ফাইল ছবি
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালসহ শীর্ষ তিন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
অপর দুই কর্মকর্তা হলো- ব্যাংকটির সাবেক এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম ও একই ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিভিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জাফর ইকবাল হাওলাদার। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া ঋণ ও নিয়োগ বাণিজ্যের নামে শত শত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ মিলেছে। গ্রাহকের টাকা ভাগাভাগি করেছে বানরের পিঠা বণ্টনের মতো।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিএফআইইউ থেকে এসব ব্যক্তিদের নামে দেশের কোন ব্যাংকে হিসাব থাকলে তা আগামী ৩০ দিনের জন্য জব্দের নির্দেশ দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাবসমূহের খোলার তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত লেনদেনের হালনাগাদ বিবরণী আগামী ৫ দিনের মধ্যে পাঠাতে হবে।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪০তম সভা হয় ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। সভায় ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল ও পরিচালক আদনান ইমামের সঙ্গে প্রবেশ করেন এক ব্যক্তি, যার হাতে ছিল একটি সাব-মেশিনগান। তমাল ও আদনান তখন ছিলেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। এ ব্যাংকের ব্যাংকের উত্তরা শাখার ছয়জন গ্রাহকের অন্তত ৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার রফতানি আয় দেশে ফেরত আসেনি। শাখাটি এ তথ্য গোপন করেছে বলে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও মামলার নথি থেকে জানা গেছে। উপরন্তু, এদের মধ্যে পাঁচটি কোম্পানি ৯০ কোটি টাকার এলসির বিপরীতে কোনো ধরনের রফতানি করেনি। যার ফলে ব্যাংকটির ডলারের খরচ হলেও তা আর ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন<<>> ন্যাশনাল লাইফের সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা মোরশেদের পেটে
২০২১ সালের ১৯ আগস্টে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে,উত্তরা শাখা গত চার বছরে এ অর্থ ফোর্সড লোন হিসেবে দেখায়। তথ্য আড়াল করার সুবিধার্থে এরপর সেটিকে সাধারণ ঋণে রূপান্তরিত করে বারবার পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এ তথ্য পাওয়া যায় ব্যাংকের সভার কার্যবিবরণী থেকে।
রফতানির অর্থ না আসার পরও রফতানি নথি জমা না দিয়েই অর্থ তুলে নেয়া হয়। এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটির সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত আছেন ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তে দেখা গেছে, দেশের ব্যাংকিং নিয়মের পাশাপাশি এনআরবিসি ব্যাংকের নিজস্ব মানবসম্পদ নীতিরও লঙ্ঘন করে ২০২২ সালে ব্যাংকটির অন্তত ২৭ জন কর্মীর বেতন বাড়ানো হয়েছে বিস্ময়কর পরিমাণে। কিছু ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ পর্যন্তও বেড়েছে বেতন।
২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এনআরবিসি ব্যাংকের একটি অফিস আদেশ অনুযায়ী, তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে একবারে ১৩টি পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়েছিল। দুই উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন বাড়ানো হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত, যা তাদের মূল বেতনের প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। অন্তত ১০ জন কর্মকর্তার বেতন ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। বাকিদের বেড়েছে ১৮ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।
এনআরবিসির অফিস আদেশে এ ২৭ কর্মকর্তার মোটা অঙ্কের বেতন বৃদ্ধিকে 'ব্যাংকের লক্ষ্য অর্জনে ব্যতিক্রমী অবদান' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
তমাল-আদনানের চ্যানেলে অনেক মন্ত্রী, এমপি আমলাদের টাকা পাচার
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক মোহাম্মেদ আদনান ইমাম। এ ব্যাংকের ব্যাংকটির এক্সিকিউটিভ কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান তিনি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ইউসিবি ব্যাংক থেকে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান অনিসুজ্জামানের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে ঋণের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তাদের অনিয়মের চিত্রগুলো তুলে আনতে বিএফআইইউসহ দুদক কাজ করছেন।
‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ হিসেবে তাকে সিআইপি মর্যাদা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর্থিক খাতের লুটেরাদের অন্দর মহলে ‘হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল’ হিসাবে পরিচিত এ আদনান মাত্র ৩ বছরেই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। কাগুজে কোম্পানি খুলে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পাচার করেছেন বিদেশে।
আরও পড়ুন<<>> রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক এখনো স্বাধীন হয়নি! পদোন্নতি মিলে তার ইশারায়
সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, শ্বশুরবাড়ির গৃহকর্মীকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে খোলা ‘টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানি’ নামে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ তুলে আত্মসাৎ করেছেন আদনান। আর ১২০ কোটি টাকার সরকারি কাজের বিপরীতে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ তুলে পাচার করেছেন বিদেশে।
অভিযোগ আছে, আদনান ইমামের এ লুটপাটের সহযোগী ছিলেন-এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল, ইউসিবি ও পদ্মা ব্যাংকের কয়েকজন প্রভাবশালী। এরা মিলে মূলত ব্যাংক ও শেয়ার বাজারে লুটপাট এবং বিদেশে অর্থ পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। এ সিন্ডিকেটের হাত ধরে দুবাই ও যুক্তরাজ্যে খোলা বহু কোম্পানির মাধ্যমে বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তা বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানেও উল্লিখিত তথ্য পাওয়া গেছে।
আপন দেশ/এবি
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































