‘পোশাক পরে নিজেকে যৌনকর্মী মনে হচ্ছিল’

ভারতের হায়দরাবাদে চলছে ৭৪তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা। তবে সাত দশক ধরে চলা প্রতিযোগিতা থেকে প্রথমবার স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালেন কোনো প্রতিযোগী। শুধু সরে দাঁড়ালেনই না, তার আগে বলে গেলেন অনাবৃত পোশক পরে নিজেকে ‘যৌনকর্মী’ বলে মনে হয়েছে তার। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার এ আন্তর্জাতিক আসর থেকে অপমানিত হয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন মিস ইংল্যান্ড বিজয়ী মডেল মিলা ম্যাগি। আয়োজকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে গত ১৬ মে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান ম্যাগি।

এ বছর ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ১০ মে থেকে। চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ৩১ মে। ভারত থেকে এ প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করছেন রাজস্থানের মেয়ে নন্দিনী গুপ্ত। আপাতত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। এর মাঝেই ২৪ বছর বয়সি মিলা ম্যাগির মন্তব্যে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তবে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এর উদ্য়োক্তাদের তরফেও এক হাত নেয়া হয়েছে মিলাকে।

এবারের মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন ‘মিস ইংল্যান্ড’ মিলা ম্যাগি। এ প্রতিযোগিতায় তিনি থাকতে চান না বলে জানিয়েছেন। প্রতিযোগিতা থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়ার কিছু কারণও দিয়েছেন মিলা।

মিলার অভিযোগ, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার বিষয়টি বাইরে থেকে গ্ল্যামারাস মনে হলেও, নেপথ্য লুকিয়ে থাকে শোষণ, গা জোয়ারি। তাকে যে ধরনের পোশাক পরতে দেয়া হয়েছিল, সেটা নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন মিলা। পোশাক নিয়ে মিলার বক্তব্য, সুন্দরী প্রতিযোগিতা মানেই শরীর অনাবৃত পোশাক পরতে হবে, তার কোনো মানে নেই। কিন্তু এখানে এমন কিছু পোশাক পরতে বাধ্য করা হচ্ছে, যেগুলি পরে নিজেকে যৌনকর্মী ছাড়া আর অন্য কিছু বলে মনে হচ্ছিল না।

মিলা পেশায় একজন লাইফগার্ড। সিপিআর দিয়ে জলে ডুবে যাওয়া ব্যক্তির প্রাণ ফেরানোই তার কাজ। প্রথম প্লাস সাইজ় ‘মিস ইংল্যান্ড’ মিলার সৌজন্য়ে প্রতিযোগিতায় ‘বিকিনি রাউন্ড’-এর পরিবর্তে ‘সিপিআর কুইন চ্যালেঞ্জ’ রাখা হয়েছিল। এ হেন প্রতিবাদী মিলা ফের সরব হয়েছেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এর মঞ্চেও। তিনি জানিয়েছেন, দিনে প্রায় বার কয়েক বিভিন্ন পোশাকে সাজানো হচ্ছে প্রতিযোগীদের। প্রতি বারই বদলে যাচ্ছে মেকআপ। আর সাজানো হয়ে গেলে সার দিয়ে বসে থাকা ধনী পুরুষদের সামনে হাঁটানো হচ্ছে।

আরওপড়ুন<<>>ভাঙল ১৭ বছরের সংসার, নতুন প্রেমে অভিনেত্রী!

মিস ইংল্যান্ড বলেন, প্রতিটি টেবিলে কয়েক জন করে পুরুষ বসে থাকছেন। আর তাদেরর কাছে দুজন করে প্রতিযোগীকে পাঠানো হচ্ছে। পুরুষদের মনোরঞ্জনের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার বিজয়ী বাছার জন্য কেন এ রকম ধাপ রাখা হয়েছে। উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, আমি এখানে নিজের প্রতিভা গোটা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরব বলে এসেছি। শরীর দেখিয়ে পুরুষের মন জয় করতে আসিনি।

‘দ্য় সান’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মিস ইংল্যান্ড মিলা জানিয়েছেন, ওই প্রতিযোগিতায় আলাদা কিছু করে দেখানোর জন্য় গত ৭ মে ভারতে যান তিনি। কিন্তু প্রতিযোগিতা চলাকালীন তাদের ‘বাঁদরের মতো’ বসে থাকতে বলা হতো। শুধু দিনের বিভিন্ন সময়েই নয়, ব্রেকফাস্ট টেবিলেও তাদের একইভাবে চওড়া মেক-আপ করানো হতো বলেও জানান মিলা। ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতাকে ‘আউটডেটেড’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। তার সাফ বক্তব্য়, এ প্রতিযোগিতাকে বদলাতে হবে (মিস ওয়ার্ল্ড নিডস টু চেঞ্জ)।

তবে মিস ইংল্যান্ড মিলা ম্যাগির অভিযোগ প্রসঙ্গে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি অন্য প্রতিযোগীরা। মিলার অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়েছেন তেলেঙ্গানার এক উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে মিস ইংল্যান্ডের অভিযোগ ‘একেবারে ভিত্তিহীন’ বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও তেলেঙ্গানা সরকারের মুখ্যসচিব জয়েশ রঞ্জন, মিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন।

মিলার অভিযোগের বিষয়ে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এর সিইও জুলিয়া মর্লি মিলার বলেন, মায়ের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মিলা প্রথম থেকে প্রতিযোগিতা থেকে সরে যেতে চাইছিলেন। আমরা মিলাকে ইংল্যান্ডে যাওয়ার অনুমতিও দিয়েছিলাম। কিন্তু মিলা কেন এমন অভিযোগ করলেন, বুঝতে পারছি না। ভারতে দাঁড়িয়ে এমন অভিযোগ একেবারেই সম্মানহানিকর। তবে মিলার অভিযোগ একেবারেই ভ্রান্ত।

আপন দেশ/এমএইচ