Apan Desh | আপন দেশ

রাজনীতি মাঝেমধ্যে হিন্দু–মুসলমানকে আলাদা করে দেয়: মির্জা ফখরুল

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

রাজনীতি মাঝেমধ্যে হিন্দু–মুসলমানকে আলাদা করে দেয়: মির্জা ফখরুল

ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের কালীবাড়ি মন্দিরের শনিদেব মন্দিরের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।

রাজনীতি মাঝেমধ্যে হিন্দু–মুসলমানের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ওই বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করতে হবে। 

বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের কালীবাড়ি মন্দিরের শনিদেব মন্দিরের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ করি, তখন একবারের জন্য ভাবিনি কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে খ্রিষ্টান। সবাই একসঙ্গে লড়াই করেছি। আপনাদের প্রতি অন্তরের টান এখনো আছে। আপনাদের কখনোই আলাদা করে দেখার চেষ্টা করিনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাজনীতি মাঝেমধ্যে আমাদের আলাদা করে দেয়। সে রাজনীতি আমাদের পরিহার করতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ; এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এখনো মনে করি, আমি আপনাদেরই একজন। তবে আমার একটা অভিযোগ আছে। কালীবাড়ি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র মল্লিককে উদ্দেশ করে বলেন, আমাকে কিছুদিন ওরা দূরে সরিয়ে রেখেছেন। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া তো পাপ নয়, যে যাঁর মতো রাজনীতি করবেন। ভিন্ন রাজনীতি করার কারণে আমাকে দূরে ঠেলে রাখতে হবে, এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। এটা বাস্তবতা, কোনো অভিযোগ করছি না। এ কারণেই বলছি যে আমি খোলামেলা মনের মানুষ।

অতীত দিনের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আশ্রমপাড়ায় দুর্গাপূজার আয়োজন হতো, ঘোষপাড়ার হিন্দুরা আশ্রমপাড়ায় এসে পূজা করতেন। ওখানে নাটক হতো। সে নাটকে আমি নিয়মিত অংশ নিতাম। এ পরিবেশ আজ আর নেই। এখন আর নিজের লোকেরাও ডাকেন না। এ জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা বেরিয়ে আসার একটা সুযোগ পেয়েছি। নতুন একটা বাংলাদেশ তৈরি হচ্ছে। আসুন, এ নতুন বাংলাদেশটাকে আমরা আমাদের মতো করে তৈরি করি।

আরও পড়ুন>>>শপথ নিলেও মাত্র ১৫ দিন মেয়র থাকবেন ইশরাক

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আস্থা রাখবেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকব। আমরা মনে করি, আপনাদের বিপদ মানে, আমার বিপদ। আপনাদের শান্তি মানে, আমার শান্তি। আপনাদের সুখ মানে, আমার সুখ। 

কখনো বিভাজনের রাজনীতি আমরা করিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের চরণ ‘চারি দিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি, ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি’ উদ্ধৃত করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হৃদয়টাকে প্রসারিত করতে হবে। চারদিকে তাকিয়ে দেখতে হবে ও ভালোবাসতে হবে মানুষকে। সে ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ কাজটা যদি করতে না পারি, তাহলে আজ আমরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারব না।

এখনো ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতি মুহূর্তে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনাদের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। এ ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়া আপনাদের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। সেখানে এমন সব কথা বলে–লেখে, আবার কিছু কিছু মানুষ এমনভাবে উসকানি দেয়, যে সবাই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আমি কিন্তু ফেসবুক দেখি না। কারণ, আমি জানি, তারা সমাজকে অস্থির করার চেষ্টা করছে। আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সমস্যা তো থাকবেই। সে সমস্যা আমাদেরই উত্তরণ ঘটাতে হবে। আপনারা বুকে একটু জোর আনেন। আমরা আগের মতো সে সম্পর্ক আবার তৈরি করি। আমরা সবাই মিলে একটা চমৎকার সমাজ গড়ে তুলি, যেখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়