
ফাইল ছবি
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানিপণ্য চারকোল দীর্ঘদিন আওয়ামী সিন্ডিকেটের কবলমুক্ত থাকার পর আবারও সংকটে পড়তে যাচ্ছে। সাবেক মন্ত্রী মির্জা আজমের সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে না থাকলেও এবার অদৃশ্য হস্তক্ষেপে হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিসিএমইএ) ‘আমি, ডামি নির্বাচন’।
সংগঠনটির ২০২৫ সালের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন আগামী ৮ মার্চ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২০২৪ সালের মত ‘আমি, ডামি নির্বাচন করতে চাচ্ছে। এমন অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদ।
যদিও নির্বাচনের মাত্র একমাস সময় থাকলেও বৈষম্যবিরোধী পরিষদের প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চলছে নানা ধরনের চক্রান্ত ও কৌশল।
বৈষম্যবিরোধী ব্যবসায়ী পরিষদ অভিযোগ করে, পাঁচটি সম্পাদকীয় পোস্ট ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মোট ১১ জন প্রার্থী আবেদন করেন। একজনের লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় তার প্রার্থীতা বাতিল হয়। বাকি ১০ জনের মধ্যে ৬ জনের প্রার্থীতা সিন্ডিকেটের স্বজনপ্রীতি থাকা আপিল বোর্ড বাতিল করে। এর মধ্যে সম্পাদকীয় পদে চারজন ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে দুইজনের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। যা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ন্যূনতম অবকাশ দেখছেন না তারা।
তিনি বলেন, কেউ নেতা নির্বাচিত হতে চাচ্ছে অথচ নির্বাচন মাঠে একক প্রার্থী থাকতে চায় এটা ফ্যাসিবাদী আচরণ। আমাদের প্রার্থীদের কোন কারণ ছাড়াই প্রার্থীতা বাতিল করছে। অথচ আমাদের বিরোধী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আতিকুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।
তিনি আরও বলেন, নিশ্চিত পরাজয় জেনেই নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে আমাদের সভাপতি প্রার্থীসহ মোট ৬ জনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। এভাবে খালি মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে হতে হবে।
নাটকীয় প্রক্রিয়ায় প্রার্থীতা বাতিল
বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিসিএমইএ) দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ছোট ভাই জিল্লুর রহমান শিপনের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে সংগঠনে অনুপস্থিত রয়েছেন মির্জা শিপন।
তার অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট জয় হোসাইনের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও মির্জা শিপনের সমর্থিত সিন্ডিকেট ১৪ ডিসেম্বর একটি বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) ডেকে নিজেদের পছন্দমতো নির্বাচন ও আপিল বোর্ড গঠন করে। এরপর ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন>>>মির্জা আজমের ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণে চারকোল রফতানি
নির্বাচনে বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে ১১ জন প্রার্থী হলেও ২ ফেব্রুয়ারি তাদের তিনজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। পরে একজন স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালে বাকি দুজন তাদের বৈধতা ফেরাতে আপত্তি জানান এবং ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল করেন। তবে প্রতিপক্ষ তাদের বৈধ সদস্যদের মনোনয়নেও আপত্তি তোলে।
৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ড বৈষম্যবিরোধী পরিষদের পাঁচটি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে চারজনের এবং দুই কার্যনির্বাহী সদস্যের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করে। এছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্যের দুজনের মনোনয়ন বাতিল করেন।
লঘু পাপে গুরু দণ্ড
নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটির জন্য শাস্তির বিধান থাকলেও যখন তুচ্ছ কারণে কঠোর শাস্তি দেয়া হয় তখন সেটাকে ‘লঘু পাপে গুরু দণ্ড’ বলা হয়। এমনই এক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী জয় হোসাইনসহ ছয়জন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ডে জয় হোসাইনের মনোনয়ন বৈধতা নিয়ে শুনানি হয়। অভিযোগ করা হয় যে, তিনি শুনানিতে নিজে না এসে আইনজীবী পাঠিয়েছিলেন। তবে তার পক্ষে প্রতিনিধিত্বের কোনো লিখিত অনুমোদনপত্র দাখিল করা হয়নি। একই কারণ দেখিয়ে সহ-সভাপতি-২ প্রার্থী হিরু মুন্সি, সহ-সভাপতি-৩ সায়হাম খান, অর্থ সচিব সালাউদ্দিন মিয়া ও আরও দুই সদস্যের মনোনয়ন চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়।
আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দিয়েছে। বোর্ডে ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন মিলন ও জাকির হোসেন, পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ ২০২৫-এর চেয়ারম্যান ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল হক আব্বাসী।
মনোনয়ন বাতিল ব্যক্তিদের অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী জয় হোসাইন তার মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে বলেন, আমাদের দুইজন প্রার্থীকে ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ বৈধতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি শুনতে পেলাম আমাদের প্রার্থীতা অবৈধ করা হয়েছে।
জয় হোসাইন আরও বলেন, উত্তরা ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক পদে আমি ছিলাম না, অন্য একজন ছিল। এছাড়া তার ছবিটি শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছি বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু সে ছবিটি এডিট করা ছিল। যা সহজেই বোঝা যায়।
তিনি আরো বলেন, আপিল বোর্ড বলেছে আমি শুনানিতে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু আমাকে যদি শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়, তাহলে তাদের উচিত ছিল আমাকে মোবাইল কল বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জানানো। আমি তো শুনানির বিষয়ে আগে কিছু জানিনি। তবে আমার পক্ষে আইনজীবী উপস্থিত ছিল। যদি এমনভাবে নির্বাচন হয়, তবে তা অবৈধ হবে। আমি উচ্চ আদালতে যাবো।
এদিকে অর্থ সচিব প্রার্থী সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, আমাদের অ্যাসোসিয়েশনে আগে কখনো নির্বাচন হয়নি। এবার আমরা চেয়েছিলাম একটি উৎসবমুখর নির্বাচন করতে। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ এককভাবে মাঠে খেলতে চায় ও নির্বাচনকে ভয় পায়।
তিনি বলেন, আমার মনোনয়ন নাকি ফরমে কাটাকাটি হওয়ায় বাতিল করেছে। ফরমে কাটাকাটির জন্য কোন প্রার্থীর কি নির্বাচন থেকে দূরে রাখার সুযোগ রয়েছে?। এ নির্বাচন হলে তা হবে প্রহসনমূলক আমি-ডামি নির্বাচন।
বৈষম্যবিরোধী বিপরীত পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আতিকুর নিয়ে প্রশ্ন!
বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করছেন তাদের বিপরীত পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আতিকুর ছিলেন আওয়ামী লীগের খুবই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। তার সঙ্গে সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে ছবি রয়েছে।
একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের জয়েন সেক্রেটারি বাহাউদ্দিন নাসিমের সঙ্গেও পাশাপাশি দাঁড়ানো ছবিতে দেখা যায়। সাবেক পাট মন্ত্রী মির্জা আজম ও জাহাঙ্গির কবির নানকের সঙ্গেও একই অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তার উপস্থিত থাকা ডেলিগেট কার্ড পাওয়া গেছে। যেখানে তার নাম ও ঠিকানা লেখা রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের দাবি, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতায় মনোনয়ন পত্র বাতিল হলে প্রথমেই বাতিল হওয়ার কথা আতিকুর রহমানের।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।