Apan Desh | আপন দেশ

লোকজ প্রাণের কবি আল মাহমুদের ৯০তম জন্মদিন আজ

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:১১, ১১ জুলাই ২০২৫

লোকজ প্রাণের কবি আল মাহমুদের ৯০তম জন্মদিন আজ

কবি আল মাহমুদ।

‘তুমি ফুল, তুমি গাছ, তুমি ফল, তুমি মাটি,
তুমি সব কিছুর মধ্যে বসবাস করো আমার কবিতায়।’
বাংলা সাহিত্যের নিজস্ব গন্ধ, গ্রামীণ পটভূমির অনুরণন, শব্দে মাটির উর্বরতা—এ তিনে যার পরিচয়।তিনি কবি আল মাহমুদ। আজ ১১ জুলাই, এ কবির ৯০তম জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের এ দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। ছিলেন গ্রামের ছেলে কিন্তু স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলার কবিতা জয়ের।

আল মাহমুদের কবিতার হৃদয়জুড়ে ছিল মাটির গন্ধ, নদীর ভাষা ও মানুষের মুখ। তিনি ছিলেন লোকজ সংস্কৃতির মুখপাত্র, শব্দ দিয়ে গড়েছেন কৃষকের স্বপ্ন, নারীর আকুতি, শ্রমিকের ঘাম। কবি বলেছেন—
‘নদীর নাম জেনে রাখা যায় না,
নদীটা তো শুধু চলে, বয়ে চলে।’
এই পঙক্তির মতোই আল মাহমুদের কবিতাও প্রবাহিত—প্রকৃতি, প্রেম ও প্রতিবাদের স্রোতে।

আল মাহমুদের সবচেয়ে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালি কাবিন’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। এ কাবিনে ছিল প্রেম, পবিত্রতা, পলিসমৃদ্ধ প্রতিবাদ। তার কবিতায় প্রেমিক কখনো কৃষক, কখনো যোদ্ধা, আবার কখনো এক নির্মম বাস্তবতার বর্ণনাকারী—
‘আমি কি তোমার প্রেমে পড়েছি বলো,
নাকি আমার ভিতরের কৃষকটি
তারই জমিতে সোনা ফলাতে চায়?’
তার অন্য বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’, ‘কালের কলস’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ পাঠকের হৃদয়কে জয় করতে পেরেছে।

আল মাহমুদ সাহিত্য জগতে আসেন সাংবাদিকতা দিয়ে। ১৯৫৪ সালে ঢাকায় এসে কাজ শুরু করেন ‘সমকাল’ পত্রিকায়। পরে ‘গণকণ্ঠ’-এর সম্পাদক হন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সহ-পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন—বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮), একুশে পদক (১৯৮৬), কবি জসীম উদ্দীন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননা।

আল মাহমুদ ছিলেন একাধারে প্রেমিক, দ্রোহী ও ধর্মসচেতন কবি। তার কবিতায় দেখা যায় একান্ত ঘরোয়া ভালোবাসা থেকে মুক্তিযুদ্ধের উদ্দীপনা—সবই। কবি বলেছেন—
‘সেইসব দুর্বল মানুষদের জন্য আমি লিখেছি,
যাদের কণ্ঠে ভাষা নেই, হাতে কলম নেই,
তবুও যাদের কষ্ট আছে।’

২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। তবু তার শব্দ, কবিতা, কণ্ঠ আজও বাংলার ঘরে ঘরে ধ্বনিত। আল মাহমুদের কবিতা কখনো কুঁচকে ধরা কৃষকের হাত, কখনো নদীপাড়ের মেয়ের প্রতীক্ষা, আবার কখনো প্রতিরোধের আওয়াজ। তার নিজের কবিতার ভাষায়ই আজ আমরা বলি—
‘আমি কবি, আমার কবিতা গাইবে লোকেরা মাঠে,
কিংবা কোন এক মায়ের ঘুম পাড়ানি গানে।’

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়