ছবি : আপন দেশ
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় চিকিৎসক ও রোগীর পাশাপাশি ওষুধ বিক্রেতাদেরকেও সচেতন হতে হবে। রোগীর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক লিখতে পারবেন না। এমনকি প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকের লেখা এন্টিবায়োটিকের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সরকারি উদ্যোগে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ (১৮-২৪ নভেম্বর) উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
‘এখনই পদক্ষেপ নিন, আমাদের বর্তমানকে রক্ষা করুন, আমাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করুন’—এ স্লোগান নিয়ে বিএমইউতে বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ শুরু হয়েছে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের ক্রমবর্ধমান হুমকি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা, দায়িত্বশীলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম ও স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ রক্ষায় কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী এর আয়োজন করা হয়।
এর অংশ হিসেবে বিএমইউর মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের উদ্যোগে এবং পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ, শিশু বিভাগ, ফার্মাকোলজি বিভাগ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে র্যালি, সংক্ষিপ্ত সমাবেশ, ডাক্তার ও রোগীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ ও সচেতনামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ আয়োজনে ‘যখন চাই তখন নয়, চিকিৎসকের পরামর্শেই এন্টিবায়োটিক’—কথাগুলো জোরালেভাবে উচ্চারিত হয়। এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমইউর ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
বিএমইউর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার।
আরও পড়ুন<<>>ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৯২
আরও বক্তব্য রাখেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, শিশু বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান, ডিন অধ্যাপক ডা. এম আবু হেনা চৌধুরী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. মুরাদ সুলতান।
র্যালি এবং সমাবেশ শেষে সি ব্লকে অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের নেতৃত্বে কর্মরত চিকিৎসকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয় এবং চর্মরোগ বিদ্যা বিভাগের ক্লাস রুমে চিকিৎসক ও ছাত্রদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
র্যালিপূর্বক সমাবেশে অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, মানবদেহে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বে বহু মানুষ এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে মৃত্যুবরণ করছে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হলে রোগীর রোগ নিরাময়ের সময় এন্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে মৃত্যুর মতো ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়বে। তাই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সকে এখনই মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য চিকিৎসককে ও রোগী উভয়কেই সচেতন হতে হবে, সচেতন হতে হবে। ফার্মিসিতে ওষুধ বিক্রেতাদেরকেও সচেতনতার আওতায় আনতে হবে। সুনির্দিষ্ট কারণ ও রোগীর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক লিখতে পারবেন না।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক লিখলে তিনি কেন এন্টিবায়োটিক দিলেন সে কথা জিজ্ঞাসা করার অধিকার রোগীর আছে। ফার্মেসি থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই এন্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না, এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. মুরাদ সুলতান বলেন, সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। তাই যাতে সংক্রমণই প্রতিরোধ করা যায় সে জন্য হাত ধোয়া এবং মাস্ক পড়ার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সানজিদা সেতু, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা ইসলাম রুপা, শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জেসমিন মোর্সেদ।
আপন দেশ/জেডআই





































