Apan Desh | আপন দেশ

ফসলের মাঠে কমছে কাকতাড়ুয়া, বাড়ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:২২, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৭:২৪, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

ফসলের মাঠে কমছে কাকতাড়ুয়া, বাড়ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

ফাইল ছবি

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফসলি জমিতে কাকতাড়ুয়া ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে। একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিভিন্ন ধরনের কৃষিক্ষেতে। একসময় ধানক্ষেত, সবজিক্ষেত কিংবা শস্য ভূমিতে পাখির আক্রমণ ঠেকাতে কাকতাড়ুয়া ছিল কৃষকের প্রধান হাতিয়ার। এখন আধুনিক প্রযুক্তির কারণে এ ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি হারিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় স্থানীয় কৃষকরা।
গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় একসময় ধান ও সবজি ক্ষেতে কাকতাড়ুয়ার দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখন সে দৃশ্য অনেকটাই কমে গেছে। পাখির উপদ্রব ঠেকাতে কৃষকের ঐতিহ্যবাহী এ পদ্ধতির স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ফসল রক্ষায় বাঁশ, পুরোনো কাপড়, নারকেল পাতা ও টিনের টুকরা, মাটির পাতিলে চুন ব্যবহার করে এবং নারকেল পাতার সাহায্যে তৈরি কাকতাড়ুয়া বানানো হতো। যা হাওয়ায় দুলে শব্দ তৈরি করতো, নড়াচড়া তৈরি করায় পাখিদের দূরে রাখত ও ক্ষেত নিরাপদ থাকত। এখন উন্নত প্রযুক্তির কারনে অনেকেই কাকতাড়ুয়া বানাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতির সুবিধা থাকলেও কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় নি। 

আরও পড়ুন<<>>গণহত্যা দিবসে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের শ্রদ্ধা নিবেদন

উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের কৃষক নুরুল ইসলাম কাজী বলেন, কাকতাড়ুয়ার পরিবর্তে এখন সৌরচালিত সাউন্ড ডিভাইস, প্রতিফলিত ফিতা, আলোর ঝিলিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো দূর থেকে পাখি শনাক্ত করে শব্দ বা আলো দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পাখির আক্রমণ ঠেকাতে কৃষকের দীর্ঘদিনের ভরসা এ ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি ক্রমেই জায়গা হারাচ্ছে আধুনিক যন্ত্রের কাছে।

উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ও নাছরিন সুলতানা বলেন, সকল প্রকার পাখি ফসলের ক্ষতি করে না। কাকতাড়ুয়া এখনও অনেক কৃষকরা ব্যবহার করে থাকেন। তবে আধুনিক যন্ত্রের কার্যকারিতা বেশি হওয়ায় এর ব্যবহার কমে গেছে। তারপরও ঐতিহ্য ধরে রাখতে অনেকেই কাকতাড়ুয়া বানাচ্ছেন। অনেক কৃষক এখনও সামান্য খরচে কাকতাড়ুয়া স্থাপন করে ফসল রক্ষা করছে। বিশেষ করে গরিব ও প্রান্তিক চাষিদের ক্ষেতেই এ ঐতিহ্য এখনও টিকে আছে।

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান মুঠোফোনে বলেন, কাকতাড়ুয়া পরিবেশবান্ধব হলেও এর কার্যকারিতা আগের মতো এখন আর নেই। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এর চাহিদা কমে গেছে। শষ্য জাতীয় ফসলের জমিতে নানারকম কীটনাশক ব্যবহার, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা গ্রহন, উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণ করা, আধুনিক বালাই সহনশীল জাতের আবাদ ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পোকার আক্রমন কম হচ্ছে। পোকা কম থাকলে পাখিও কম আসে। ফলে সনাতন এ কাকতাড়ুয়ার কার্যকারিতা কম। তাই পাখি তাড়াতে সনাতন পদ্ধতি কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘স্মার্ট কাকতাড়ুয়া’ উদ্ভাবনের প্রয়োজন রয়েছে।

আপন দেশ/এসআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়