ছবি: সংগৃহীত
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনে শহরের ঐতিহাসিক মারাঠা দুর্গ ‘শনিবার ওয়াড়া’কে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন ধর্মীয় বিতর্ক। দুর্গ প্রাঙ্গণে কয়েকজন নারী নামাজ আদায় করার পরপরই সেখানে গিয়ে গোমূত্র ছিটিয়ে স্থানটি ‘পবিত্র’ করেছেন বিজেপির সংসদ সদস্য মেধা কুলকার্নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, তিনজন নারী দুর্গের একটি প্রান্তে চাদর বিছিয়ে নামাজ পড়ছেন। ঐ ভিডিও ভাইরাল হতেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় পুনে শহরের বিজেপি এমপি মেধা কুলকার্নি কয়েকজন হিন্দু সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দুর্গে গিয়ে গোমূত্র ছিটিয়ে ‘শিববন্দনা’ করেন এবং ঘটনাস্থল ‘শুদ্ধ’ করার দাবি জানান। এনডিটিভি।
কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির এ কর্মসূচির প্রতিবাদে দলটির বিরুদ্ধে ‘ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুমতবাদ’ ধ্বংসের অভিযোগ তুলেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) মুখপাত্র ওয়ারিশ পাঠান । তিনি বলেন, তারা শুধুই ঘৃণা ছড়াচ্ছে। যদি তিন-চারজন মুসলিম নারী জুমার দিন এক জায়গায় নামাজ আদায় করেন, তাতে কী এমন সমস্যা হয়? যখন হিন্দুরা ট্রেনে বা বিমানবন্দরে নিজেদের ধর্মীয় আচার পালন করেন, আমরা তো কখনো আপত্তি জানাই না।
আরও বলেন, এএসআই-সুরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। তিন মিনিটের নামাজ আপনাদের জন্য এত সমস্যার কারণ হলো। অথচ সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা আছে। তাহলে আর কত ঘৃণা ছড়াবেন? আপনাদের মন পরিশুদ্ধ করা উচিত। সে মন-যেখানে ঘৃণা বাসা বেঁধে আছে।
শহরে ঐতিহাসিক ওই জায়গাটির নাম ‘শনিবারওয়াড়া’ । মারাঠা সাম্রাজ্যের স্থাপনা। পুনে দুর্গ নামেই বেশি পরিচিত। সেখানে নামাজ আদায় করার সমালোচনা করে মহারাষ্ট্র রাজ্যের মন্ত্রী নিতেশ রানে বলেন, শনিবারওয়াড়ার একটি ইতিহাস আছে। এটা সাহসিকতার প্রতীক। শনিবারওয়াড়া হিন্দু সম্প্রদায়ঘনিষ্ঠ। যদি হিন্দুরা ‘হাজি আলী’তে হনুমান চালিসা পাঠ করেন, তবে মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত লাগবে কি না?
আরও পড়ুন<<>>আরও দুই জিম্মির মরদেহ ফেরত দিলো হামাস
তিনি আরও বলেন, মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করুন। যদি ‘হাজি আলী’তে হনুমান চালিসা আর আরতি করা হয়, তাদের আর অপমানবোধ করা উচিত হবে না।
বিজেপি সংসদ সদস্যের এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন বিরোধী নেতারা। অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপির মুখপাত্র রুপালি পাতিল থোম্বরে পুলিশের প্রতি ওই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার আহবান জানিয়েছেন। কারণ তিনি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেয়ার চেষ্টা করছেন। থোম্বরে বলেন, নিতেশ হিন্দু বনাম মুসলমান ইস্যু তুলছেন। অথচ পুনেতে দুই সম্প্রদায় শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করে।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্গে নামাজ পড়ার ঘটনায় ওই নারীদের বিরুদ্ধে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) এক কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা করা হয়েছে। দুর্গে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, শনিবার ওয়াড়ার এএসআই স্মৃতিসৌধের ভেতরে ধর্মীয় প্রার্থনা করা হয়েছিল। এএসআই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করব। আমরা অবশ্যই নিরাপত্তা দেব, নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি থাকবে না। এএসআইয়ের কম্পাউন্ডের ভেতরে ঢুকতে আমরা কাউকে অনুমতি দিইনি। এএসআইয়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা ব্যবস্থা নেব।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।



































