
ছবি: আপন দেশ
জলময়ূর — একটি লম্বালেজী, নয়নাভিরাম ও বিরল প্রজাতির পাখি। এটি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। যদিও নামের সঙ্গে ‘ময়ূর’ যুক্ত। এটি কোনো ময়ূর নয়। ময়ূরের সঙ্গে এর মিলও নেই।
জলময়ূরের খাবার মূলত শস্যদানা, জলজ ফল ও কীটপতঙ্গ। এরা বাস করে বিল, হাওর-বাঁওড় ও বড় জলাশয়ে। একসময় অনেক দেখা গেলেও এখন এ পাখি খুবই বিরল।সম্প্রতি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে এ পাখির দেখা পেয়েছেন সৌখিন ফটোগ্রাফার কামাল হোসেন।
জানা গেছে, এ পাখির দেহের দৈর্ঘ্য ৩৯ থেকে ৫৮ সেন্টিমিটার। যার মধ্যে লেজ ২৫ সেন্টিমিটার। পুরুষের ওজন ১১৩ থেকে ১৩৫ গ্রাম। স্ত্রীর ওজন ২০৫ থেকে ২৬০ গ্রাম।জলময়ূর হাওর, বিল, হ্রদ ও মিঠাপানির জলাভূমিতে বাস করে। গ্রীষ্মে একাকী বা জোড়ায় থাকে, শীতে দলবদ্ধ হয়। ভাসমান পাতার ওপর হেঁটে জলজ উদ্ভিদের পোকা, কচিপাতা, অংকুর ও বীজ খায়। এ পাখির তিনটি প্রজাতি রয়েছে — নেউ, নেউপিপি ও পদ্মপিপি (মেওয়া)। আইইউসিএন পাখিটিকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ তালিকাভুক্ত করেছে।
ফটোগ্রাফার কামাল হোসেন বলেন, ঘাটাইলের বনভূমি, বিল ও নদীতে পানকৌড়ি, ডাহুক, জলপিপি, শামুকখোলসহ নানা পাখি দেখা যায়। এ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে বহু সময় অপেক্ষা করতে হয়।
তিনি জানান, রাণাদহ বিলে জলময়ূরের ছবি তুলতে তিনি আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। অবশেষে এক জোড়া জলময়ূর ক্যামেরায় ধরা পড়ে। একটি উড়ছিল, আরেকটি মাখনার পাতায় বসে ডাকছিল। আর এক জোড়া ছিল খুনসুটিতে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, রাণাদহ বিলে এখনো কিছু মাখনা উদ্ভিদ টিকে আছে। সে জন্যই কিছু জলময়ূর বেঁচে আছে। তবে দ্রুত এ বিলকে সংরক্ষিত না করলে পাখিগুলো হারিয়ে যেতে পারে।
প্রাণিবিদদের মতে, প্রজননকালে জলময়ূর আরও রঙিন হয়ে ওঠে। তাদের মাথা, গলা ও ডানার পালক সাদা হয়। ঘাড়ে সোনালি-হলুদ রঙ, পিঠ গাঢ় বাদামি। বুক-পেট কালচে-বাদামি, লেজ কালচে। ঠোঁট নীলচে, চোখ বাদামি ও পা নীলাভ-কালো হয়।
জানা গেছে, স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় একরকম। প্রজননের সময় পুরুষ পাখি ভাসমান পাতায় বাসা বানায়। স্ত্রী চারটি জলপাই-বাদামি রঙের ডিম পাড়ে। পুরুষ পাখি একাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩ থেকে ২৬ দিন। বাচ্চারা জন্মের পরই হাঁটতে, সাঁতরাতে ও ডুব দিতে পারে। প্রায় দুই মাস তারা বাবার তত্ত্বাবধানে থাকে।
বন বিভাগ ও পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে পাহাড়ি জলাভূমি ছিল জলময়ূরের নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু এখন শিকার, বাসস্থান ধ্বংস ও বিষ প্রয়োগে এরা চরম হুমকিতে।
স্থানীয় শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, দেওপাড়ার রাণাদহ বিল একসময় জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ছিল। বিলের পাশে কালীয়ান বিল ও গজারি বন ছিল সম্পদ। কিন্তু এখন বিলের বুক চিরে পাকা সড়ক গেছে। চলছে জবরদখল, ব্যবহৃত হচ্ছে চায়না ও কারেন্ট জাল। ফলে বিলের মাছ, পাখি ও জলজপ্রাণী ধ্বংস হচ্ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে। জলময়ূরের মতো দুর্লভ পাখির টিকে থাকার জন্য নির্দিষ্ট ও নিরাপদ পরিবেশ প্রয়োজন। তা না হলে এ অপূর্ব পাখিও হারিয়ে যাবে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।