Apan Desh | আপন দেশ

ইউক্রেনের মিশাইলে থেমে গেল ইয়াসিনের স্বপ্নের যাত্রা 

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ৪ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ০৯:৫৮, ৪ এপ্রিল ২০২৫

ইউক্রেনের মিশাইলে থেমে গেল ইয়াসিনের স্বপ্নের যাত্রা 

ইউক্রেনের মিশাইল হামলায় নিহত রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করা ইয়াসিন শেখ

ছোটবেলা থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার স্বপ্ন ছিল ইয়াসিন শেখের। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরির স্বপ্ন পুরণ না হলেও রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলার এ যুবক। চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে যোগ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেন ইয়াসিন। এ সিদ্ধান্তই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

ইউক্রেনের মিশাইল হামলায় থেমে যায় তার স্বপ্নের যাত্রা। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ইয়াসিনসহ তার চার সহযোদ্ধার দেহ। গত ২৭ মার্চ ইউক্রেনে যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত হয় ইয়াসিন শেখ। তার মৃত্যুর খবর পরিবার জানতে পারেন ঈদের পরদিন। রাশিয়ায় থাকা ইয়াসিনের বন্ধু মেহেদী মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। ইয়াসিনের মৃত্যুর খরব জানাজানি হওয়ার পর পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের মরিচালি গ্রামের মৃত সত্তর মিয়ার ছোট ছেলে ইয়াসিন শেখ। চার ভাইবোনের মধ্যে দুইজন আগেই মারা গেছেন। মা আর বড় ভাইকে নিয়ে ছিল তার সংসার। বড় ভাই ব্যবসায়ী রুহুল আমিন তার পড়াশোনা ও বিদেশযাত্রার খরচ বহন করেন।

রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেয়ার ছবি ও ভিডিও নিয়মিত তার ফেসবুকে আপলোড করতো ইয়াসিন। গত ১ মার্চ ফেসবুকে তার বাবা মৃত্যুবার্ষিকীতে রাশিয়া যাওয়া, সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া ও তার স্বপ্নপূরণ নিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করে ইয়াসিন।

ইয়াসিন ভিডিওতে বলেন, গত বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়ায় একটি চায়না কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করে। গত সেপ্টেম্বর মাসে অফার লেটার পেয়ে চলে যায় রাশিয়া। মস্কো থেকে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার দূরের ওই কোম্পানিতে তিন মাস চাকরির পর অনলাইনে আবেদন করে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক হিসেবে যোগ দেয়। দেশে না হলেও বিদেশে সৈনিক হয়ে বাবার স্বপ্নপূরণ হয় বলেও জানায় সে। 

ভিডিওতে আওযামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচারণ ও তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের জন্যও দোয়া প্রার্থনা করেন ছাত্রদল কর্মী ইয়াসিন। সরকারি বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তার সাহস ও ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেয়ার মনোবল তৈরি হয় বলে জানায় সে। যুদ্ধে মৃত্যু হলেও তার কোনো আফসোস থাকবে না বলেও ভিডিওতে জানায় ইয়াসিন। ওই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করার মাস না পেরুতেই যুদ্ধে ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় নিহত হয় ইয়াসিন।

ইয়াসিনের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম রবি জানান, রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ান ভাষা শিখে ইয়াসিন। পরে বন্ধুর সহায়তার ইয়াসিন রাশিয়ায় একটি কোম্পানিতে ভালো চাকরি পায়। সবই ঠিকটাক মতো চলছিল। পরে রাশিয়া সেনাবাহিনী যোগ দিয়ে সব উলটপালট হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার সময় ইয়াসিনের মা ও বড় ভাইকে গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে অনাপত্তি পত্রে তাদের স্বাক্ষর নেয় রাশিয়া প্রেরণকারী এজেন্সির লোকজন। গত ২৬ মার্চ তার মায়ের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলে ইয়াসিন। কয়েকদিনের মধ্যেই দশ লাখ টাকা পাঠাবে বলেও মাকে জানিয়েছিল সে।

নিহত ইয়াসিনের লাশের কি অবস্থা, লাশ দেশে আনা যাবে কি না তা নিয়ে কোনো তথ্যই পাচ্ছে না ইয়াসিনের পরিবার। ছেলের ছবি নিয়ে মায়ের কান্না থামছেই না। শোকে হতব্বিহবল পরিবারের সদস্যরা। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এদিকে খবর পেয়ে গৌরীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সুনন্দা সরকার প্রমা মরিচালি গ্রামে ইয়াসিনের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেন।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাদুল হাসান জানান, বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এ ব্যাপারে সকল প্রকার আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়