
শ্রীলঙ্কান দলের অধিনায়কের সঙ্গে বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ
গল টেস্টে শান্ত, মুশফিক, নাঈম ও লিটনদের চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যে শ্রীলঙ্কা সফরের শুরুটা কি দুর্দান্তভাবেই না শুরু করেছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু গল থেকে কলম্বোতে যেতেই পুরো উল্টো চিত্র। হার তো হার, ইনিংস ব্যবধানে হার! টেস্ট সিরিজ চলে যায় স্বাগতিকদের ঘরেই। এবার টেস্ট সিরিজের হতাশা ঝেড়ে রঙিন পোশাকে নতুন করে শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। সে কলম্বো থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে চায় টাইগাররা।
তবে কাজটি মোটেও সহজ পথ নয়। কারণ, ওয়ানডে ফরম্যাটে পেছাতে পেছাতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দশ নম্বরে। চলতি বছর মে মাসে ১৯ বছরের মধ্যে ওয়ানডেতে সবচেয়ে তলানিতে নেমে যায় বাংলাদেশ। এ নাজুক পরিস্থিতি থেকে অন্তত এক ধাপ উত্তরণের সুযোগ এসেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের সামনে। বুধবার (০২ জুলাই) শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে সফরকারীরা।
আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে চারে থাকা শ্রীলঙ্কাকে হারালেই ৯ নম্বরে উঠবে দল। এ ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে নতুন করে পথচলা শুরু করছে বাংলাদেশ। সে অভিযানের নেতৃত্বেও এসেছে পরিবর্তন। ওয়ানডে সিরিজে নেতৃত্বের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। তার জায়গায় একদিনের দলের অধিনায়ক করা হয়েছে অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়েই নেতৃত্বে অভিষেক হবে মিরাজের।
নতুন ওয়ানডে অধিনায়কের নেতৃত্বে এবারই প্রথম বাংলাদেশ নিজেদের প্রিয় ফরম্যাট খেলবে পঞ্চপাণ্ডব মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহকে ছাড়া (আগেও খেলেছে তবে তখন অবসর নেননি মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা)। আনুষ্ঠানিক অবসর না নিলেও মাশরাফি বিন মর্তুজার জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।
সাকিব আল হাসানও জাতীয় দল থেকে অনেক দূরে। তামিম ইকবাল আনুষ্ঠানিক অবসর নিয়েছেন তিন ফরম্যাট থেকে। এতদিন ওয়ানডে খেললেও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফরম্যাটটা ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ, যেখানে থাকবেন না পঞ্চপাণ্ডবের কেউ। তাদের সবার সঙ্গে খেলা মেহেদী হাসান মিরাজ অবশ্য মেনে চলবেন পঞ্চপাণ্ডবের দর্শনই। মাশরাফি বিন মর্তুজার কাছ থেকে তিনি শিখেছেন 'ম্যান ম্যানেজমেন্ট'।
সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার দীক্ষা। আর তামিম ইকবালের কাছ থেকে সবার ওপর আস্থা রাখার ব্যাপারটা। দলকে এক সূতোয় গেঁথে মিরাজ কি পারবেন নতুন এক বাংলাদেশ গড়তে? গত সোমবার যেমন অনুশীলনের কেন্দ্রে থাকার চেষ্টা করেছিলেন মিরাজ। সতীর্থদের নানা মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন তিনি।
তাসকিন আহমেদ, লিটন দাসের মতো সিনিয়ররাও অভিবাদন জানাচ্ছিলেন, 'ক্যাপ্টেন' বলে। মিরাজও নিশ্চয়ই চান সত্যিকারের 'ক্যাপ্টেন' হতে। শ্রীলঙ্কা সফরে ওয়ানডের আগে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট ড্র হলেও দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ইনিংস ও ৭৮ রানে হারে টাইগাররা। প্রথম টেস্টে ব্যাট-বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্সে আধিপত্য বিস্তার করে ম্যাচ ড্র করে বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ম্যাচ হারে টাইগাররা।
এবার ওয়ানডে সিরিজে ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ। তিনি জানান, ওয়ানডে সিরিজে লড়াই হবে। এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৭ ম্যাচ খেলে মাত্র ১২টিতে জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। ৪৩টি ম্যাচে হার ও দু'টি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। তবে, দু'দলের শেষ পাঁচ দেখায় বাংলাদেশ তিনটিতে জিতেছে এবং দু'টিতে হেরেছে। ২০২৪ সালের মার্চে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ- শ্রীলঙ্কা। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা।
এরপর আফগানিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দু'টি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা। শান্তর অনুপস্থিতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মিরাজ। চোট থেকে সুস্থ হয়ে লঙ্কান সিরিজ দিয়ে দলে ফিরেছেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করে আড়াই বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন মোহাম্মদ নাইম শেখ। আরও ফিরেছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে সুযোগ না পাওয়া উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লিটন দাস, মিডল অর্ডার ব্যাটার শামীম পাটোয়ারী এবং বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। বাদ পড়েছেন সৌম্য সরকার এবং নাসুম আহমেদ।
এদিকে এ সিরিজে একটি জয় পেলেই র্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। বর্তমানে দশে থাকা বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট ৭৬, ৭৭ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে নয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১০৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে চারে অবস্থান শ্রীলঙ্কার। বাংলাদেশ যদি সিরিজে কেবল এক ম্যাচ জেতে তাহলে ৭৭ রেটিং পয়েন্ট হলেও ভগ্নাংশের ব্যবধানে এগিয়ে নয়ে উঠে যাবে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। দুই ম্যাচ জিতলে ৭৮ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে নয়েই থাকবে। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা চার থেকে পাঁচে নেমে যাবে। শ্রীলঙ্কাকে যদি বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশড করেও সিরিজ জেতে তাতেও নয়েই থাকবে তারা। সেক্ষেত্রে রেটিং পয়েন্ট বেড়ে হবে ৮৩। আটে ৮৮ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে থাকা ইংল্যান্ডের সঙ্গে ব্যবধান কিছুটা কমবে।
এক সময় ওয়ানডেতে সমীহ জাগানিয়া শক্তি ছিল বাংলাদেশ। র্যাংকিংয়ে ছয় নম্বরেও উঠেছিল, সাতে অবস্থান ছিল নিয়মিত। কিন্তু ৫০ ওভারের ক্রিকেটেও বাকি দুই সংস্করণের মতন বাজে সময় কাটছে দলটির। এত বাজে সময় যে ১৯ বছর পর দশে নেমে যেতে হয়েছে। এবার সে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের বড় সুযোগ। শ্রীলঙ্কাকে ওয়ানডেতে ১২ বার হারিয়েছে বাংলাদেশ। কাজেই এ সিরিজে জেতার আশা সমর্থকরা করতেই পারেন।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।