Apan Desh | আপন দেশ

সংকটময় মুহূর্তে মুসলিমদের করণীয়

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ১৮ জুন ২০২৫

সংকটময় মুহূর্তে মুসলিমদের করণীয়

ফাইল ছবি

বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহ আজ এক ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। গাজা, ইরান, ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, কাশ্মীর ও সুদানের মতো অঞ্চলে মুসলমানরা অত্যাচার, আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছে।

আরও পড়ুন>>>ইসরায়েলের আকাশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইরানের

নিরীহ শিশু, নারী ও বৃদ্ধরাও রক্ষা পাচ্ছে না। একদিকে চলছে আগ্রাসী হামলা, অন্যদিকে গোটা উম্মাহ বিভক্ত, আত্মতুষ্টিতে ডুবে থাকা, নির্বাক ও নিস্ক্রিয়। এমন অবস্থায় ইমানদার মুসলমান হিসেবে আমাদের করণীয় কী সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের ফিরে যেতে হবে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে।

মুসলিম উম্মাহর প্রতি দায়বদ্ধতা ও সংবেদনশীলতা রাখা

المسلم أخو المسلم، لا يظلمه ولا يسلمه মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করে না, তাকে শত্রুর হাতে ছেড়ে দেয় না। (সহিহ বুখারি: ২৪৪২,সহিহ মুসলিম:২৫৮০) আমাদের হৃদয় যেন অসাড় না হয়। মুসলিম উম্মাহর ওপর অত্যাচার দেখে নিস্পৃহ থাকা মুমিনের কাজ নয়। আমাদের ইমান দাবি করে আমরা তাদের কষ্ট অনুভব করবো, অন্তত অন্তরে কষ্ট পাবো, এবং দুআ করবো, সাহায্যের ব্যবস্থা করবো।

দোয়া ও কান্নার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া

أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ কে সেই ব্যক্তি, যে বিপদগ্রস্তের দুআ কবুল করেন? (সুরা নামল:৬২) রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

الدعاء سلاح المؤمن দুআ হলো মুমিনের অস্ত্র। (হাকিম:১৮১৬) কেবল রাজনৈতিক প্রচার, সভা কিংবা ক্ষোভই যথেষ্ট নয়; আল্লাহর কাছে কান্নাজড়িত, হৃদয়বিদারক দুআ করতে হবে। তাহাজ্জুদের অন্ধকার রাতে, নামাজ শেষে, হাত তুলে আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতি করতে হবে।

অর্থনৈতিক সাহায্য ও সঠিক মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছানো

وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ তারা নিজেদের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়। (সুরা হাশর:৯) গাজার ক্ষুধার্ত শিশুরা, বিধবা নারী, আহত মুসলিম ভাই-বোন তাদের জন্য আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। বিশ্বাসযোগ্য ইসলামি সংস্থার মাধ্যমে খাদ্য, ওষুধ, জরুরি অর্থ সহায়তা পৌঁছানো উচিত।

জুলুম ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তোলা

وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ তোমরা জালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তা হলে আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে। (সুরা হুদ: ১১৩) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ওয়াজ-মাহফিল, খুতবা, লেখালেখি যেকোনো মাধ্যমে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। যেন বিশ্ব বুঝে মুসলমানরা একা নয়।

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ নিশ্চয়ই সব মুমিন একে অপরের ভাই। (সুরা হুজুরাত:১০) দলীয় চিন্তা, মতপার্থক্য, মাজহাবি বিরোধ ভুলে উম্মাহর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঐক্য ছাড়া বিজয় আসবে না।


দ্বীনের জ্ঞান অর্জন ও দাওয়াতি কাজ জোরদার করা

وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنفِرُوا كَافَّةً. لِّيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ সব মুমিনের একসাথে বের হওয়া উচিত নয়; বরং কিছু অংশ দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করুক। (সুরা তাওবা: ১২২) অজ্ঞতা ও গাফিলতিই আজকের দুর্দশার মূল কারণ। ইসলামি জ্ঞানের আলো ছাড়া আমাদের মুক্তি নেই। সবার উচিত সঠিক আকিদা ও ইসলামি অনুশাসন শিক্ষা নেওয়া এবং তা প্রচার করা।

আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল রাখা ও বিজয়ের আশায় থাকা

إِنْ يَنْصُرْكُمُ اللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ আল্লাহ যদি তোমাদের সাহায্য করেন, তাহলে কেউ তোমাদের হারাতে পারবে না। (সুরা আল ইমরান:১৬০)

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

واعلم أن النصر مع الصبر জেনে রাখো, ধৈর্যের সঙ্গে বিজয় আসে। (সুনানুত তিরমিজি: ২৫১৬) হতাশ হওয়া মুসলমানের কাজ নয়। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। জুলুমের রাত্রি দীর্ঘ হলেও, সুবহে সাদিক আসবেই ইনশাআল্লাহ। আমাদের শুধু ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা জরুরি।

আজকের দুনিয়া মুসলিম উম্মাহর জন্য চরম পরীক্ষার ক্ষেত্র। গাজার ধ্বংসস্তূপ, ইয়েমেনের ক্ষুধা, সিরিয়ার রক্তস্রোত, কাশ্মীরের নীরবতা সব মিলিয়ে মুসলিম হৃদয় কাঁদে। কিন্তু কেবল কাঁদলেই চলবে না। 

হৃদয়ে উম্মাহর বেদনা রাখা, কান্নাজড়িত কন্ঠে দুআয় আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, অর্থ সাহায্য পাঠানো, জালিমদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া,  ইসলামি জ্ঞানে ফিরে যাওয়া, ঐক্যের বন্ধন দৃঢ় করা,  বিজয়ের আশায় ধৈর্য ধারণ করা।

আপন দেশ/এমবি

 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়