
পিএসজির জয় উল্লাস
ইতালিতে বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলানের জমজমাট লড়াই দেখার পর অনেকেই ধারণা করেছিলেন, আর্সেনাল ও পিএসজির দ্বিতীয় সেমিফাইনাল সেই উত্তেজনা দেখাতে পারবে না।
প্যারিসে বুধবার (০৭ মে) সেমি-ফাইনালের ফিরতি লেগে ২-১ ব্যবধানে জিতে, দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ গোলের অগ্রগামিতায় শিরোপার মঞ্চে জায়গা করে নিল লুইস এনরিকের দল।
পার্ক দ্য প্রিন্সেসে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে আর্সেনালকে আতিথ্য দিতে নামে ফরাসি জায়ান্টরা। যেখানে তাদের গোলশূন্য ড্র-ই যথেষ্ট ছিল। কারণ আর্সেনালের মাঠ এমিরেটসে প্রথম লেগে ১-০ গোলে জয় নিয়ে ফিরেছিল পিএসজি। প্যারিসিয়ানরা এগ্রিগেটে সেই ব্যবধান বাড়ায় ২৭ মিনিটে। এরপর আরও এক গোল করে দ্বিতীয়ার্ধে, আর্সেনালের পক্ষে বুকায়ো সাকা এক গোলে কেবল ব্যবধানই কমিয়েছেন।
যদিও ম্যাচের শুরুতে পায়ে বলই রাখতে পারছিল না স্বাগতিক পিএসজি। উল্টো গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমাকে বারবার পরীক্ষায় ফেলছিল আর্সেনাল ফুটবলাররা। বিশেষত সপ্তম মিনিটে মার্টিন ওডেগার্ডের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জোরালো শট লাফিয়ে দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন পিএসজির এই ইতালিয়ান গোলরক্ষক। দোন্নারুমা ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটে এভাবে ডেকলান রাইস-গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লিদের একের পর এক আক্রমণ ভেস্তে দেন।
পুরো প্রথমার্ধেই বল দখলে বেশ পিছিয়ে ছিল পিএসজি। তাদের শটও ছিল কম, তবে ৫ শটের মধ্যে ৩টাই তারা লক্ষ্যে রাখতে পারে। বিপরীতে মিকেল আর্তেতার শিষ্যরা ১০টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয় মাত্র দুটি।
এর মাঝেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের সামনে। ১৭ মিনিটে খিচা কাভারৎস্খেলিয়া জোরালো শট নেন বাঁ প্রান্ত থেকে। ডেভিড ডি রায়া নাগাল পাননি সেটি, তবে বল গিয়ে আঘাত করে সেকেন্ড বারে।
২৭তম মিনিটে ম্যাচে লিড নেয় পিএসজি। ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বল আরেক সতীর্থের মধ্যস্থতায় পেয়ে যান ফ্যাবিয়ান রুইজ। প্রথমে বলটি বুক দিয়ে নামিয়ে এনে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড বক্সের মাথা থেকে বাম পায়ে জোরালো শট নেন। দুরন্ত গতির সেই বল ঠেকাতে লাফিয়েও নাগাল পাননি আর্সেনাল গোলরক্ষক ডি রায়া।
ম্যাচে ১-০ এবং এগ্রিগেটে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় লুইস এনরিকের দল। বিরতির আগে বাকি সময়ে বুকায়ো সাকা, মিকেল মেরিনো ও রাইসরা সমতায় ফেরার মরিয়ার চেষ্টা চালায়। তবে প্রতিবার তাদের হতাশা উপহার দেয় পিএসজি ডিফেন্ডার নুনো মেন্দেস ও আশরাফ হাকিমিরা।
দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ানোর মিশনে নামে পিএসজি, যদিও তাদের আক্রমণ ঠিক কার্যকরী ছিল না। অন্যদিকে, সফরকারী আর্সেনালের শরীরি ভাষা ছিল ক্লান্ত ও অগোছালো। ৬৪ মিনিটে সমতায় ফেরার কাছাকাছিই ছিল গানাররা। কিন্তু বুকায়ো সাকার বাঁকানো শট আঙুলের ছোঁয়ায় বাইরে পাঠিয়ে দেন দোন্নারুমা।
মিনিট তিনেক পর পেনাল্টি পায় পিএসজি। হাকিমির গোলের লক্ষ্যে নেওয়া শট হাতে লাগে আর্সেনাল ডিফেন্ডার লুইস-স্কেলির হাতে। ভিএআর দেখে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। তবে স্পটকিকে ভিতিনহার দুর্বল শট নিয়ন্ত্রণে নিতে বেগ পেতে হয়নি ডি রায়াকে।
পিএসজির সেই স্তব্ধ হয়ে যাওয়া মুহূর্ত অবশ্য বেশিক্ষণ পোড়ায়নি। আর্সেনাল ডিফেন্ডারদের ভুলে ৭৬ মিনিটে তাদের বক্সেই বল পেয়ে যান হাকিমি। নিকট দূরত্ব থেকে এই মরক্কান ডিফেন্ডারের শট জাল খুঁজে নেয়। এগ্রিগেটে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে ম্যাচে তখনই হেরে বসেছিল আর্সেনাল।
তবে মিনিট চারেক বাদে মার্কিনিয়োসের অনিয়ন্ত্রিত দৌড়ে তাকে বিট করে বল নিয়ে যান লিয়েন্দ্রো ট্রোসার্ড। তার বাড়ানো বল প্রায় আটকে ফেলেছিলেন দোন্নারুমা, তবে হাত ফসকে গেলে পেয়ে যান পাশেই থাকা সাকা। বলকে জালে ঠেলে দিয়ে এই ইংলিশ তারকা ব্যবধান কমান।
শেষ ১০ মিনিটেও আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ জারি ছিল। তবে ঠিক প্রতিপক্ষের মাথাব্যথার কারণ হতে পারল না কেউই। তবে ঠিকই দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ ব্যবধানের জয়ে মিউনিখের টিকিট নিশ্চিত করেছে এনরিকের পিএসজি।
ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠল পিএসজি। প্রথমবার ফাইনালে উঠেছিল ২০২০ সালে, সেবার বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছিল তাদের। অধরা সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আগামী ৩১ মে মিউনিখে মাঠে নামবে পিএসজি।
আপন দেশ/আরআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।