Apan Desh | আপন দেশ

ইসলামী ব্যাংকে জলিলের সেই অনিয়মের সিদ্ধান্ত পরিচালনা বোর্ডে বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ১ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২১:২২, ২ জানুয়ারি ২০২৫

ইসলামী ব্যাংকে জলিলের সেই অনিয়মের সিদ্ধান্ত পরিচালনা বোর্ডে বাতিল

ছবি: আপন দেশ

ইসলামী ব্যাংক পর্ষদের নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের স্বজনপ্রীতি করা সেই ঋণের প্রস্তাব বাতিল করেছে ব্যাংকটির পরিচালনা বোর্ড। তবে অনিয়মের নেপথ্য কারিগর আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত ২৯ ডিসেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বজনপ্রীতির বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যাংকসূত্রে এ তথ্য মিলেছে।     

ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) ছিলেন মো. আব্দুল জলিল। এরপর আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে যোগদান করেন। উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে ২০১৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন জলিল। এরপর তিনি ইসলামী ব্যাংকের ইসলামপুর শাখার গ্রাহক ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকিং বিষয়ক পরামর্শক হিসেবে যোগদান করেন। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক  এম. এ. বাশার। 

আরও পড়ুন<<>> এবার জলিলে ডুবছে ইসলামী ব্যাংক!

এদিকে ৫ আগস্টের পর ইসলামী ব্যাংকের আগের মালিকরা নিয়ন্ত্রণে নেন। তাদের পছন্দের মো. আব্দুল জলিলকে ইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দায়িত্বে এসেই  আব্দুল জলিল খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে বড় অংকের ঋণ সুবিধা দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম- ট্রু ফেব্রিকস ও ইউনিফিল টেক্সটাইল মিল।

সাবেক মালিকের প্রতি অনুগত হয়ে খেলাপি ও শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ট্রু ফেব্রিকস ও ইউনিফিল টেক্সটাইল মিলের অনূকুলে ২৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেন। গত ১০ ডিসেম্বর ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটি বড় এ অংকের ঋণটি অনুমোদন দেয়। অথচ নতুন কোনো ঋণ দিতে ইসলামী ব্যাংককে নিষেধ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, বিগত সময়ে সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ করায় নতুন ঋণ দেয়ার সুযোগ নেই ব্যাংকটির। সে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নতুন ঋণ অনুমোদন করেন আব্দুল জলিল। 

নথিপত্রমতে, এ ঋণ অনুমোদনেও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছিল। প্রথমে প্রস্তাবিত ঋণের অংক ছিল ২২৫ কোটি টাকা। ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুকের নেতৃত্বাধীন আইসি কমিটি এ পরিমাণ ঋণের প্রস্তাব ইসি কমিটিতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু নির্বাহী কমিটির ২০১৭তম সভা শুরুর দিন সকালে এ ঋণের প্রস্তাব বাড়িয়ে ২৫০ কোটি টাকা করা হয়। অথচ ইসি কমিটির মেমোতেই উল্লেখ করা হয়, ব্যবসায়ী এম. এ. বাশারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দুটি এক্সিম ব্যাংকে ঋণ খেলাপি। অনাদায়ী আছে ১৮ কোটি টাকা। এছাড়া ক্রেডিট রেটিংয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদে শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা বিবেচনায় নিলে নতুনভাবে চলতি মূলধন দেয়ার সুযোগ নেই। এরপরও সকল ব্যাংকিং নিয়মাচার লঙ্ঘন করে এমন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে জোরপূর্বক ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করিয়ে নেন আব্দুল জলিল। তার নির্দেশে ওমর ফারুক তড়িঘড়ি করে ঋণপ্রস্তাব বাড়িয়ে নতুন করে নথি প্রেরণ করেন। এর ভিত্তিতে ওইদিন ২৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয় প্রতিষ্ঠান দুটির অনুকূলে।

বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আসে। গত ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে ব্যাংকটি পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিম। পরিদর্শনের পরপরই খেলাপী গ্রাহকের সেই ঋণের ফাইলটি পরিচালনা বোর্ডে পাঠায় ইসি চেয়ারম্যান।

স্বজনপ্রীতির নমুনা

ব্যাংকের দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার প্রমাণ মিলেছে আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে। নিজের মেয়ের জামাতা মো. মশিউর রহমানকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ তিনি নিজেই এ সিকিউরিটিজের একজন পরিচালক। গত ২০ অক্টোবর ব্যাংকের ৩৪৪তম পর্ষদ সভায় মশিউর রহমানের নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। আব্দুল জলিল ওই সভায় উপস্থিত থেকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিজের অনুকূলে নিয়েছেন বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। 

ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকেও ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন জলিল। নিজের মেয়ের জামাতার মামা ফায়জুল কবিরকে গত ৮ অক্টোবর জেনারেল ম্যানেজার পদমর্যাদায় নিয়োগ দিয়েছেন ফাউন্ডেশনে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ফাউেন্ডেশনের ২২৫তম সভায় এ নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এছাড়া আবুল খায়র নামের একজন আত্মীয়কে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ফাউন্ডেশনের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া ড. আলতাফ উদ্দীন নামের একজন আত্মীয়কে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের বরিশাল শাখার সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের রাজশাহী, মতিঝিল, কাকরাইলসহ বিভিন্ন শাখায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই লোকবল নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে পরিচালনা বোর্ড এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। শুধু ঋণপ্রস্তাব বাতিল করেছে। তবে সব কিছু খতিয়ে দেখাহচ্ছে-এমন দাবি সূত্রের।  

যা বলেছিলেন আব্দুল জলিলের বক্তব্য-
খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে আব্দুল জলিল বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি ৮৬ সাল থেকে চলমান। ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিন্তু প্রশ্ন উঠার পর সে সিদ্ধান্ত বাতিল করেছি। ফাইলটি বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। তারা যা ভালো মনে করে। 

বেয়াইকে (জামাতার মামা) ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনে ম্যানেজার পদমর‌্যদায় নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সেখানকার সদস্য। তিনি মিটিংয়ে থাকেন, সিদ্ধান্ত দেন। তার সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কথা আমরা বলি না।  
জামাতা মো. মশিউর রহমানকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়া প্রসঙ্গে মো. আব্দুল জলিল বলেন, তিনি (মশিউর রহমান) ইসলামি ব্যাংকেরই চাকরিজীবী। বোর্ড তাকে ওখানে পাঠিয়েছে।
আব্দুল জলিলের অভিযোগ- তার ভূমিকার কারণে ব্যাংকের ভেতরের কিছু লোক নাখোশ। নিজেকে আরও সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে বলে জানান তিনি। 

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়