Apan Desh | আপন দেশ

‘গণভোট–নির্বাচন একসঙ্গে মানে প্রতারণা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:২১, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১২:২৪, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

‘গণভোট–নির্বাচন একসঙ্গে মানে প্রতারণা’

ছবি: আপন দেশ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে অবিলম্বে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন পৃথক দিনে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ ৮টি রাজনৈতিক দল। 

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হলে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি উত্থাপন করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি সরকারের ৩ জন বিতর্কিত উপদেষ্টার অপসারণসহ প্রশাসনে সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জাতির দুর্ভাগ্য এ যে, ৫৪ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশে বারবার সরকার ও শাসন বদল হয়েছে, কিন্তু শোষণের অবসান ঘটেনি। নেতৃত্বের ব্যর্থতাই জাতির সবচেয়ে বড় কলঙ্ক। জুলাই বিপ্লবের পর জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল স্থিতিশীল শাসন, সুষ্ঠু রাজনীতি, মানবাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন এবং অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিনটি মৌলিক অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল- পূর্ণাঙ্গ সংস্কার, অপরাধীদের বিচার এবং অবাধ নির্বাচন।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে নতি স্বীকারের অভিযোগ এনে  তিনি জানান, সরকারের উদ্যোগে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিশন (এনসিসি) গঠিত হয়। ৩১টি দলের প্রতিনিধিরা মাসের পর মাস আলোচনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেন এবং সবাই স্বাক্ষর করেন। জাতি আশায় বুক বেঁধেছিল যে, এ সংস্কারের ভিত্তিতে অবাধ নির্বাচন হবে। কিন্তু হঠাৎ একটি বড় দল সংস্কারের বিরোধিতা শুরু করে। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আস্থা রেখে জনগণ আশা করেছিল, তিনি কোনো চাপে নতি স্বীকার করবেন না। কিন্তু সরকার কমিশনের প্রস্তাব থেকে সরে গিয়ে সনদে পরিবর্তন এনেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

তাহের অভিযোগ করেন, কমিশন এক প্যাকেজে হ্যাঁ-না ভোটের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সরকার তা ৪ ভাগে বিভক্ত করে জটিলতা সৃষ্টি করেছে। এতে জনগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়বে। একটি দলের নোট অব ডিসেন্টকে গণভোটে অন্তর্ভুক্ত করা অবৈধ ও অনৈতিক। নোট অব ডিসেন্ট শুধু রেকর্ডে থাকে, ভোটের ভিত্তি হয় না। সরকার বিএনপির দাবি মেনে এ বিভাজন করেছে, যা একটি দলকে অন্যায় সুবিধা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কমিশন প্রস্তাব করেছিল, সনদ কার্যকরের পর নির্বাচিত সরকার ১৮০ দিনের মধ্যে তা সাংবিধানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করবে, না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত হবে। কিন্তু সরকার এ বাধ্যবাধকতা বাতিল করেছে। ফলে সংস্কার ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

সৈয়দ তাহের অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের পর বিএনপির কর্মীদের আচরণে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তারা জানে, গণভোট আগে হলে ৮০ শতাংশ ভোট তাদের বিপক্ষে যাবে। তাই তারা গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে করার দাবি তুলেছে। সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে সংস্কারকে গুরুত্বহীন করে ফেলেছে। একই দিনে ভোট হলে দলগুলো শুধু নিজেদের প্রচারে মনোযোগ দেবে, গণভোট উপেক্ষিত হবে। এটা একটা ফাঁদ।

তিনি বলেন, সরকার লন্ডনে গিয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা, একটি দলের দাবিকে অগ্রাধিকার, প্রশাসনে তাদের অনুগতদের নিয়োগ- এসব থেকে প্রমাণিত যে, সরকার আর নিরপেক্ষ নয়। সৎ কর্মকর্তাদের সরিয়ে একটি দলের ট্যাগ লাগানো হচ্ছে। এভাবে চললে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব।

৮ দলের পক্ষ থেকে তিনি তিনটি দাবি তুলে ধরেন- ১) প্রধান উপদেষ্টা গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে অবিলম্বে গণভোটের আলাদা তারিখ ঘোষণা করবেন। ২) যে তিন উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছেন, তাদের অপসারণ করতে হবে। তাদের নাম প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হবে। প্রয়োজনে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হবে। ৩) প্রশাসনে নিরপেক্ষ, সৎ ও জবাবদিহিমূলক ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে।

তিনি জানান, ১৬ নভেম্বর ৮ দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। আজ ঢাকায় সাংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিক্ষোভ কর্মসূচি যথারীতি পালিত হচ্ছে।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন দুটি ভিন্ন ইস্যু। একই দিনে হলে সংস্কার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। খরচের যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। জাতির কল্যাণে গণভোট আগে হওয়া জরুরি।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ
SS Power

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়