Apan Desh | আপন দেশ

বিশ্বজুড়ে ঝড় তোলা ফরাসি কিংবদন্তি ব্রিজিত বার্দো আর নেই

বিনোদন প্রতিবেদক, আপন দেশ

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৭:৩৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

বিশ্বজুড়ে ঝড় তোলা ফরাসি কিংবদন্তি ব্রিজিত বার্দো আর নেই

ব্রিজিত বার্দো

ফরাসি চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের মহাতারকা ও বিশ্বখ্যাত আবেদনময়ী অভিনেত্রী ব্রিজিত বার্দো মারা গেছেন। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ৯১ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’। একাধারে অভিনেত্রী, গায়িকা ও প্রাণী অধিকারকর্মী হিসেবে তিনি সারাবিশ্বে পরিচিত ছিলেন।

১৯৫৬ সালে ‘অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড ওম্যান’ ছবির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান বার্দো। ছবিটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ছিলেন তার তৎকালীন স্বামী রজার ভাদিম। পরবর্তী দুই দশক ধরে আবেদনময়ী অভিনেত্রী হিসেবে হাজারো তরুণের হৃদয়ে ঝড় তোলেন।

তবে সত্তরের দশকের শুরুতে অভিনয় থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ক্রমে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। প্রাণী অধিকার নিয়ে তার সোচ্চার অবস্থান একপর্যায়ে জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য ও ফ্রান্সের কট্টর ডানপন্থী দল ফ্রন্ট ন্যাশনালের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থনে রূপ নেয়। এর ফলে তাকে একাধিকবার বর্ণবিদ্বেষমূলক বক্তব্যের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

শুরুর গল্প
১৯৩৪ সালে প্যারিসে জন্ম বার্দোর। তিনি বেড়ে ওঠেন সচ্ছল, ঐতিহ্যবাহী ক্যাথলিক পরিবারে। নাচে তার অসাধারণ দক্ষতার কারণে তিনি প্যারিসের মর্যাদাপূর্ণ কনজারভাতোয়ার দ্য প্যারিসে ব্যালে পড়ার সুযোগ পান।

ব্রিজিত বার্দো। এএফপি

একই সময়ে মডেল হিসেবেও কাজ শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে, ১৯৫০ সালে, ফরাসি সাময়িকী এল–এর প্রচ্ছদে জায়গা করে নেন বার্দো। এ মডেলিং কাজের সূত্রেই তার কাছে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে। একটি অডিশনে তার পরিচয় হয় রজার ভাদিমের সঙ্গে; ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর ১৯৫২ সালে তারা বিয়ে করেন।

সিনেমার বার্দো
শুরুর দিকে ছোট চরিত্রে অভিনয় করলেও ধীরে ধীরে গুরুত্ব বাড়তে থাকে তার। ১৯৫৫ সালে যুক্তরাজ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া ছবি ‘ডক্টর অ্যাট সি’–তে ডার্ক বোগার্ডের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি।

তবে বার্দোর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ভাদিম পরিচালিত ‘অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড ওম্যান’। এক অবাধ্য কিশোরীর চরিত্রে অভিনয় করে তিনি হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক তারকা। ছবিটি ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক সাফল্য পায় এবং বার্দোকে ফরাসি চলচ্চিত্রের প্রথম সারির তারকাদের কাতারে তুলে আনে।

প্রেরণার নাম
শুধু সিনেমাপ্রেমী নয়, খুব দ্রুতই তিনি হয়ে ওঠেন চিন্তাবিদ ও শিল্পীদের প্রেরণা। তরুণ জন লেনন ও পল ম্যাককার্টনি তাদের তৎকালীন বান্ধবীদের চুল সোনালি রং করতে বলেছিলেন বার্দোর আদলে। ১৯৫৮ সালে প্যারিস-ম্যাচ সাময়িকীতে কলামিস্ট রেমন্ড কার্টিয়ে লেখেন দীর্ঘ নিবন্ধ—‘লে কা বার্দো’।

১৯৫৯ সালে দার্শনিক সিমোন দ্য বোভোয়ার প্রকাশ করেন তার বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘ব্রিজিত বার্দো অ্যান দ্য ললিতা সিনড্রোম’।  যেখানে বার্দোকে ফ্রান্সের সবচেয়ে মুক্তমনা নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়। ১৯৬৯ সালে ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রতীক মারিয়ানের প্রথম জীবিত মডেল হিসেবে বেছে নেয়া হয় তাকে।

একের পর এক সিনেমা
ষাটের দশকের শুরুতে বার্দো অভিনয় করেন একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ ফরাসি ছবিতে—হেনরি-জর্জ ক্লুজোর অস্কার মনোনীত ছবি ‘দ্য ট্রুথ’, লুই মাল পরিচালিত ‘ভেরি প্রাইভেট অ্যাফেয়ার’ ও জঁ-লুক গোদারের ‘কনটেম্পট’। দশকের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি হলিউডের দিকেও পা বাড়ান। এ সময় তার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘ভিভা মারিয়া!’ ও শন কনারির বিপরীতে ওয়েস্টার্ন ছবি ‘শালাকো’।

ব্রিজিদ বার্দো। এএফপি

গানের বার্দো
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সংগীতজগতেও সক্রিয় ছিলেন বার্দো। তিনি সের্জ গেইনসবুর্গের লেখায় গান রেকর্ড করেন। সে সময় সের্জের সঙ্গে তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক চলছিল। তবে তৎকালীন স্বামী গুন্টার স্যাক্স বিষয়টি জেনে যাওয়ায় কেলেঙ্কারির আশঙ্কায় গানটি প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন বার্দো। পরে গানটি সের্জ জেন বারকিনকে নিয়ে আবার রেকর্ড করেন, যা বিপুল বাণিজ্যিক সাফল্য পায়।

তারকাখ্যাতির চাপ
তারকাখ্যাতির চাপ বার্দোর কাছে ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছিল। ১৯৯৬ সালে গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আমাকে ঘিরে যে উন্মাদনা ছিল, তা সব সময়ই অবাস্তব মনে হতো। তারকা–জীবনের জন্য আমি কখনোই পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম না।

১৯৭৩ সালে, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে, ‘দ্য এডিফাইং অ্যান্ড জয়াস স্টোরি অব কলিনো’ ছবির পর অভিনয় থেকে অবসর নেন তিনি।

ব্রিজিদ বার্দো। এএফপি

প্রাণী সুরক্ষা আন্দোলনে
এরপর তার প্রধান মনোযোগ যায় প্রাণী সুরক্ষা আন্দোলনে। ১৯৭৭ সালে সিল শিকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন এবং ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিজিত বার্দো ফাউন্ডেশন। রোমানিয়ায় কুকুর নিধন, ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জে ডলফিন হত্যা, অস্ট্রেলিয়ায় বিড়াল নিধনের বিরুদ্ধে তিনি বিশ্বনেতাদের কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠান। ধর্মীয় আচার অনুযায়ী পশু জবাই নিয়েও তিনি নিয়মিত বিতর্কিত মন্তব্য করেন।

২০০৩ সালে প্রকাশিত তার বই ‘আ ক্রাই ইন দ্য সাইলেন্স’–এ ডানপন্থী রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নেন বার্দো। সেখানে তিনি সমকামী নারী-পুরুষ, শিক্ষক সমাজ ও তথাকথিত ‘ফরাসি সমাজের ইসলামায়ন’–এর বিরুদ্ধে তীব্র ভাষা ব্যবহার করেন। এর ফলেও তাকে বর্ণবিদ্বেষে উসকানির দায়ে দণ্ডিত হতে হয়।

ব্রিজিদ বার্দো। এএফপি

বার্দো চারবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন—রজার ভাদিমের সঙ্গে (১৯৫২–১৯৫৭), জাক শারিয়েরের সঙ্গে (১৯৫৯–১৯৬২); তাদের একমাত্র সন্তান নিকোলাস জন্ম নেন ১৯৬০ সালে, গুন্টার স্যাক্সের সঙ্গে (১৯৬৬–১৯৬৯) এবং ১৯৯২ সালে সাবেক লে পেন উপদেষ্টা বার্নার দ’ওরমালের সঙ্গে। এ ছাড়া জঁ-লুই ত্রিনতিনিয়াঁ ও সের্জসহ একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়