ছবি : আপন দেশ
১৯৮৭ থেকে ২০২৫ সাল—সময়ের ব্যবধান ৩৮ বছর। বাংলাদেশের মানুষকে কাছে দুটি ছবি জীবন্ত হয়ে আছে। প্রথমটি ১৯৮৭ সালের—বুকে ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে রাজপথে প্রাণ দেন নূর হোসেন। দ্বিতীয়টি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পুলিশের সামনে বুক পেতে একের পর এক গুলি বুকে নিয়ে শহীদ হন আবু সাঈদ।
নূর হোসেন ১৯৮৭ সালে তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নায়ক। যিনি জীবন্ত পোস্টার হয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষাকে স্লোগানের অক্ষরে বুকে-পিঠে ধারণ করেছিলেন। তিনি সে সময় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কর্মী হিসেবে প্রাণ দিয়েছিলেন। আর আবু সাঈদ সেই আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী-স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নূর হোসেনের আত্মদানের পর ১৯৯০ সালে ৬ ডিসেম্বর এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। আর আবু সাঈদের রক্তের বিনিময়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে হওয়া আন্দোলন একপর্যায়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। হাজারের বেশি ছাত্র-জনতার প্রাণহানি এবং অসংখ্য আহত মানুষের রক্তের ওপর ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।
আজ ১০ নভেম্বর, সোমবার শহীদ নূর হোসেন দিবস। গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেনের প্রাণ দেয়ার তিন যুগ পরও গণতন্ত্রকামী মানুষকে রাস্তায় নামতে হয়েছে। সহস্র প্রাণের বিনিময়ে আরেক স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে হয়েছে।
ঢাকার নারিন্দায় এক অটোরিকশাচালকের ঘরে জন্ম নেয়া নূর হোসেন ছিলেন যুবলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষে নূর হোসেন গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেন।
জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন ১৯৮৭ সালের এ দিনে নূর হোসেন বুকে ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে রাজপথে বের হয়েছিলেন। সেদিন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল পল্টন এলাকার ‘জিরো পয়েন্ট’ অতিক্রম করার সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে মিছিলটিকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন নূর হোসেন ও যুবলীগ নেতা বাবুল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
আরও পড়ুন<<>>রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু ১৩ নভেম্বর
নূর হোসেনের সেদিনের আত্মত্যাগ মানুষের মনকে নাড়া দিয়েছিল। বুকে-পিঠের স্লোগানসংবলিত তার শরীর হয়ে উঠেছিল আন্দোলনের প্রতীক। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আরও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। নূর হোসেন শহীদ হওয়ার পর মাস না পেরোতেই ৬ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন এরশাদ। এর তিন মাস পর তিনি জাতীয় সংসদের আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন করেন। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বড় দলগুলো না নেয়ায় ওই সংসদ রাজনৈতিক বৈধতা পায়নি।
এরশাদ এরপরও ক্ষমতায় টিকে ছিলেন পৌনে তিন বছর। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ঘটনাবহুল একটি দশক শেষ হয়। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়। বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। যে জায়গাটিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন নূর হোসেন, সে জিরো পয়েন্ট এখন শহীদ নূর হোসেন চত্বর।
বিএনপি দিনটি পালন করে ‘ঐতিহাসিক ১০ নভেম্বর দিবস’ হিসেবে। আর আওয়ামী লীগ দিনটি পালন করে আসছে ‘নূর হোসেন দিবস’ হিসেবে। এছাড়া প্রতি বছর এদিনে নানা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ নূর হোসেনের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































