করে এপ্রিল মাসে যখন নেতানিয়াহু দ্বিতীয়বারের মতো ওয়াশিংটন সফরে যান ইরানের পরমাণু স্থাপনায় সামরিক হামলার জন্য ট্রাম্পের সমর্থন চাইতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে পারেন, ট্রাম্প সামরিক পদক্ষেপ নয় বরং কূটনৈতিক পথ বেছে নিয়েছেন।

ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে তেহেরানের ওপর হার্ডলাইনে থাকা নেতানিয়াহু হতচকিত হয়ে পড়েন। কারণ ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি জানতে পারেন, ওয়াশিংটন ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসছে। 

এরপরেই ট্রাম্প ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। ইসরায়েলকে পাশ কাটিয়ে সিরিয়ার নতুন ইসলামিক নেতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং উপসগারীয় অঞ্চলে সফর করেন ট্রাম্প। সূত্রগুলো বলছে, এসব ঘটনাই দেখিয়েছে যে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগতভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটি কীভাবে টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়