বাংলাদেশ সরকারের লোগো। ছবি : সংগৃহীত
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি), অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) শব্দগুলোর সঙ্গে আমরা খুব পরিচিত। কিন্তু এই ব্যক্তিদের কীভাবে নির্ধারণ করা হয়, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হলেন ভিভিআইপি (ভেরি ভেরি ইম্পর্টেন্ট পারসন)। এর পরের ধাপে আছেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা, যাদের বলা হয় ভিআইপি (ভেরি ইম্পর্টেন্ট পারসন)। এই ২ ধরনের ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় নির্ধারিত হন।
বাংলাদেশ পুলিশের বরাতে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানায়, যেসব ব্যক্তি অবস্থান, দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক দিয়ে বিশেষ গুরুত্ব বহন করেন এবং যাদের নিরাপত্তাহানি হলে দেশ ও জাতি গভীর সংকটে পতিত হয় তাদের ভিভিআইপি এবং ভিআইপি বলা হয়।
বাংলাদেশের প্রটোকল বা ‘অর্ডার অফ প্রিসিডেন্স’ অনুযায়ী, ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) হিসেবে শুধুমাত্র রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দুই পদাধিকারীকে গণ্য করা হয়। তারা হলেন—রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া ভিভিআইপি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত বিদেশি রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানগণ, যখন তারা বাংলাদেশ সফর করেন। তবে সরকার যদি মনে করে যেকোনো ব্যক্তি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তাদের ভিভিআইপি মর্যাদা দিতে পারে।
ভিআইপি হলেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সিনিয়র সচিব, সচিব, ৩ বাহিনী প্রধান, পুলিশের প্রধান। তবে সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য কাউকে ভিআইপি মর্যাদা দিতে পারেন।
বাংলাদেশে পুলিশের দুই বিভাগ থেকে ভিআইপিদের নিরাপত্তা দেয়া হয়। একটি হলো পুলিশের প্রটেকশন টিম। আরেকটি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। এ ছাড়া বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তায় আছে চ্যান্সারি পুলিশ।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গার্ড রেজিমেন্ট আছে। রাষ্ট্রপতির জন্য আছে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট। আর প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তায় আছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। এরসঙ্গে পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার টিমও কাজ করে। পুলিশের সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নও এই নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত।
বাংলাদেশের কোনো সড়কেই কোনো ভিআইপির জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকার কথা নয়। বিধি অনুযায়ী, তাদের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল থাকবে। কিন্তু তাদের চলাচলের জন্য কোনো সড়ক বন্ধ বা অন্য কোনো যানবাহনের চলাচল বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। তারা কোনো অগ্রাধিকারও পাবেন না। উলটো পথে চলা বা অন্য গাড়ি সরিয়ে চলাচলের কোনো সুযোগ নেই কোনো ভিআইপির।
শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার চলাচলের সময় সড়কের একপাশ খালি করে চলাচলের বিধান আছে। ভিভিআইপিদের যাতায়াতের নির্দিষ্ট সড়কটির এক পাশ ফাঁকা করে দেয়া হয়। সেখানে সাধারণ যানচলাচল বন্ধ করা হয়। তাদের মুভমেন্টের ১৫ মিনিট আগে এ সম্পর্কিত তথ্য এসএসএফকে জানায় ট্রাফিক বিভাগ। আর এসএসএফও আগে বিষয়টি জানায় ট্রাফিক বিভাগকে।
ভিআইপিরা তাদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান ও বডিগার্ড পেয়ে থাকেন। তবে থ্রেট বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর বাইরেও কোনো ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য গানম্যান বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে। আবার অনুমোদন পেলে কেউ নিজস্ব খরচে গানম্যান বা বডিগার্ডের বিকল্প উপায়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন লাগে। একই বিবেচনায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও দেয়া হয়।
যেমন, নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে অধ্যাপক জাফর ইকবালের নিরাপত্তার দায়িত্বে মোট ৩৬ জন পুলিশ রয়েছেন। তারা পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন। তার বাসা, কর্মস্থল সবখানেই নিরাপত্তা দেয়া হয়। তিনি বাইরে গেলেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। ওই টিমে একজন গানম্যানও আছেন।
বাংলাদেশে ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর একটি অংশকে নিয়োজিত থাকতে হয়। ভিভিআইপি এবং ভিআইপিদের চলাচলের সময়ও তাদের নিরাপত্তা দেখতে হয়। তারা ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে গেলে তাদের সঙ্গে বিধি অনুযায়ী নিরাপত্তা টিম থাকে।
আরও পড়ুন : নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির বার্তা
এসএসএফ আইন, ২০২১ অনুযায়ী, ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও আইনের ৮(২) ধারা মোতাবেক, ‘এসএসএফ বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও দৈহিক নিরাপত্তা প্রদান করিবে।’
অর্থাৎ, সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষিত হলে তার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে এসএসএফ নিয়োজিত হবে এবং তার ‘নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাইতে পারে এইরূপ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান করিবে এবং তাহাদিগকে দৈহিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’
অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য কাউকে ক্ষতিকর মনে হলে এসএসএফ তাকে বিনা গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় গ্রেপ্তারও করতে পারে এবং তাদের এই ক্ষমতা দেশের সকল প্রান্তে প্রযোজ্য। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে গুলি অথবা হত্যাও করতে পারবে।
আপন দেশ/এনএম
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































