Apan Desh | আপন দেশ

শিক্ষকের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের প্রতিবাদ ইবির দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের

ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

শিক্ষকের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের প্রতিবাদ ইবির দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের

ছবি: আপন দেশ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিভাগের প্রতি অপর বিভাগের অধ্যাপকের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ফোকলোর স্টাডিজ ও ফাইন আর্টস বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (৩০ নভেম্বর) শহীদ জিয়াউর রহমান হলে এক আলোচনা সভায় আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী ইবিতে ফোকলোর, ফাইন আর্টস এধরণের সাবজেক্ট প্রতিষ্ঠাই করা হয়েছিল ইসলামি মূল্যবোধকে ধ্বংস করার জন্য বলে মন্তব্য করেন। তার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ক্যাম্পাসজুড়ে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (০১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে পৃথকভাবে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে ফাইন আর্টস ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। 

আরও পড়ুন<<>>ইবিতে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

এদিন সকালে মুখে বেধে ও টেপ লাগিয়ে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ফাইন আর্টস বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের হাতে “ব্যাঙ্গ করেন???" "এত সমস্যা তো সমাধান কী?”, “যা শুরু করেছেন তা শেষ করে যান”—লেখাযুক্ত প্ল্যাকার্ড ও ব্যঙ্গচিত্র দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষা ও শিল্পচর্চাকে অপমান করে দেয়া মন্তব্য একজন শিক্ষকের মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমরা যেহেতু শিল্পী তাই শিল্পীর ন্যায় মৌন প্রতিবাদ জানিয়ে গেলাম।

এর কিছুক্ষণ পরেই মানববন্ধন করে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, কোনো বক্তব্য দেয়ার আগে তার যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা উচিত। সামাজিক মাধ্যম সহ অনেক জায়গায় ফোকলোরকে ‘নাস্তিকতার চর্চার বিভাগ’ বলা হয়েছে—যা সম্পূর্ণ অসত্য, ভিত্তিহীন ও বিদ্বেষপ্রসূত। ফোকলোর ধর্ম-বিরোধী নয়; বরং লোকজ সমাজ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও লোক-ধর্মের বিস্তৃত গবেষণা নিয়ে গঠিত একটি জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র। পাঠ্যক্রমে বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ নানাবিধ বিষয়ের পাশাপাশি ইসলামিক স্টাডিজের একটি পূর্ণাঙ্গ কোর্সও পড়ানো হয়। এখানে কোথাও ধর্ম অবমাননা বা নাস্তিকতা চর্চার সুযোগ নেই।

২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সীমা বলেন, ফোকলোর হচ্ছে এমন একটি বিভাগ যেখানে মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতির গভীরতম স্তরগুলো নিয়ে পড়াশোনা করা হয়। ভাষা, পোশাক, খাদ্য, আচার, ধর্ম ও উৎসব—সবই এখানে গবেষণার অংশ। কিন্তু কোথাও এমন কোনো বিষয় নেই যেখানে ধর্মকে অবমাননা করা হয়। যারা এমন অভিযোগ করেন, তারা ফোকলোরের কোনো ধারণাই রাখেন না। আমাদের বিভাগকে ইচ্ছাকৃতভাবে হেয় করার চেষ্টা আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক এস এম সুইট বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যদি প্রতিটি বিভাগের অভিভাবক হয়ে থাকে তাহলে তার কাছে সব বিভাগ সন্তানতুল্য হওয়ার কথা কিন্তু মনে হচ্ছে এ দুই বিভাগকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের পরেও প্রশাসনের কোন বিকার নেই। তারা ফাইন আর্টস ও ফোকলোর বিভাগকে সৎ সন্তান হিসেবে দেখেন কিনা সংশয় হয়৷ আপনাদের আত্মসম্মানে যদি কেও আঘাত হানার চেষ্টা করে আপনারা তাদের টুঁটি চেপে ধরবেন।

পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ড নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর কাছে তিন দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা৷ দাবিগুলো হচ্ছে- ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী বা শিক্ষার্থী ফোকলোর বিভাগকে ‘নাস্তিকতা’ বা স্পর্শকাতর বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নির্দেশনা জারি করবে এবং ফোকলোর বিভাগ বা এর সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা হয়রানি হলে প্রশাসন নিজ উদ্যোগে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

আপন দেশ/এসআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়