বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউ চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা। তাকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করানো হচ্ছে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে চিকিৎসা বোর্ডের সদস্য ডা. জিয়াউল হক বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস দেয়া হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই তার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি দেখা দেয়।
তিনি জানান, বয়সজনিত দুর্বলতা ও একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত থাকায় একসঙ্গে সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
চিকিৎসা বোর্ডের আরেক সদস্য ডা. জাফর ইকবাল খালেদা জিয়ার অবস্থাকে ‘ক্রিটিক্যালি ইল’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমরা সবার কাছে দোয়া চাইছি। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি এখনো সিসিইউতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চিকিৎসা বোর্ডের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। “তিনি প্রবীণ এবং দীর্ঘদিনের নানা রোগ এই বয়সে আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। কিছু রোগ আগে যথাসময়ে পুরোপুরি চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। ফলে একাধিক জটিলতা থেকে সেরে ওঠা এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে- বলেন তিনি।
ওই চিকিৎসক আরও জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা কখনো সামান্য উন্নতি, আবার কখনো অবনতির মধ্যে ওঠানামা করছে। তাকে সার্বক্ষণিক নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং প্রতিদিন নতুন করে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে মাকে দেখেন। তিনি প্রতিদিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি শেষে নিয়মিত হাসপাতালে গিয়ে মায়ের শয্যার পাশে দীর্ঘ সময় কাটাচ্ছেন। সোমবারও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় কাটিয়ে সরাসরি হাসপাতালে যান তিনি।
পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তারেক রহমান মায়ের দ্রুত সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার চিকিৎসা কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার।
শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত চিকিৎসা বোর্ডের বৈঠক শেষে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, “তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল ও সংকটাপন্ন। আল্লাহর অশেষ রহমত এবং চিকিৎসকদের নিরলস প্রচেষ্টায় যদি তিনি এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেন, তাহলে কিছুটা ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যেতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরেই বেগম খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদরোগ ও চোখের সমস্যাসহ একাধিক জটিলতায় ভুগছেন। বাসায় অবস্থানকালে সম্প্রতি তার শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর ও তীব্র শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিলে ২৩ নভেম্বর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরবর্তী চিকিৎসা পরীক্ষায় ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও কিডনির দ্রুত অবনতি ধরা পড়লে ২৭ নভেম্বর তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা তদারকিতে ৩০ জন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডটি প্রতিদিন বৈঠক করে রোগীর সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনছে।
আপন দেশ /এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































