ফাইল ছবি
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। রাতটা ছিল মৃত্যুপুরীর মতো। বিভীষিকাময়। প্রলয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ মুহূর্তেই লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় বিস্তীর্ণ জনপদ। প্রাণ হারিয়েছিল হাজারও মানুষ, ধ্বংস হয়েছিল ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু ও মানুষের জীবনের সব স্বপ্ন। ১৮ বছর পেরিয়েও সে রাতের তাণ্ডব আজও ভুলতে পারেন না স্বজনহারা উপকূলবাসী। নভেম্বর এলেই বুকের ভেতর কেঁপে ওঠে সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ, রাঙ্গাবালি, সদর, দশমিনা, গলাচিপা, কলাপাড়া ও বাউফল- সব উপজেলাতেই এখনও সে ভয়াল রাতের ক্ষতচিহ্ন তুলে ধরে মানুষজন। কেউ হারিয়েছেন বাবা-মা, কেউ সন্তানকে, কেউবা হারিয়েছে পুরো পরিবার। প্রতিটি এলাকা যেন বয়ে বেড়াচ্ছে একেকটি বেদনার ইতিহাস।
গলাচিপার চরকাজল ইউনিয়নের হালিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সেদিন রাতে আমার দুই ছেলে আর স্বামীকে সাগর কেড়ে নিয়েছিল। আজও ঢেউয়ের শব্দ শুনলেই মনে হয়- আবার সিডর আসছে!
সদর উপজেলার ছোট বিভাগ ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের সত্য দাস বলেন, সিডরের রাতে শিশু সন্তান সহ তিন সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে এ পায়রার স্রোত। তাদের কথা মনে পড়লে এখনো পাজর ভেঙ্গে যায়। তাই এ পায়রারপাড় থেকে স্বরে এসেছি অনেক দূরে। তিনি আরও বলেন, নতুন ঘর হয়েছে, কিন্তু মন থেকে সে ভয় কখনো যায় না। নভেম্বর এলেই মনে পড়ে- সাগর নদীর ঢেউ যেন আবার তেড়ে আসছে।
সরকারি হিসেবে সিডরে পটুয়াখালী সহ সারাদেশে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জন। তবে বেসরকারি হিসাব বলছে- মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল শত শত গ্রাম, হাজার হাজার গবাদিপশু এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সিডরের পর বহু প্রকল্প নেয়ার ঘোষণা এলেও আজও উপকূলে নির্মাণ হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ।
উপকূলের মানুষের অভিযোগ- জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবের মধ্যেও বারবার ভাঙন ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি নিয়ে তারা অসহায়ভাবে বসবাস করছেন। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়তে হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাকিব বলেন, জেলায় ৩৭টি পোল্ডারের আওতায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো মেরামতের কাজ চলমান। টেকসই নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ভাঙন প্রতিরোধে নতুন প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষা শেষে নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।
১৮ বছর পরও উপকূলবাসীর হৃদয়ে রয়ে গেছে সেই রাতের বেদনা, শোক আর হাহাকার। তাদের একটাই প্রত্যাশা- টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে আরেকটি সিডরের কালো অধ্যায় থেকে যেন রক্ষা পায় পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চল।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।





































